বিবিসি:
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে কেমন ছিল ভারতের প্রতিক্রিয়া
, ২৮ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৭ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ০১ ভাদ্র শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) দেশের খবর
ঠিক ৪৭ বছর আগে আগস্টের বৃষ্টিভেজা সকালে ঢাকা থেকে সংবাদটা এসেছিল বজ্রপাতের মতো। ভারতে সবেমাত্র ঘোষিত হওয়া জরুরি অবস্থাকে ঘিরে দেশের পরিস্থিতি এমনিতেই টালমাটাল, তখনই খবর এল বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় নিজের বাসভবনেই আততায়ীদের হাতে সপরিবারে নিহত হয়েছেন।
ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সেদিন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদের দেয়া রিসেপশনে যোগ দিতে দেশের কয়েকশো নেতা-মন্ত্রী ও সাংসদ তখন রাষ্ট্রপতি ভবনেই। কর্নাটকের কংগ্রেস নেত্রী মার্গারেট আলভা তখন রাজ্যসভার এমপি, ওর,ই দিনের তরুণী সেই রাজনীতিকও ছিলো সেই দলে।
'রাষ্ট্রপতি ভবনে বসেই আমরা খবরটা পেলাম। মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে, সে খবর ততক্ষণে দাবানলের মতো দিল্লি জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, কিন্তু লোকে যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না।'
'আমার খুব ভাল মনে আছে রাষ্ট্রপতি ভবনের ভেতর তখনই বলাবলি শুরু হল ঠিকমতো পদক্ষেপ না নিলে ভারতেও কিন্তু যে কোনো দিন একই জিনিস ঘটতে পারে। বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, ওটাই ছিল আমাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া,' এত বছর বাদে ওই দিনের স্মৃতিচারণ করতে বসে বলছিলো মিস আলভা।
একাত্তরের যুদ্ধজয়ের স্মৃতি তখনো ম্লান হয়নি মার্গারেট আলভার কথায় 'শেখ সাহেব তখনো উপমহাদেশের গগনস্পর্শী নায়কদের একজন'। কিন্তু তার যে এ ধরনের পরিণতি হতে পারে, সেটা ভারত একেবারেই ভাবতে পারেনি বলে জানাচ্ছে তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরার ঘনিষ্ঠ এই রাজনীতিক।
বিনা মেঘে বজ্রপাত, না কি আশঙ্কা ছিলই?
কিন্তু শেখ মুজিবের প্রাণনাশের চেষ্টা হতে পারে, ভারত কি তার একেবারেই কোনো আঁচ পায়নি? মানে এই খবরটা কি দিল্লির কাছে পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত ছিল বলা যায়?
'না, একেবারেই আন্দাজ করা যায়নি সেটা বলা যাবে না। খবরও ছিল যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটা অংশ মুজিবের বিরুদ্ধে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে,' বলছে দিল্লিতে ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের কর্ণধার ও স্ট্র্যাটেজিক বিশ্লেষক, মেজর জেনারেল (অব) দীপঙ্কর ব্যানার্জি।
সে বলেছে, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং ('র')-এর প্রধান আর এন কাও ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় গিয়ে খোদ মুজিবকে বলেও ছিলেন যে তার জীবনের ওপর হামলা হতে পারে।
সে জানায়, 'কিন্তু মুজিব তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে বলে ওঠেন, ওসব হতেই পারে না। গোটা বাংলাদেশ আমাকে ভালবাসে, ওরা সবাই আমার ছেলেমেয়ের মতো কে আমাকে মারতে যাবে? আপনার এসব জল্পনায় কান দেয়ার কোনো দরকার নেই।'
বস্তুত শেখ মুজিব চেয়েছিলো বলেই ভারত তার বিরোধী শিবিরের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চালানো বন্ধ করে দিয়েছিল বলে জানাচ্ছে এই বিশ্লেষক।
কিন্তু ঢাকায় তো এমন ধারণাও কারো কারো আছে যে শেখ মুজিবের করুণ মৃত্যুতে দিল্লি হয়তো তেমন একটা অখুশি হয়নি?
বস্তুত মুজিবের হত্যার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই যেভাবে ভারত খন্দকার মোশতাক আহমেদের নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল, তাতেও অনেকের মধ্যে এই সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে।
কিন্তু মুজিবের মৃত্যুর মাত্র মাসকয়েক আগেও ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করে আসা সাবেক রাষ্ট্রদূত অরুণ কুমার ব্যানার্জি এটাকে 'সম্পূর্ণ বাজে কথা' বলে অভিহিত করে।
ব্যানার্জি বলে, 'আমি বলব ভারতের একমাত্র রিঅ্যাকশন ছিল শিয়ার হরর অ্যান্ড শক। কীভাবে এমন মারাত্মক ঘটনা ঘটে গেল, সেটাই দিল্লি ভেবে কূল করতে পারছিল না।'
'আসলে শেখ সাহেব নিজে যা-ই বলুন, আমরাই তো তার দেখাশুনো করব বলে কথা দিয়েছিলাম। ফলে ইনটেলিজেন্স গ্যাদারিং বা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে কোথাও তো একটা খামতি ছিলই।
সে বলেছে, 'যদিও এটা মূলত বাংলাদেশেরই কাজ আমাদের গোয়েন্দা অ্যাপারেটাসেও কেউ কোথাও একটা ভুলচুক করে ফেলেছিল সেটা তো অস্বীকার করতে পারি না।'
দীপঙ্কর ব্যানার্জি আবার বলছিলো, 'ভারতের কাছে মুজিবের ইমেজটা ছিল একটা স্বাধীন দেশের ফাউন্ডার লিবারেটরের। দেশটা জন্মানোর চার বছরেরও কম সময়ের মধ্যে আর্মির একটা অংশ তাকে নির্মমভাবে নিকেশ করে দিতে পারে ভারত তাতে সত্যিই প্রচ- অবাক হয়েছিল।'
কতটা ফাটল ধরেছিল ইন্দিরা-মুজিব সম্পর্কে?
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা নিজেও যে এই ঘটনায় খুব বিচলিত হয়ে পড়েছিলো এমনো তো বিশেষ প্রমাণ নেই?
ব্যানার্জি বলে, 'না, দেখুন তখনকার সময়টার কথাও আপনাকে ভাবতে হবে।'
মিসেস গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা চালু করেছেন মাস দেড়েক আগে। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তখন একটা অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। দীপঙ্কর ব্যানার্জির মতে, মিসেস গান্ধী তখন হাজারটা সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলো।
'সত্যি বলতে কী, তখন বাংলাদেশের দিকে বা বাইরের দুনিয়ার দিকে তার তেমন নজর দেয়া সম্ভবও ছিল না', মনে করে দীপঙ্কর ব্যানার্জি।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বাধ্যবাধকতা নিশ্চয় ছিল, কিন্তু শেখ মুজিবের হত্যার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ইন্দিরা গান্ধী ও তার সম্পর্কে যে অস্বস্তির ছায়া পড়তে শুরু করেছিল, সেটাও কিন্তু ঐতিহাসিক সত্যি।
ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্রসচিব মুচকুন্দ দুবে মুজিব হত্যার ঠিক চার বছরের মাথায় ভারতীয় হাই কমিশনারের দায়িত্ব নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলো। কোনো রাখঢাক না করেই সে যেমন বলছে, 'আসলে কী, শেখ মুজিবের কিছু কিছু পদক্ষেপে দিল্লির কপালে যে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল সেটা কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না।'
'যেমন ধরুন, তার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বা বাকশাল চালু করার উদ্যোগ। ভারত মনে করেছিল সেটা গণতন্ত্রের রাস্তা থেকে বিচ্যুতি বা অ্যাবারেশন। তার প্রশাসনে যে বেশ কিছু আরবিট্রারিনেস বা স্বেচ্ছাচার শেকড় বিছিয়েছিল, সেটা নিয়েও আমরা চিন্তিত ছিলাম।'
দুবে বলে, 'কিন্তু এই উদ্বেগ কখনোই এমন পর্যায়ে পৌঁছয়নি যে শেখ মুজিবকে হত্যা করা হলে ভারতে খুশির লহর বয়ে যাবে। বড়জোর একটা অসন্তুষ্টি ছিল বলা যেতে পারে, এবং হয়তো এই ফিলিংসটাও ছিল মুজিবের ওই রকম কোনো পরিণতি অনিবার্য!'
ঢাকায় তখনকার ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেনও অবসর নেয়ার পর ১৯৯৮ সালে ফ্রন্টলাইন ম্যাগাজিনে লিখেছিলো, 'আরো নানা কারণের সাথে যখন দেখা গেল চুয়াত্তরের অগাস্ট মাসে জুলফিকার আলি ভুট্টো বাংলাদেশ সফরে এলো, তখন শত্রুতা না হোক ভারতের দিক থেকে একটা হতাশা অবশ্যই তৈরি হয়েছিল।'
আজীবন কংগ্রেসী রাজনীতি করা মার্গারেট আলভার বর্ণনায়, 'হ্যাঁ, ততদিনে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে বেশ কয়েকটা ইস্যু তৈরি হয়ে গিয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। যেমন, ফারাক্কা ব্যারাজ তৈরি করা কিংবা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছিলেন, তাদের অনেকের ভারতে থেকে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘাত অবশ্যই ছিল।'
'কিন্তু আমি বিশ্বাস করি দুটি দেশের মধ্যে যে পারস্পরিক আস্থা আর মর্যাদার সম্পর্ক ছিল, সেটাকে কোনো কিছুই ছাপিয়ে যেতে পারেনি। মুজিবের মৃত্যুর পর সে দেশের ইতিহাস অন্য মোড় নিল, দেশটাকে 'মুসলিম বাংলাদেশ' বানানোর চেষ্টা শুরু হল সেটা অবশ্য অন্য প্রসঙ্গ!'
মেজর জেনারেল (অব) দীপঙ্কর ব্যানার্জিও মনে করে, 'একাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশ খুব কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে পার হয়েছে সবাই জানে। দুর্ভিক্ষ-অনশন-সাইক্লোনের বহু ঝড়ঝাপটা গেছে। যুদ্ধের পর ভারতেরও তেমন সামর্থ্য ছিল না যে তাদের সব চাহিদা পূরণ করতে পারবে।'
'ভারতীয় গণতন্ত্রেও হয়তো বাংলাদেশকে নিয়ে নানা ধরনের মতামত ছিল সেটাই তো গণতন্ত্রের বেশিষ্ট্য। কিন্তু তাই বলে শেখ সাহেবের জন্য গুডউইল বা শ্রদ্ধায় কিন্তু কখনোই কোনো ভাটা পড়েনি। তার অনিষ্ট হোক এটা ভারত কখনো চায়নি, চাইতে পারেই না', রীতিমতো জোর দিয়ে বলে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। (বিবিসি থেকে সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা কারাগারে
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
‘সিনিয়র-জুনিয়র’ দ্বন্দ্বে আহত পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু!
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নীলফামারীতে জেঁকে বসেছে শীত
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বেনজীরের ৪টি ফ্ল্যাটের সম্পদ প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে হস্তান্তর
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নিবন্ধন পেল তারেকের আমজনতার দল
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধ, মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
‘দেশে ফিরে শনিবার ভোটার হবেন তারেক রহমান’
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
‘শুধু সচেতন হলে চলবে না, অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে’
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
রাকসুর জিএসের আচরণ ‘সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে শামিল’
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
‘আর ১৫ মিনিট আগুন জ্বললেই অনেকে মারা যেতো’
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
‘ভোট যত কাছে আসবে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো উন্নতি ঘটবে’
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
‘দুষ্কৃতিকারীরা দেশে রক্তপাত করছে কিন্তু ধরা পড়ছে না কেন’
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












