বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গ্যাং কালচার’ : আতঙ্কে সাধারণ শিক্ষার্থীরা
, ০৮ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ৩১ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ৩১ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ১৭ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) দেশের খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০২৩ সালের শুরুতেই দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায় ছিনতাই, আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবির মতো ঘটনা ঘটেছে।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্যমতে, ২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ) প্রায় শতাধিক ছিনতাই, সহিংসতা, যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। যেগুলো সাংবাদিকদের নজরে এসেছে এবং ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও অন্তরালে রয়েছে আরও অনেক অপরাধ।
চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে রয়েছে ২০টি অভিযোগ। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে শতাধিক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হল পাড়ায়’ এক শিক্ষার্থী তার সহপাঠীকে মারধরের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বেরিয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিপথগামী’ শিক্ষার্থীদের রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। যার নাম দিয়েছে তারা ‘প্রলয় গ্যাং’। এই গ্যাংটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত। রয়েছে আরও দুটি গ্যাং। তাদের একটি ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে, যার নাম 'নিশাচর' এবং যা বর্তমানে কিছুটা নিষ্ক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। অপরটি ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীদের ‘ঐক্যবদ্ধ নিশাচর-২’।
সম্প্রতি প্রলয় গ্যাংয়ের বিষয়টি সামনে আসার পর শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। অনেকের মনে এখন প্রশ্ন, এই মেধাবী শিক্ষার্থীদের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণ কী?
সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রনেতা ও অপরাধ বিজ্ঞানীদের কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন এবং কীভাবে গড়ে উঠছে এই গ্যাং সংস্কৃতি।
এর জন্য ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দায়ী বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, গ্যাং কালচার নতুন কিছু না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আদনান রহমতুল্লাহ তূর্য বলেন, গ্যাং কালচার কোনও নতুন ঘটনা না। তবে সাম্প্রতিককালে তা প্রকট আকার ধারণ করার কারণ হলো ক্যাম্পাসের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি। একটি দলের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে সেই দলের ছত্রছায়ায় শুরু হয় ‘নেতা’ হওয়ার দৌড়। সেই দৌড়ে টিকে থাকতে একটি সাধারণত শিক্ষার্থী পরিণত হয় ক্যাডারে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে নয় বরং ক্ষমতা প্রদর্শন করার মাধ্যমেই যেন নেতা হওয়া যায়। ভালো কাজ নয়, বরং ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে কে কত লোক আনতে পারলো, তা দিয়েই বিচার করা হয় কে হবে পরবর্তী নেতা। ফলে সবাই চায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে। ক্যাম্পাসে ত্রাস সৃষ্টি করে ক্ষমতাধর হতে।
কী ভাবছে ছাত্র সংগঠনগুলো?
গ্যাং কালচার তৈরির জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনকে দায়ী করছে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো। তারা বলছে, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে এদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তবে বিষয়টিকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, তারা যেকোনও অপরাধে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলে। যারা এসব বলছেন তারা ছাত্রলীগের জনপ্রিয়তাকে ভয় পায় বলে এই ধরনের রাজনৈতিক অভিযোগ দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, গ্যাং কালচার তৈরির পেছনে সব জায়গাতেই আমরা দেখেছি তাদের পেছনে বিভিন্নভাবে ক্ষমতাসীনরা আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্যাং কালচারের পেছনেও সরকারি ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ভূমিকা আছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গ্যাং আলোচনায় এসেছে তাদের রাজনৈতিক যোগাযোগও অত্যন্ত স্পষ্ট। শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবেই বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্যাং কালচারকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এসব গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেন না। অন্তরঙ্গতার কারণে বরং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্নভাবে এদের টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে।
ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, ইতোপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্যাং কালচারের জন্ম হয়নি। ছাত্রলীগের অতীত অপকর্ম, সন্ত্রাসী কর্মকা- অব্যাহত রাখার আধুনিক রূপ বা প্রক্রিয়া হচ্ছে গ্যাং সংস্কৃতি। এই গ্যাং কালচার ‘প্রলয়’ ছাত্রলীগের নেতাদের দ্বারা গঠিত, নেতাদের মদতপুষ্ট একটি সহযোগী সংগঠন, যা একেবারেই স্পষ্ট। এই গ্যাং সংস্কৃতি জন্ম দিয়েছে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া সংগঠন ছাত্রলীগ।
বিষয়টি দমনের পরামর্শ দিয়ে এই অপরাধবিজ্ঞানী বলেন, আমাদের দেশে যেহেতু রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনও ঠিকভাবে উন্নত হয়নি, ফলে এই ধরনের কর্মকা-ে রাজনৈতিক প্রভাব থাকে। আর এজন্য ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনে সংশ্লিষ্ট কেউ থাকলে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে কেউ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব কাজ করতে না পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রক্টরিয়াল টিমকে ঢেলে সাজানো উচিত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সরকারি খরচায় ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪২৩ জনকে আইনি সহায়তা প্রদান
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কুষ্টিয়ায় নির্বাচন অফিসে আগুন
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দেশে পৌঁছেছে সুদানে নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর লাশ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একে খন্দকার আর নেই
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ সুশীল সংবাদপত্র অবশ্যই বন্ধ করতে হবে’
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খুনিরা কীভাবে সীমান্ত অতিক্রম করলো
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘ভারতে বসে হাসিনা হাদিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে’
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আবারও তলানিতে
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করছে বিজিবি’
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হঠাৎ অসুস্থ মির্জা ফখরুল
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘হাদির জানাজাকে কেন্দ্র করে, একটি গোষ্ঠী বিপ্লবী সরকার গঠনের পাঁয়তারা করছে’
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












