বিরল খনিজ কি, এটি নিয়ে কেন এত টানাটানি?
, ২৮ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২২ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ২০ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পাঁচ মিশালী
আল্লাহ পাক উনার যমীনের সবকিছুই মূল্যবান। প্রতিটা প্রাণ, প্রতিটা উদ্ভিদ, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে থাকা প্রতিটা উপাদান-সবই অমূল্য। তবে কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলোর জন্য টানাটানিতে জীবন-সম্পদ-পরিবেশ বিপন্ন হয়ে ওঠে। কখনো কখনো যুদ্ধও লেগে যায়। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারে ‘কলা যুদ্ধ’। এই কলার সঙ্গে শিল্পকলার কোনো সম্পর্ক নেই। এই কলা গাছে ধরে, আয়রনসমৃদ্ধ একটি ফল।
কলা নিয়ে সেই যুদ্ধ চলেছে ৩৫ বছর, ১৮৯৮ সালের ১৩ আগস্ট থেকে ১৯৩৪ সালের ১ আগস্ট পর্যন্ত। অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র দফায় দফায় যে সামরিক হস্তক্ষেপ করেছিলো, সেটিই কলা যুদ্ধ নামে পরিচিতি পায় পরবর্তী সময়ে। পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, এমন অনেক বিষয় নিয়ে মানুষ যুদ্ধে জড়িয়েছে। তবে এবার আমেরিকা ও চীন যে বাণিজ্য যুদ্ধে নেমেছিলো, তা মোটেই কোনো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে নয়। এবারের দ্বন্দ্ব বিরল খনিজ নিয়ে। এই খনিজ উপাদানগুলোর একচ্ছত্র মালিক হলো এই উপমহাদেশীয় মুসলিম দেশগুলো। কিন্তু তারা বলে চীন খনিজ উপাদানগুলোর মালিক।
তবে যেই হোক তার আগে বিরল খনিজ নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণ অনুসন্ধানের আগে জেনে নেওয়া যাক, জিনিসটা আসলে কি। আর সে জন্য আমাদের কিছুটা রসায়ন শাস্ত্রের পাঠ নিতে হবে।
বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত ১১৮টি মৌলিক পদার্থের সন্ধান পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৯৪টিই আকাশে-বাতাসে প্রাকৃতিকগতভাবে বিভিন্নরূপে পাওয়া যায়। বাকি ২৪টি গবেষণাগারে উদ্ভাবন করেছে বিজ্ঞানীরা।
রসায়ন শাস্ত্রের পর্যায় সারণিতে এই ১১৮টি মৌলিক পদার্থকে তাদের বৈশিষ্ট্য অনুসারে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। এসব মৌলের কোনোটা কঠিন, কোনোটা তরল, আবার কোনোটা গ্যাস। কোনো কোনো মৌলিক পদার্থ আবার তেজস্ক্রিয়ও। এগুলোর মধ্যে ১৭টি মৌলিক পদার্থ রয়েছে, যাদের বৈশিষ্ট্য প্রায় একই রকম এবং প্রকৃতিতে অন্য মৌলিক পদার্থের সঙ্গে এমনভাবে মিশে থাকে, যে কারণে তাদের আলাদা করা কঠিন। এগুলোকে একসঙ্গে ল্যান্থেনাইড সিরিজ বলা হয়। এই মৌলগুলো হলো ল্যানথেনিয়াম, সিরিয়াম, নিওডিমিয়াম, প্রমিথিয়াম, সামারিয়াম, ইউরোপিয়াম, গাডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াস, হোলমিয়াম, এরবিয়াম, থুলিয়াম, ইটারবিয়াম, প্রাসিওডিমিয়াম এবং লুটেটিয়াম। এগুলোই বিরল খনিজ নামে পরিচিত। এ ছাড়া স্ক্যানডিয়াম ও ইট্রিয়ামও বিরল খনিজের অন্তর্ভুক্ত।
এখন জানা যাক এই মৌলগুলোকে কেন বিরল খনিজ বলা হয়, সেই প্রশ্নে। এই মৌলিক পদার্থগুলো আবার খনিজ। অর্থাৎ খনি থেকে তোলা যায়। তবে সোনা, রুপার মতো এগুলো পুঞ্জীভূত অবস্থায় খনিতে পাওয়া যায় না। বিরল খনিজগুলো অন্যান্য মৌলিক পদার্থের সঙ্গে মিশে থাকায় এগুলো উত্তোলন ও পরিশোধন অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। তাই এগুলোকে বিরল খনিজ বলা হয়। বিশ্বে বিরল খনিজের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী চীন। উত্তোলন ও পরিশোধন যন্ত্র না থাকায় মুসলমানরা এই সমস্ত অপার সম্ভাবনার মালিক হলেও নিয়ন্ত্রণ করে ইউরোপ-আমেরিকা।
বিরল খনিজ আধুনিক প্রযুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে স্মার্টফোন, বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে এসব খনিজ খুবই জরুরি উপাদান। ইলেকট্রনিকস, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও সামরিক সরঞ্জামের জন্য এসব মৌল দিয়ে শক্তিশালী চুম্বক, কাচসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি হয়। এসব কারণে বিরল খনিজের চাহিদা বিশ্বজুড়ে। তবে এই মৌলগুলোর ওপর সব সময় আমেরিকার কু-নজর রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের দিকেও তার কু-লালসা ঝরছে।
সম্প্রতি আমেরিকা-চীনের শুল্ক-পাল্টা শুল্ক আরোপ নামে শীতল বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে। এরই অংশ বিশেষ চীন বিরল খনিজ রপ্তানিতেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। আর এতেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছিলো। প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর কপালে পড়েছিলো দুশ্চিন্তার ভাঁজ। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোই প্রমাদ গুনছিলো। আশঙ্কা দেখা দিয়েছিলো, বিরল খনিজের সরবরাহ যদি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা থেমে যাবে। বিশেষ করে প্রযুক্তিপণ্য উদ্ভাবন এবং এই পণ্যের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যে ভাটা পড়ার শঙ্কায় পড়েছিলো মার্কিন ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা।
তবে শেষ পর্যন্ত সেই শঙ্কা কিছুটা হলেও কেটেছে। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় এপেক সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্প-শি জিন পিং বৈঠকে বাণিজ্য যুদ্ধ কিছুদিনের জন্য হলেও স্তিমিত হবে বলে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও ঘোষণা দেয়, তারা আগামী এক বছরের জন্য বিরল খনিজ রপ্তানিতে আরোপিত নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে।
চীনের এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আপাতত বিরল খনিজের সরবরাহ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিলো, তা কেটেছে; তবে শঙ্কা কাটেনি। কারণ, অতীত অভিজ্ঞতা বলে- ট্রাম্পের সঙ্গে নানা ইস্যুতে চীনের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। কখনো কখনো সেই ইস্যুর জন্য বড় কোনো কারণও লাগে না। এর আগে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প চীনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রথম বাগযুদ্ধে জড়িয়েছিলো করোনা গযব নিয়ে। করোনার কবলে পড়ে যখন অসংখ্য প্রাণ ঝরছিলো, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে তর্ক শুরু হয়েছিলো এই ভাইরাস কোত্থেকে ছড়িয়েছে, তা নিয়ে। ট্রাম্পের অভিযোগ ছিলো, চীন থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। কিন্তু চীন সেই অভিযোগ মেনে নিতে নারাজ। তারপর সেই বাগযুদ্ধ চলতে চলতেই কখন কিভাবে যেন দুই পক্ষ বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে গিয়েছিলো। অথচ যে করোনা নিয়ে কথার এত ‘মারামারি’, তা থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে কিন্তু ট্রাম্পের ততটা ‘মাথাব্যাথা’ ছিলো না। করোনায় তখন যুক্তরাষ্ট্রেই মারা যাচ্ছিলো বেশি। ট্রাম্পের মাথাব্যাথা ছিলো তখন করোনা ছড়ালো কোত্থেকে, তা নিয়ে। এ কারণেই লেখাটির শুরুতে ‘কলা যুদ্ধের’ অবতারণা। কারণ, আপাতদৃষ্টে কলা যুদ্ধও ছিলো ‘তুচ্ছ’ বিষয় নিয়ে।
করোনা ও চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ তুচ্ছ কিনা সে বিষয় আমাদের দেখার বিষয় না; এটা তুচ্ছ ব্যাপার হতে পারে। চীনের সাথে আমেরিকার লাগালাগি স্রেফ মাস্তানি (অনেকটা এলাকার গুন্ডা-পান্ডাদের মত)।
চীন ও আমেরিকা উভয়ের ক্ষেত্রেই একই নীতি- এই এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশসহ বিশ্বের সমস্ত মুসলমান দেশগুলোর খনিজ সম্পদ ও তেল সম্পদ তো অবশ্যই এমনকি মুসলিম দেশগুলোকে তাদের অঙ্গরাজ্য বানাতে তারা প্রত্যেকেই একতাবদ্ধ। যার সাক্ষাৎ প্রমাণ- মধ্যপ্রাচ্যের লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান ও আফ্রিকার বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলো।
মুসলমানদের সমূলে মূলোৎপাটন করতে শুধু চীন-আমেরিকা কেন; সমস্ত বিধর্মীগুলো এক। এরা উভয়েই বিশ্ব সন্ত্রাসী। মুসলিম দেশগুলোর দিকে তাদের বদ নজর, মাস্তানি, দালাল বসিয়ে দেশবিরোধী বিতর্কিত সিদ্ধান্ত কোনটাই কোনক্রমেই তুচ্ছ ধরে নেয়ার অবকাশ নেই; এই ষড়যন্ত্রে সফল হলে তারা বিরাট কামিয়াব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আফ্রিকা ভেঙে সৃষ্টি হচ্ছে এক নতুন মহাসাগর
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মৌমাছির বিষে এক ঘণ্টায় ধ্বংস স্তন ক্যানসার কোষ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১৩ বছরের অপেক্ষার পর দেখা মিললো বিশ্বের সবচেয়ে বিরল ফুলের
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সন্তানের উচ্চতা স্বাভাবিকভাবে বাড়বে যে ৩ ফলের রসে
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শুক্র গ্রহে একদিন পৃথিবীর এক বছরের চেয়েও দীর্ঘ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকলে নিজেকে পরিষ্কার করতে শুরু করে মস্তিষ্ক -গবেষণা
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নাম দিয়েই জমির মালিকানা যাচাই করবেন যেভাবে?
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হারিয়ে যাওয়া সুপারনোভার সন্ধান, পথ দেখালো ইসলামের স্বর্ণযুগের আরবি কবিতা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কোন বাদামের কেমন পুষ্টিগুণ, খাবেনই-বা কতটুকু?
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পৃথিবীতে প্রাণের প্রাচীনতম নিদর্শন আবিষ্কার!
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইসবগুলের ভুসি কতটা কার্যকর?
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহাকাশে এক নীরব সহযাত্রী পেলো পৃথিবী, উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












