প্রাচীন ও বর্তমান কৃষি সংশ্লিষ্ট ইতিহাসে সমৃদ্ধ বাকৃবির কৃষি জাদুঘর
, ০৫ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৯ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ১২ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পাঁচ মিশালী
প্রাচীন ও বর্তমান কৃষি সংশ্লিষ্ট ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জাতীয় চেতনায় কৃষির ক্রমবিকাশের পরিষ্কার ধারণা দিতেই গড়ে তোলা হয়েছে দেশের প্রথম কৃষি জাদুঘর ময়মনসিংহে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসের বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে সবুজ ছায়াঘেরা দেবদারু গাছের মনোরম পরিবেশে অবস্থিত এ জাদুঘরটি।
বাকৃবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হোসেন স্বপ্ন দেখেন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি কৃষি জাদুঘর গড়ে তোলার। আর এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান জাদুঘরটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম জাদুঘরের উদ্বোধন করেন। পাঁচ একর আয়তনের দৃষ্টি নন্দন এই জাদুঘরে রয়েছে একটি অষ্টাভুজ আকৃতির ভবন।
জানা যায়, প্রাচীন ও বর্তমান কৃষি এবং কৃষি প্রযুক্তি সংরক্ষণ, প্রদর্শন, কৃষি সংশ্লিষ্ট ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে জাতীয় চেতনা ও উপলব্ধিকে জাগ্রত করে কৃষির বিবর্তন এবং ক্রমবিকাশের স্বচ্ছ ধারণা দিতেই গড়ে তোলা হয়েছে দেশের প্রথম কৃষি জাদুঘর।
জাদুঘরে প্রবেশের প্রথমেই চোখে পড়বে বিচিত্র সব মাছের অ্যাকুইরিয়ামসহ প্রাচীন সাতটি খনার বচন। সাথেই রয়েছে দুটি অফিস কক্ষ। আর একটু ভিতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে বৃত্তাকৃতির বাগান যার উপরিভাগ ছাদহীন প্রাকৃতিক আলোয় বিজরিত। তারই চারদিকে সংক্ষরণশালার বিভিন্ন কক্ষ। কক্ষগুলোতে রয়েছে নাম জানা-অজানা উপকরণের সমাহার। এই সব উপকরণের আঞ্চলিক নাম, বৈজ্ঞানিক নাম, সংগ্রহের উৎস, ব্যবহার ইত্যাদি উল্লেখ রয়েছে যা থেকে শিক্ষার্থীরা এবং পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষ জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।
এছাড়া রয়েছে বীজের এক বিশাল সংগ্রহশালা। বিভিন্ন জাতের ধান, গম, ভুট্টা, চীনাবাদাম, কাউনধান, তিসি, ফ্রাঞ্চ বিন সিড, ফাবা বিন সিডসহ নানান ফল ও সবজির বীজ। তাছাড়া রয়েছে বিরল প্রজাতির তৈকর। যা ব্যবহৃত হয় আচার, জেলি তৈরিতে। তরকারি হিসেবেও ব্যবহৃত হয় এই প্রাচীন ফল তৈকর। আরো রয়েছে বহুল পরিচিত ভ্যান্নার বীজ। এর তৈল দিয়ে কসমেটিক তৈরি করা হয়। এর ওষুধি গুণাগুণ রয়েছে অনেক।
বীজ যেহেতু বুনতে হয় মাটিতে সেটা কি আর বলতে হয়? তাইতো রয়েছে বিভিন ধরনের মাটির সেম্পল আর সে বীজে শক্তি যোগান দিতে সাথেই রয়েছে অনেক রকমের সার। আরও চোখে পড়বে পাহাড়ি চাষাবাদের মডেল, বিভিন্ন রোগের চিত্রসহ বর্ণনা, বিভিন্ন মসলার উপকরণ, তেল বীজ, ওষুধি ফল ও পাতা। এই কক্ষের বিশেষ আকর্ষণে রয়েছে আড়াই কেজি ওজনের মিষ্টি আলু। আর এর পাশেই রয়েছে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত ফসলের নমুনা সমগ্র। এই নমুনা বীজগুলোর সিংহভাগই সংগ্রহ করা হয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) থেকে।
এছাড়া প্রদর্শনীতে রয়েছে গ্রাম বাংলার বিয়েতে ব্যবহৃত অতীত ঐতিহ্য সামগ্রী ‘গিলা’। বর্তমান যুগের তরুণ সমাজের অনেকেই দেখলে হয়তো চিনবে না এ গিলা। তবে এ গিলা সেই আদিকাল থেকে এখনো বিয়ের সময় বর কনের হলুদে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে তা নতুন প্রজন্মের অনেকেরই অজানা। এছাড়া রয়েছে যান্ত্রিক কৃষির প্রাচীন সামগ্রী যেমন হরতকি, বিলম্বী যেগুলো নাম শুনেই বর্ণনা পড়তে কেউ ভুলে না।
কক্ষের মাঝে প্রদর্শিত হয়েছে এই ভূখন্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন সময়ের মুদ্রা। মুদ্রাগুলো দেশে বিভিন্ন ঔপনিবেশের একটি ছোট্ট বিবৃতি দেয়।
আরেক কক্ষে স্থান পেয়েছে বহুদিন ধরে বাংলায় গৃহস্থলীর কাজে ব্যবহৃত উপকরণ। তার মধ্যে রয়েছে ঢেকি, কুলা, মুরগির খাঁচা, দাবা, হুক্কা, পানের ডাবর (পান দানি) গরুর গাড়ির মডেল, জিপসী, হরেক রকমের হারিকেন, গাছা, কুপি বাতি, মাছ শিকারের প্রাচীন থেকে শুরু করে আধুনিক যন্ত্রাদি ও বিভিন্ন দেশীয় যন্ত্র।
আরো যা রয়েছে তা হলো প্রযুক্তি বিবর্তনের ধারাবাহিকতার অনন্য প্রদর্শন মাইক্রোকম্পিউটার। চতুর্ভুজাকার কক্ষের পশ্চিম দেয়ালে সজ্জিত বিশাল উড়োজাল যা বাংলার জেলেদের ঐতিহ্যেরও নিদর্শন।
এ কক্ষে আরো দেখা মিলবে কৃষক, গৃহিনীর দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার্য সামগ্রী- তালপাতার পাখা, বাশেঁঁর পাখাসহ ইত্যাদির প্রদর্শনী। এছাড়াও এখানে স্থান পেয়েছে জমি চাষাবাদের যন্ত্রপাতি এবং পূর্বে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক যন্ত্রাদি যেমন দা, কোদাল, তাগল, শাবল, মাইক্রোকম্পিউটার, তীর, ধনুক, ইথিস্কোপ, ডট প্রিন্টার ইত্যাদি যন্ত্রপাতি।
গ্রামবাংলার নারীদের নিপুন দক্ষতার এক শিল্প শৈলীর উদাহরণ শীতল পাটি/ হোগলা পাটি বুনন।
এছাড়া রয়েছে কৃষকের বসতবাড়ির মডেল। কৃষকের হাল চাষের মডেল, কৃষক গৃহিনীর রান্নার সাজসজ্জ্বা। এছাড়া রয়েছে পালকি, মলন/ধান মাড়াই, লাঙ্গল ইত্যাদি।
সর্বশেষ কক্ষে রয়েছে জমি চাষাবাদের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতিস্বরূপ পাওয়ার টিলার, ধান মাড়াইয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি, ঘাণি ইত্যাদি উপকরণ। আরও রয়েছে বাংলার ডিঙি ও কাঁঠের তৈরি নৌকা ও তাল গাছের কুন্দা, গাঁয়ের কাঁচা পথে চলা গরুর গাড়ি। দেয়ালের বিস্তৃত অংশ জুড়ে সাজানো হরিণের চামড়া।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আফ্রিকা ভেঙে সৃষ্টি হচ্ছে এক নতুন মহাসাগর
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মৌমাছির বিষে এক ঘণ্টায় ধ্বংস স্তন ক্যানসার কোষ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১৩ বছরের অপেক্ষার পর দেখা মিললো বিশ্বের সবচেয়ে বিরল ফুলের
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সন্তানের উচ্চতা স্বাভাবিকভাবে বাড়বে যে ৩ ফলের রসে
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শুক্র গ্রহে একদিন পৃথিবীর এক বছরের চেয়েও দীর্ঘ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকলে নিজেকে পরিষ্কার করতে শুরু করে মস্তিষ্ক -গবেষণা
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নাম দিয়েই জমির মালিকানা যাচাই করবেন যেভাবে?
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হারিয়ে যাওয়া সুপারনোভার সন্ধান, পথ দেখালো ইসলামের স্বর্ণযুগের আরবি কবিতা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কোন বাদামের কেমন পুষ্টিগুণ, খাবেনই-বা কতটুকু?
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পৃথিবীতে প্রাণের প্রাচীনতম নিদর্শন আবিষ্কার!
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইসবগুলের ভুসি কতটা কার্যকর?
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহাকাশে এক নীরব সহযাত্রী পেলো পৃথিবী, উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












