বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৪)
, ১৪ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৭ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১২ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আইন ও জিহাদ
অতঃপর সম্মানিত উহুদ জিহাদে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বেমেছালভাবে বিজয় লাভ করলেন আর কাফির মুশরিকরা চরমভাবে লাঞ্ছিত হয়ে জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে গেল। বিপরীতে মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল ও তার অনুসারীদের এলোমেলো কথাবার্তায় ইহুদীদের অবস্থা পাল্টিয়ে গেল। ইহুদীরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়ার লক্ষ্যে মুনাফিকদের সাথে মিলিত হলো এবং তারা প্রকাশ্যে শত্রুতা শুরু করলো। নাউযুবিল্লাহ! মূলত এই ইহুদীরাই সর্বপ্রথম ভঙ্গ করেছিল সন্ধিচুক্তি। কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ চল্লিশ জন ইহুদীকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল পবিত্র মক্কা শরীফে। সেখানে তারা মিলিত হয়েছিল কুরাইশ কাফির মুশরিকদের সাথে। নাউযুবিল্লাহ! এরপর কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ সে সেখানে ষড়যন্ত্রমূলক পরামর্শ করে ইহুদীদেরকে নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে আসে। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে অবমাননামূলক কথা-বার্তা, গালি-গালাজ ইত্যাদিতে ছিল অগ্রগামী। নাউযুবিল্লাহ! পরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নির্দেশক্রমে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফকে হত্যা করেন। (ইতিপূর্বে আমরা কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের হত্যা সম্পর্কে আলোচনা করেছি)।
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, ইহুদীরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে প্রস্তাব পাঠালো যে, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার ৩০ জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে আপনাদের ও আমাদের এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে আসুন। আমরাও উপস্থিত হবো আমাদের ত্রিশ জন লোক নিয়ে। আমাদের ধর্মবিদরা আপনার কথা শুনবে। যদি তারা আপনাকে সত্য নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে মেনে নেয়, তবে আমরাও আপনার উপর ঈমান আনবো।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন। নির্ধারিত দিনে ত্রিশজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যথাস্থানে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। তারা এলো তাদের ত্রিশজনকে নিয়ে। কাছাকাছি হওয়ার আগে তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে তোমরা পৌঁছবে কিভাবে? কারণ উনার সঙ্গে রয়েছেন ত্রিশজন জান-মাল কুরবানকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। সুবহানাল্লাহ! এরপর তারা কাছে এসে বলল, এখানে আমরা ষাটজন উপস্থিত। এতো লোকের সামনে কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সম্ভব? আপনি বরং তিনজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে আসুন। আমরাও আসবো আমাদের তিনজন ধর্মবিদকে নিয়ে। যদি তারা আপনাদের সম্মানিত দ্বীন ইসলামের প্রতি ঈমান আনেন তাহলে আমরা সকলেই আপনার প্রতি ঈমান আনবো। এ ছিল প্রকাশ্য কথাবার্তা, কিন্তু তাদের ভিতরগত বক্তব্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের সেই তিন ধর্মবিদকে ইহুদীরা বলেছিল, তোমরা কাপড়ের আড়ালে তীক্ষè ধারালো ছুরি নিয়ে যাবে। যখনই সুযোগ পাবে ছুরি চালিয়ে উনাদেরকে দফারফা করবে। নাউযুবিল্লাহ! তাদের এই অতর্কিত আক্রমণ করা এবং বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ সংবাদ পেয়ে সামনে অগ্রসর না হয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে এলেন। অপর দিকে বানী নাযীর গোত্রের একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইতোপূর্বে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। উনার বোন উনাকে ইহুদীদের গোপন ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ! এভাবে বিভিন্ন ঘটনা ও আচরণের প্রেক্ষিতে ইহুদীদের প্রতি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসন্তুষ্ট মুবারক প্রকাশ করলেন এবং পরবর্তীতে বানী নাযীরকে দেশ থেকে বহিষ্কারও করে দিলেন। (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির অপকর্মসমূহ (১)
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুতার জিহাদ এবং মুসলমানদের বেমেছাল বীরত্ব (৮)
১৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১৯)
১৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১৩ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
০৯ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত সাবীক জিহাদ
০৮ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুতার জিহাদ এবং মুসলমানদের বেমেছাল বীরত্ব (৭)
০৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহাসম্মানিত ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার জিহাদ (১৭)
০৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুতার জিহাদ এবং মুসলমানদের বেমেছাল বীরত্ব (৬)
৩০ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বানূ নাযীরের জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা (১৮)
২৫ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মুতার জিহাদ এবং মুসলমানদের বেমেছাল বীরত্ব (৫)
২৩ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১৭)
১১ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)