ফোন কলের ‘চা বিক্রেতা’ ইমরান
, ০৭ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২২ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৬ অগ্রহায়ণ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পাঁচ মিশালী
বাবা ইউসুফ কাজীর ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় হলেন ইমরান হোসেন। ইউসুফ কাজীর ৭ বিঘা জমি থাকলেও ইমরান শুধু বসবাসের জন্য ৬ শতাংশ জমি পায় পৈতৃক সূত্রে। সেখানে স্ত্রী ইয়াসমিন খাতুন ও তিন সন্তানকে নিয়ে একটি টিনের ঘরে বাস করেন ইমরান। বড় ছেলে আরাফাত হোসেন (১০), মেয়ে জামেলা (৫) ও ছোট মেয়ে লিতুনজিরা (৩) স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। কোনো প্রকার সরকারি সহায়তা ছাড়াই ইমরান হোসেন সন্তানদের লেখাপড়াসহ পরিবারের যাবতীয় খরচ মেটায় এই চা বিক্রির অর্থ দিয়ে।
চা বিক্রেতা ইমরান বলেন, বিয়ের পরপরই বাবা ইউসুফ কাজী পরিবার থেকে আলাদা করে দেন ইমরানকে। এরপর ধলগ্রাম রাস্তার মোড়ে নূর ইসলামের চায়ের দোকানে দৈনিক ৩২০টাকা হাজিরা ভিত্তিতে শ্রমিক হিসাবে কাজ নেন তিনি। ভালোই চলছিলো ইমরানের সংসার। এরপর আসে করোনা। স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো বিশ্ব। জনশূণ্য হয়ে যায় স্থানীয় হাট বাজার।
এর প্রভাব পড়ে নূর ইসলামের চায়ের দোকানেও। একদিন মাইকিং করে চায়ের দোকান বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। ইমরান হোসেন বেকার হয়ে যান। সংসার আর চলে না। এই চরম মুহূর্তে স্থানীয় মুরুব্বীদের পরামর্শে ভ্রাম্যমান চা বিক্রেতা হয়ে যান ইমরান। এজন্য স্ত্রী ইয়াসমিনের পোষা ছাগলটি ৮হাজার ৮শ’ টাকায় বিক্রি করে একটি ফ্লাস্ক (চা গরম রাখার প্রাত্র), একটি বৈদ্যুতিক কেতলি (পানি গরম করার যন্ত্র), চা, চিনি, বিস্কুট, কেক, পানির বোতল ও ওয়ান টাইম চায়ের কাপ কিনে শুরু করেন চা বিক্রি।
প্রথম দিকে চা নিয়ে ধলগ্রাম রাস্তার মোড়ের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করতেন। আস্তে আস্তে পরিচিতি বাড়লে মোবাইল ফোনে কল করতেন চা ক্রেতারা। সে সময় ফোন রিসিভ করে স্থান চিহ্নিত করলেও এখন আর ফোন রিসিভ করেন না ইমরান। কল আসলেই বুঝতে পারেন কে ফোন করেছেন। ফোন কলটি কেটে দিয়ে ছুটে যান সেখানে।
এভাবে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২ শ’ কাপ চা ৫ টাকায় বিক্রি করেন। সাথে কেক বিস্কুটও বিক্রি করে থাকেন। এর থেকে প্রতিদিন আয় করেন ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে এক হাজার থেকে ১৫শ টাকা লাভ থাকে ইমরানের।
বাজার থেকে মাত্র ১০০ মিটার উত্তর পাশেই তার বাড়ি। বাড়িতেই চলে পানি গরমের কাজ। চায়ের ফ্লাস্ক শেষ হলে বাড়িতে চলে যান ইমরান। ফ্লাস্কে গরম চা ভরে নিয়ে আবার চলে আসেন বাজারে। ৬০ থেকে ৬৫ কাপ চা থাকে ফ্লাস্কে। ভোর ছয়টা থেকে রাত ১০টা বা সাড়ে দশটা পর্যন্ত চলে তার চা বিক্রি। এখন ইমরানের ৫টি ফ্লাস্ক, ১টি গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার, দুটি বৈদ্যুতিক কেতলি আছে।
ইমরান বলেন, প্রতিদিনের আয় দিয়ে সংসারের খরচ মেটাচ্ছেন তিনি। ভবিষ্যতে যদি কোনো অনুদান পান তা দিয়ে বড় একটি স্থায়ী দোকান করতে চান তিনি। সেখানে বেকারি পণ্য থেকে শুরু করে চা কফিও বিক্রি করবেন। এরপর আস্তে আস্তে জমি ও বাড়ি বানাবেন। এভাবেই স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা ইমরান হোসেন।
জানা গেছে, যশোর নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়কের ধলগ্রাম রাস্তার মোড়ের এই বাজারে চা, মিষ্টি, মুদি, মেশিনারিজ ওয়ার্কশপসহ ২৬০ টি দোকান আছে। মূলত এসব দোকানেই ইমরান গরম চা সরবরাহ করে থাকেন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
যে ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ে উল্টো দিকে
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দুধে পানি নাকি রাসায়নিক মেশানো বুঝার কিছু পদ্ধতি
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মৃত গাছগুলো এভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেন?
২৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
রেলের কয়লা ইঞ্জিন এখন ইতিহাস।
২৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছাগল: ব্ল্যাক বেঙ্গল যেসব কারণে অনন্য
১৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সেলেনিয়াম আমাদের কেন প্রয়োজন জানেন?
১৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পানির নিচে হাজারো পাহাড়!
১৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রহস্যময় উট, খায় জীবন্ত বিষধর সাপ! কেন জানেন?
১৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
গাবতলীতে এবারে কুরবানীর হাটে উটের দাম যা ছিল
১৪ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উট মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতময় সৃষ্টি: উট সম্পর্কে বিস্ময়কর তথ্য
১৪ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
লজ্জাবতী গাছ ও আশ্চর্যজনক কলস উদ্ভিদ, যা গোশত খেকো!
১০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বড় আকারের টর্নেডো ঝড়ের কবলে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস।
১০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)