সুন্নত মুবারক তা’লীম
বিবাহের প্রস্তাব দেয়া এবং সম্মতি জ্ঞাপন করার মহাসম্মানিত সুন্নতী তরীক্বাহ
, ১৭ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১১ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৯ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৪ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম, সুন্দর আদর্শ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ২১)
মানুষের প্রতিটি ক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই হচ্ছে উত্তম অনুসরণীয়। কাজেই বিবাহ-শাদীসহ সর্বক্ষেত্রে উনাকেই অনুসরণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, ছেলে পক্ষ কিংবা মেয়ে পক্ষ উভয়পক্ষ থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসতে পারে। আবার সম্মতির বিষয়টিও উভয় পক্ষ থেকে হতে পারে। বিবাহের প্রস্তাব দানের ক্ষেত্রে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-সংশয়, সন্দেহ থাকা সমীচীন নয়। তবে যে কোন পক্ষ থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসুক না কেন তা বিবেচনায় নেয়া উচিত। তার মূল্যায়ন করা দরকার। আর যদি একান্ত সামঞ্জস্যশীল না হয় বা কুফু (সমকক্ষতা) না মিলে তাহলে হিকমতে জাওয়াব দেয়া আবশ্যক। সেক্ষেত্রে উচ্য বাচ্চ করা, প্রতিপক্ষকে হেয় প্রতিপন্ন করা, অসৌজন্যমূলক আচরণ করা জায়িয নেই। কেননা তাতে সামাজিক জীবনে নানাবিধ ফিতনা-ফাসাদ, দ্বন্দ্ব-কলহের সূত্রপাত ঘটতে পারে। সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রাবিআহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত নিসবাতুল আযীম মুবারক সুসম্পন্ন করার ব্যাপারেও প্রস্তাব এসেছিল। আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনারা দু’জনই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিকমতপূর্ণ জাওয়াব মুবারক দিয়েছিলেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ خَطَبَ حَضْرَتْ أَبُوْ بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ حَضْرَتْ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّـهَا صَغِيرَةٌ فَخَطَبَهَا حَضْرَتْ عَلِيٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَزَوَّجَهَا مِنْهُ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুরায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার সম্মানিত পিতা থেকে বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে মহাসম্মানিত নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবিয়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার আনুষ্ঠানিক মহাসম্মানিত বয়স মুবারক তো কম। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি প্রস্তাব দিলেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সাথে মহাসম্মানিত নিসবাতুল আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ! (নাসাঈ শরীফ)
উল্লেখ্য যে, দাম্পত্য জীবন সাময়িক বা ক্ষণস্থায়ী জীবন নয়। এটা চিরস্থায়ী ব্যাপার। কাজেই হঠাৎ করে বিবাহ বন্ধন হওয়া স্বভাবিক নয়। যারা তড়িঘরি করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় সাধারণত তাদের অনেকের সংসার জীবনে ফেৎনা সৃষ্টি হয়। যা তাদের পারিবারিক জীবন পরিচালনায় কষ্টের কারণ হয়। বৈবাহিক জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। এজন্য শরয়ী উনার হুকুম হচ্ছে, কারো সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার পূর্বে উভয় পক্ষের অভিভাবকগণ পরস্পর প্রস্তাব দিয়ে, আলাপ-আলোচনা করবে। যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়েও তারা তাদের বিবাহের প্রস্তাব দিতে পারবে। মতামত পেশ করতে পারবে। এ ব্যাপারে সম্মানিত শরীয়তে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।
হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিবাহের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য একজন আনছারী কন্যার বিবাহের প্রস্তাব কন্যার পিতার নিকট পেশ করলেন। কন্যার পিতা উনার আহলিয়া অর্থাৎ কন্যার মায়ের মতামত জেনে এর জাওয়াব দিবেন বলে ওয়াদা করলেন। সেই হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার আহলিয়ার নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। উনার আহলিয়া স্পষ্টভাবে অমত জানিয়ে দিলেন।
সেই কন্যা আড়াল থেকে পিতা-মাতার কথোপকথন শুনতে পান। উনার পিতা যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট অমতের বিষয়টি জানাতে রওয়ানা হলেন, তখন মেয়েটি পিতা-মাতাকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনারা কি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ প্রস্তাব মুবারকটি প্রত্যাক্ষান করতে চান? তিনি যদি বরকে আমাদের জন্য পছন্দ করে থাকেন তাহলে আপনারা এ বিয়ে সুসম্পন্ন করুন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম বিবাহের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করে, ধীরে সুস্থে সমস্ত বিষয় সম্পর্কে উভয় পক্ষ খোলামেলা আলোচনা করে নেওয়া। বর ও কনের মতামত নেওয়া। তার থেকেও বড় বিষয় হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক ও উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদে মত ও পথ মুবারক উনাদের মত ও পথ মুবারক উনাদেরকে প্রাধান্য দেওয়া। তবেই সংসারে সর্বক্ষেত্রে শান্তি-সৃঙ্খলা বজায় থাকবে, নেয়ামত-রহমত, বরকত মুবারক লাভ করা যাবে।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইস্তিঞ্জার আদব ও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সম্পর্কে (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইস্তিঞ্জার আদব ও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সম্পর্কে (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রয়োজনে ছুরি এবং চাকু দিয়ে খাবার কেটে খাওয়াও মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘পনির’
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০১)
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত খাছ সুন্নতী বিছানা মুবারক উনার বর্ণনা
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ তো অবশ্যই বরং হারাম-নাজায়িযের অন্তর্ভুক্ত
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












