মস্তিষ্ক নীরবে ধ্বংস হচ্ছে যে ৮ অভ্যাসে
, ১৪ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১০ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৯ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ২৬ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পাঁচ মিশালী
প্রতিদিন মানুষের এমন কিছু অভ্যাস তৈরী হয়, যা নীরবে মস্তিষ্কের ক্ষতি করে যাচ্ছে।
কাজের চাপে বা অভ্যাসগত কারণে কিছু আচরণ দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে তা স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং মানসিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিভিন্ন স্নায়ুবিজ্ঞানী, মনোবিদ ও চিকিৎসকেরা এই বিষয়ে মত দিয়েছে।
রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জানানো হয়- দৈনন্দিন জীবনের কিছু ‘নিরীহ’ অভ্যাসই দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। তবে কিছু ছোট পরিবর্তন এনে এসব ক্ষতি রোধ করা সম্ভব।
১. একসঙ্গে একাধিক কাজ করার চেষ্টা:
অনেকেই মনে করেন, একসঙ্গে অনেক কাজ করলে সময় বাঁচে।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউরোসাইকোলজিস্ট ডা. সানাম হাফিজ বলেন, “মাল্টিটাস্কিং’ করলে মস্তিষ্ক আরও বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে।”
তার ভাষায়, “প্রতিবার একটি কাজ থেকে অন্যটিতে সরে যাওয়ার সময়, মস্তিষ্ককে ‘রিসেট’ হতে হয়। এতে মনোযোগ কমে যায় এবং ভুল করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।”
তিনি পরামর্শ দেন, “২৫ মিনিট একটানা একটি কাজে মনোযোগ দিন, তারপর পাঁচ মিনিট বিরতি নিন। এটি মস্তিষ্ককে স্বাভাবিক ছন্দে কাজ করতে সাহায্য করে।”
২. ঘুম বিসর্জন দেওয়া:
প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার কম ঘুম মস্তিষ্কের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার করে, স্মৃতিকে সংরক্ষণ করে এবং স্নায়ুর পুনরুদ্ধার করে।
যাদের ঘুমে বিঘœ ঘটে (যেমন- ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট বা সিøপ অ্যাপনিয়া), তাদের মধ্যে হৃদরোগ ও স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. উইল বলে, “ঘুমের ঘাটতি মস্তিষ্কে বেটা-অ্যামিলয়েড নামক বর্জ্য জমিয়ে তোলে, যা অ্যালঝাইমার’স রোগের সঙ্গে যুক্ত।”
৩. নিয়মিত নাস্তা বাদ দেওয়া:
রাতে দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার পর সকালে নাশতা না করাটা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর।
মার্কিন নিউরোসাইকোলজিস্ট ডা. হাফিজ বলেন, “নাশতা না করলে মনোযোগ কমে, রাগ বাড়ে, উদ্যম কমে যায়।”
তার মতে, “প্রোটিন ও আঁশসমৃদ্ধ হালকা কিছু খাওয়া উচিত। যেমন- ডিম ও সবজি, অথবা স্মুদি। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থির থাকে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।”
৪. রাতে না ঘুমিয়ে মোবাইল ব্যবহার:
রাতে ঘুমানোর আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে বা স্ক্রিনে চোখ রাখলে ঘুমের গুণমান নষ্ট হয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্নায়ুবিজ্ঞানী ড. জেমি বলে, “এই স্ক্রলিং কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে তোলে এবং মেলাটোনিন উৎপাদন কমিয়ে দেয়, ফলে ঘুমে সমস্যা হয়।”
মূলত; ঘুমের সময় মস্তিষ্ক গত দিনের তথ্য সংরক্ষণ করে, নতুন বিষয় শেখার ক্ষমতা বাড়ায়, আর সমস্যা সমাধানের দক্ষতা উন্নত করে।
বিজ্ঞানীদের পরামর্শ, “ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকতে হবে। হালকা আলো ব্যবহার, স্ট্রেচিং, শ্বাসচর্চা বা ছোট একটি ডায়েরি লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে মস্তিষ্ক বিশ্রামে যেতে পারে।”
৫. অতিরিক্ত কাজের তালিকা তৈরি:
বিজ্ঞানীদের মতে, কার্যক্ষম স্মৃতি একসঙ্গে তিন থেকে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ধারণ করতে পারে। তার বেশি হলে মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি হয়। যা মনোযোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মানসিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
তাদের পরামর্শ, দিনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে ঠিক করতে হবে। আর বাকি কাজগুলোর জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা দিতে হবে। এতে মস্তিষ্ক সুসংগঠিত ও কর্মক্ষম থাকে।
৬. আত্মীয়-স্বজনদের হক্ব আদায় না করা:
পরিবার-পরিজন, নিকটাত্মীয়, আপনজন ও সহকর্মীদেরকে সময় না দিলে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হতে পারে। অর্থাৎ তাদেরকে আলাদা সময় দেয়াও তাদের হক্ব। এই হক্ব অনেকে আদায় করে না। যার কারণে সেই সময় এখন মোবাইল ব্যবহারে ঢুকেছে। অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনে মোবাইল ব্যবহারে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা লোপ পেতে শুরু করে।
ডা. হাফিজ বলেন, “কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলাও মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় উত্তেজনা তৈরি করে, যা মনোযোগ বাড়ায় এবং বিষণœতা কমায়।”
বিশেষ করে যারা একাকী থাকেন বা অবসর জীবনে আছেন, তাদের জন্য সামাজিক মেলামেশা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখার অন্যতম উপায়।
৭. এলডিএল কোলেস্টেরল উপেক্ষা করা:
অনেকেই কোলেস্টেরলকে হার্টের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত করেন। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি মাত্রার এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল মস্তিষ্কের রক্তনালিতে ক্ষতি করে এবং মস্তিষ্কের আয়তন কমিয়ে দেয়।
চিকিৎসকদের মতে, মধ্য বয়সে যদি এলডিএল কোলেস্টেরল ৭০-এর বেশি থাকে, তাহলে তা স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই সময় থাকতে সচেতন হতে হবে।
৮. পর্যাপ্ত শারীরিক নড়াচড়া না করা:
বসে বসে কাজ করাও মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। ২০১৮ সালে ‘প্লস ওয়ান জার্নাল’য়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকক্ষণ বসে থাকলে মস্তিষ্কের ‘মেমরি সেন্টার’ সংকুচিত হয়ে যায়।
চিকিৎসকরা বলেন, “কার্ডিওভাসকুলার এক্সারসাইজ যেমন- হাঁটা, দৌড়ানো বা নাচ মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। এতে প্রদাহ কমে, রক্তচাপ ও রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মস্তিষ্ক সজাগ থাকে।”
কাজের ফাঁকে হাঁটা কিংবা কয়েক মিনিটের ছোটখাটো ব্যায়াম করার পরামর্শ রয়েছে তাদের।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ভাত খেলে কি ওজন বাড়ে?
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কানাডার রাস্তায় ৫০ লাখ মৌমাছি!
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হাতি যখন মাদকের সন্ধানদাতা!
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
এক কাপ ডালিমের দানা খেলে কি হয়?
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
গাজায় ভারী বৃষ্টিতে ১০ জনের মৃত্যু
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৯০ লাখ নিউরনের ভার্চুয়াল মস্তিষ্ক বানালেন বিজ্ঞানীরা
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
একই দিকেই ঘুরছে মহাবিশ্বের বিরল গ্যালাক্সি-দল
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ব্রেস্ট ক্যানসারের চিকিৎসায় ভ্যাকসিন, বিজ্ঞানীদের অবিশ্বাস্য সাফল্য
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একমাস ধরে প্রতি রাতে দুধ ও গুড় একসঙ্গে খেলে কি হয়?
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ফ্রান্সে সমুদ্রতলে কিংবদন্তির শহর, ৭০০০ বছর আগের বিশাল প্রাচীরের সন্ধান
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মঙ্গল গ্রহে প্রথমবারের মতো বজ্রপাত শনাক্তের দাবি
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শীতে কেন খাবেন নিম পাতার রস?
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












