বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের স্বরূপ সন্ধান
, ১১ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৮ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ৩১ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পাঁচ মিশালী

ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজি কর্তৃক ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে নদীয়া বিজয় ও লাখনাবতীতে রাজধানী স্থাপনের মাধ্যমে বাংলা বিজয়ের প্রারম্ভ হয়েছিল। মুহম্মদ বখতিয়ার খলজির দ্বিতীয় রাজধানী ছিল দিনাজপুরের দেউকোটে। তিব্বত অভিযান থেকে ফেরার পথে তিনি দেউকোটে অবস্থান করেছিলেন এবং এখানেই তিনি ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। সমগ্র বরিনদ বা বরেন্দ্র অঞ্চলের ওপর মোটামুটি তার শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বখতিয়ার খলজির লাখনাবতী বিজয়ের আগে বাংলার বিভিন্ন অংশের পাঁচটি নাম প্রচলিত ছিল, যথা-রাঢ়, বরেন্দ্র বা বরিনদ, বাগড়ী, বঙ্গ ও মিথিলা। বর্তমান বিহারের একটি অংশ মিথিলা তখন বাংলার অঙ্গীভূত ছিল। মিথিলা বা উত্তর বিহারের সঙ্গে বরেন্দ্রের বা উত্তর বাংলার এক নিবিড় যোগসূত্র বিদ্যমান ছিল। মুসলমান শাসনের প্রাথমিক পর্যায়েও বঙ্গ বলতে বর্তমানের পূর্ব বাংলা ধরা হতো। মিনহাজের বর্ণনা থেকে জানা যায়, লাখনাবতী রাজ্যের দুটি প্রধান অংশ ছিল। একটির নাম ‘বরিনদ’ ও অন্যটির নাম ‘রাল বা রাঢ়’। গঙ্গার পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশ রাঢ় নামে এবং ওই স্রোতধারার পূর্ব ও উত্তর অংশ বরিনদ বা বরেন্দ্র নামে অভিহিত হতো। করতোয়া নদীকে বরেন্দ্রের পূর্ব সীমা ধরা হতো। এটির পূর্বের সংলগ্ন ভূমি কামরূপ রাজ্য নামে পরিচিত ছিল। আমরা তাহলে নিশ্চিত করে এটি বলতে পারি যে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল তখন বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। ক্রমে ক্রমে মুসলমান শাসন প্রসারিত হয়েছিল। এ পর্যায়ে এটির তিনটি প্রশাসনিক ইউনিট সৃষ্টি হয়। এদের নাম যথাক্রমে লাখনাবতী, সাতগাঁ ও সোনারগাঁ। উত্তর বাংলার প্রশাসনিক কেন্দ্র লাখনাবতী, দক্ষিণ ও পশ্চিম বাংলার সাতগাঁ এবং পূর্ব বাংলার সোনারগাঁ মুসলিম ইতিহাস ও মুদ্রায় স্থান পেয়েছে। শামস উদ্দীন ইলিয়াস বা হাজি ইলিয়াস ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দে এসব অঞ্চলকে একত্র করে বাঙ্গালা বা বাংলা নামে অভিহিত করেন। তখন থেকেই বিভিন্ন অঞ্চলের স্বাতন্ত্র্য থাকা সত্ত্বেও বাংলা একটি বিরাট ভূখ-কেই বোঝায়।
বাংলার মুসলিম স্থাপত্যকে আমরা দুটি প্রধান বিভাগে ভাগ করতে পারি, যথা-সুলতানি স্থাপত্য ও মোগল স্থাপত্য। লাখনাবতী রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হতে (১২০৪ খ্রিস্টাব্দ) শুরু করে ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নির্মিত মসজিদ ও অন্যান্য ইমারতকে আমরা সুলতানি স্থাপত্য এবং ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত ইমারতকে মোগল স্থাপত্যের আওতাভুক্ত করতে পারি। সুলতানি ও মোগল স্থাপত্যের উপাদান ও উপকরণ এই দেশীয় মৃত্তিকা নির্মিত ইট। পুরোপুরি পাথরের নির্মিত ইমারত পরিদৃষ্ট হয় না। তবে সুলতানি আমলের স্থাপত্যে ইট নির্মিত ইমারত গাত্রে কালোবর্ণ প্রস্তরের প্রশস্ত বর্গাকৃতি খ- বাইরের আবরণ হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে। সম্ভবত এই প্রক্রিয়ার ফলে ইমারতের প্রাচীর কাঠামো সুদৃঢ় হয়েছে এবং এটি স্থায়িত্ব আপেক্ষিকভাবে বর্ধিত হয়েছে। এরূপ নির্মাণ পদ্ধতিকে ‘নৎরপশ-ংঃড়হব ংঃুষব’ বা ইট-পাথর স্থাপত্য কৌশল হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সুলতানি আমলের স্থাপত্যে এবং বিশেষভাবে মসজিদ স্থাপত্যে কোণে ব্যবহৃত অষ্টকোণ টাওয়ারগুলোর উচ্চতা ছাদের উচ্চতার উপরে বর্ধিত হয় না। কিন্তু মোগল স্থাপত্যের কোনায় ছত্রী ব্যবহার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ছত্রীর পরিবর্তে টাওয়ার ব্যবহৃত হলেও সেগুলোর উচ্চতা ছাদের কিনারা হতে ঊর্ধ্বে ওঠে এবং সেগুলোর শিরোভাগ ফুলকুঁড়ির মতো আবৃত মনে হয়। বাংলার প্রচলিত বাঁশের বেড়ার ঘরের পরিকল্পনা হতে সম্ভবত ধনুকবক্র ছাদের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। সুলতানি স্থাপত্যে ধনুকবক্র ছাদ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হয়। ছাদ কিনারা সরল রেখার মতো না হয়ে বক্র রেখার ন্যায় প্রতীয়মান হয়। জালাল উদ্দীন মুহাম্মদ শাহের একলাখী সমাধি ইমারত বাংলার জাতীয় স্থাপত্যের নমুনা পেশ করে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঘোড়ায় টানা ট্রেন ও তার ১১৮ বছরের ইতিহাস
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পানি খেতে গিয়ে এই ভুলগুলো করছেন না তো?
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাড়িতে যে গাছ লাগালেই মিলবে প্রাকৃতিক এয়ার কন্ডিশনার!
১৫ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আম খাওয়ার পরে পাঁচ খাবার বিষের সমান, পেটের দফারফা
১৫ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ভয়েস ক্লোনিং প্রতারণা থেকে মুক্ত থাকবেন যেভাবে
১৫ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ভাতের মাড়ে রয়েছে উচ্চ মানের সব পুষ্টি উপাদান!
১৫ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দাঁড়িয়ে পানি পানের পরিণতি কি?
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বঙ্গোপসাগর সম্পর্কে জানুন
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
গোশত খাওয়ার পর হজম প্রক্রিয়া সহজ করতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে যে শরবত খাবেন
১৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
গরুর গোশতের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
১৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মঙ্গল গ্রহে বিশ্বের উচ্চতম আগ্নেয়গিরির চেয়েও উঁচু আগ্নেয়গিরির সন্ধান পেলো নাসা
১২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল থেকে উঠে আসছে সোনা
১২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)