বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১০)
, ১৮ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৯ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১৫ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আইন ও জিহাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন যেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনাদের অভিযান চালিয়ে যান।
ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবূ আমির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতানুসারে ইহুদীদের উপর অবরোধ অভিযান চলেছিলো ০৬ দিন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এই অবরোধ ছিলো ২৫ দিন পর্যন্ত। সুবহানাল্লাহ! এর আগে তারা নিজেরাই তাদের জনপদের কাছাকাছি ঘর-বাড়িগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছিলো। আর তাদের যে সকল বাড়ি-ঘর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের জনপদের কাছাকাছি ছিলো, সেগুলো উনারা জ্বালিয়ে দিয়েছেন।
স্মরণীয় যে, ইহুদীদের সর্বদাই মিথ্যা, মনগড়া ও বানোয়াটিমূলক কথা বলাই হচ্ছে তাদের মজ্জাগত অভ্যাস। নাউযুবিল্লাহ! অবশেষে তারা নত হলো। ইহুদীরা দুর্গের বাইরে এসে আত্মসমর্পণ করলো। উটের পিঠে বোঝাই করলো তাদের মালপত্র। হঠাৎ কে একজন হত্যা করে ফেললো ইহুদী আমর ইবনে হাজ্জাজকে। এ সংবাদ পেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশি মুবারক প্রকাশ করলেন। সুবহানাল্লাহ! ইহুদীদের কেউ কেউ বললো, কারো কারো কাছে তাদের কিছু পাওনা আছে, তাই তাদেরকে কিছু সময় দেয়া হোক। তারা যেনো পাওনাগুলো উঠাতে পারে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তাড়াতাড়ি করো। এবার ইহুদীরা তাদের আহলিয়া ও শিশুদেরকে উটের পিঠে আরোহণ করালো। তার সঙ্গে যতটুকু মালপত্র নেয়া সম্ভব হলো, তা উটের পিঠে উঠিয়ে নিলো। কেউ কেউ উঠিয়ে নিলো দরজার চৌকাঠ। এভাবে ইহুদী বানী নাযীর পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে পলায়ন করে চলে গেলো। সুবহানাল্লাহ! পরিশেষে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা গনিমত হিসেবে লাভ করলেন ৫০টি বর্ম, ৫০টি শিরোস্ত্রাণ এবং ৩৪০টি তরবারি। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী)
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (বনী নাযীরের প্রতি) সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলেন, প্রতি তিন পরিবার একটি উটের পিঠে করে তাদের মালপত্র নিতে পারবে, তাই নিতে দেয়া হবে। অবশিষ্ট মালপত্র গণিমত হিসেবে পাবেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। ’
হযরত জুহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, তখন প্রত্যেক তিন পরিবারের জন্য একটি করে উট দেয়া হয়েছিল। একদিকে বানী নাযীর দেশান্তরিত হয়ে চলে যায় সিরিয়ার ইজারায়াত ও আরীহার দিকে। হুয়াই ইবনে আখতাবের গোত্র এবং হাকীক গোত্র চলে যায় খায়বরের দিকে। তাদের মধ্যে একটি শাখা গোত্র আবার চলে যায় হীরার দিকে। (তাফসীরে মাযহারী)
এর ব্যাখ্যায় হযরত জুহুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, বানী নাযীরেরা ভেবেছিলো তাদেরকে কখনোই দেশান্তরিত হতে হবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের অদৃষ্টে দেশান্তরিত হওয়া লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন। তারা দেশান্তরিত না হলে তাদের উপর পৃথিবীতেই আযাব-গযব নেমে আসতো। নাউযুবিল্লাহ! হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হাশরের ময়দান হবে শাম ও সিরিয়ায়।
قَالَ لَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اُخْرُجُوا قَالُوْا إِلَى أَيْنَ قَالَ: إِلَى أَرْضِ الْمَحْشَرِ، ثَمَّ يُحْشَرُ الْخَلْقُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى الشَّامِ.
অর্থ: ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বানী নাযীরদেরকে বলেছিলেন, তোমরা বেরিয়ে যাও। তারা বলেছিলো, কোথায় যাবো? তিনি ইরশাদ মুবারক করেছিলেন, হাশরের যমীনে। ক্বিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টিকে সিরিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। ’
কালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এটি ছিলো ইহুদীদের বিতাড়নের প্রথম ঘটনা। তাই একে বলা হয়েছে প্রথম হাশর। পরবর্তীতে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফতকালে পবিত্র আরব দেশ থেকে সমস্ত ইহুদী তথা সমস্ত কাফির মুশরিকদেরকে বের করে দেয়া হয়েছিলো। তাই হযরত মুররা হামদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, প্রথম হাশর হয়েছে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে। আর দ্বিতীয় হাশর সংঘটিত হয়েছে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারককালে খায়বর ও সমগ্র আরব উপদ্বীপ থেকে সিরিয়ার ইজরাআত ও আরীহা অঞ্চলের দিকে। সুবহানাল্লাহ! (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১২)
০৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১১)
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র উহুদ জিহাদ সংঘটিত হওয়ার ঘটনা
১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র উহুদ জিহাদ সংঘটিত হওয়ার ঘটনা
১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৯)
১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
০৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৮)
০১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৭)
২৪ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৬)
১৮ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১৫ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)