বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৩)
, ০৭ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২০ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৫ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আইন ও জিহাদ
![বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৩)](https://www.al-ihsan.net/uploads/1708198767_ জিহাদ.jpg)
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
هُوَ الَّذِي أَخْرَجَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ مِن دِيَارِهِمْ لِأَوَّلِ الْحَشْرِ ۚ مَا ظَنَنتُمْ أَن يَخْرُجُوا ۖ وَظَنُّوا أَنَّهُم مَّانِعَتُهُمْ حُصُونُهُم مِّنَ اللَّـهِ فَأَتَاهُمُ اللهُ مِنْ حَيْثُ لَمْ يَحْتَسِبُوا ۖ وَقَذَفَ فِي قُلُوبِهِمُ الرُّعْبَ ۚ يُخْرِبُونَ بُيُوتَهُم بِأَيْدِيهِمْ وَأَيْدِي الْمُؤْمِنِينَ فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الْأَبْصَارِ. وَلَوْلَا أَن كَتَبَ اللهُ عَلَيْهِمُ الْجَلَاءَ لَعَذَّبَهُمْ فِي الدُّنْيَا ۖ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابُ النَّارِ .ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ شَاقُّوا اللهَ وَرَسُولَهُ ۖ وَمَن يُشَاقِّ اللَّـهَ فَإِنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ. مَا قَطَعْتُم مِّن لِّينَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوهَا قَائِمَةً عَلَىٰ أُصُولِهَا فَبِإِذْنِ اللهِ وَلِيُخْزِيَ الْفَاسِقِينَ.
অর্থ: তিনিই সেই খ¦লিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক যিনি কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফির তাদেরকে প্রথমবার সমবেতভাবে তাদের আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। আপনারা কল্পনাও করেননি যে, তারা নির্বাসিত হবে এবং তারা মনে করেছিল তাদের দুর্গগুলি তাদেরকে রক্ষা করবে, মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে; কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার আযাব এমন একদিক থেকে আসলো, যা ছিল তাদের ধারণাতীত এবং যা তাদের অন্তরে ত্রাসের সঞ্চার করলো। তারা ধ্বংস করে ফেলল বাড়ী-ঘর নিজেদের হাতে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের হাতেও; অতএব হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ! আপনারা নছীহত গ্রহণ করুন। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে নির্বাসন না করে তাদেরকে পৃথিবীর যমীনে অন্য শাস্তি দিতেন; পরকালে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। ইহা এইজন্য যে, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করেছিল। এবং কেউ মহান আল্লাহ পাক উনার বিরুদ্ধাচরণ করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে কঠিন শাস্তি দিবেন। ইহা এই জন্য যে, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধাচরণ করেছিল এবং কেউ মহান আল্লাহ পাক উনার বিরুদ্ধাচরণ করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি শাস্তিদানে কঠোর। আপনারা যে খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলেছেন এবং যেগুলো কান্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছেন তাতো মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত অনুমতিক্রমে। তা এই জন্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি পাপাচারীদেরকে লাঞ্ছিত করবেন। (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ: ২-৫)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফির তাদেরকে প্রথমবার সমবেতভাবে তাদের আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত করেছেন। এখানে কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফির তারা হচ্ছে, পবিত্র মদীনা শরীফের বানী নাযীর সম্প্রদায়। তারা ছিলো সাইয়্যিদুনা হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনার বংশধর।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
كَانَ إِجْلَاءُ بَنِي النَّضِيرِ بَعْدَ مَرْجِعِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أُحُدٍ وَفَتْحَ قُرَيْظَةَ عِنْدَ مَرْجِعِهِ مِنَ الْأَحْزَابِ وَبَيْنَهُمَا سَنَتَانِ
অর্থ: বানী নাযীরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত উহুদ জিহাদ থেকে ফিরার পর। আর বানী কুরাইজার নিধনপর্ব সংঘটিত হয়েছিল, সম্মানিত আহযাব জিহাদের শেষে। আর উভয় সম্মানিত জিহাদের মাঝে ব্যবধান ছিলো দু’ বছর। (তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে বাগবী)
উল্লেখ্য যে, বানী নাযীরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল সন্ধিচুক্তি লংঘনের কারণে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক করে যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন তখন ইহুদীরা সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ হয়। সন্ধিচুক্তির মধ্যে শর্ত ছিলো, প্রত্যেকেই স্বীয় দ্বীন-ধর্ম পালন করবেন, কেউ কারো বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত হবেন না। কেউ কারো বিপক্ষে শত্রুকে সাহায্য করতে পারবেন না। দেখা গেলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সম্মানিত বদর জিহাদে ৩১৩ জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করলেন এবং মক্কার কাফির মুশরিকদেরকে কঠিনভাবে পরাজিত ও লাঞ্ছিত করলেন তখন এই ইহুদীরা বলাবলি শুরু করলো-
وَاللهِ إِنَّهُ حَضْرَتْ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّذِي وَجَدْنَا نَعْتَهُ فِي التَّوْرَاةِ لَا تُرَدُّ لَهُ رَايَةٌ،
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই মহাসম্মানিত নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর উনার কথাই আমরা পাঠ করে থাকি পবিত্র তাওরাত শরীফে। উনার সুমহান পতাকা মুবারক কখনো অবনমিত হবে না।’ সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে বাগবী, তাফসীরে মাযহাবী, তাফসীরুল মুনীর, তারিখুল খ¦মিস) (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির অপকর্মসমূহ (১)
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুতার জিহাদ এবং মুসলমানদের বেমেছাল বীরত্ব (৮)
১৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১৯)
১৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১৩ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
০৯ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত সাবীক জিহাদ
০৮ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুতার জিহাদ এবং মুসলমানদের বেমেছাল বীরত্ব (৭)
০৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহাসম্মানিত ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার জিহাদ (১৭)
০৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুতার জিহাদ এবং মুসলমানদের বেমেছাল বীরত্ব (৬)
৩০ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বানূ নাযীরের জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা (১৮)
২৫ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মুতার জিহাদ এবং মুসলমানদের বেমেছাল বীরত্ব (৫)
২৩ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১৭)
১১ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)