আল ইহসান ডেস্ক:

প্রতিদিনের ন্যায় রাজারবাগ পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদে অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ উনার সম্মানে অনন্তকালব্যাপী মাহফিল মুবারক ও ৯০ দিনব্যাপী বিশেষ মাহফিল মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৮ই মুহররমুল হারাম শরীফ ১৪৪৭ হিজরী সাইয়্যিদুনা মামদুহ হযরত মুরশিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বাদ ইশা কুল কায়িনাতের সকলের উদ্দেশ্যে বিশেষ নছীহত মুবারক করেন।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, তালিমী মজলিশে ছাত্ররা ঠিকমতো না থাকলে তাদেরকে বহিষ্কার করে দেয়া উচিত। এখনতো বাহিরেও পড়াশোনায় কোন মনোযোগ নাই। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুনিয়াবী শিক্ষার একটা মান ছিলো যেটা এখন আর নাই। এখন সেখানে পড়াশোনা নাই সারাদিন চলে মারামারি দলাদলি। কাফেরদের তো ইলমে দ্বীনের প্রয়োজন নাই, তারা শুধু দুনিয়াবী পেশার জন্য, খাওয়া পরার জন্য যা শিখা জরুরী সেটাই শিখে। তাদের কাছে হালাল হারাম কিছুই নাই, মনে যা চায় তাই করে। মুসলমানদের তো ইলমে দ্বীন শিখার দরকার আছে। এখন দেখা যায় মুসলমানরা ইলমে দ্বীন শিখেনা। এখন কাফিরদের বদ তাছিরে মুসলমানদের এই অবস্থা হয়েছে। নাউজুবিল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, কাফিররা, ব্রিটিশ আরদালীরা যখন এই উপমহাদেশ এলাকায় আসলো তখন প্রথমেই চিন্তা করলো মুসলমানদের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে হবে। এরা ১৭৫৭ সালে ক্ষমতা দখল করে প্রায় একশো বছর যাবত মুসলমানদের থেকে ভালো করে শিখেছে তারপর ষড়যন্ত্র করে মুসলমানদের শিক্ষা ব্যবস্থা নস্ট করে দিছে। ১৮৩৪ থেকে ১৮৩৬ সালের মধ্যে তারা ফার্সী ভাষা বাদ দিয়ে দিয়েছে। ১১৭৬ হিজরীতে হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছাল শরীফ গ্রহন করার পর হযরত শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকেও অনেক কস্ট দিয়েছে জুলুম করেছে। ১২৩৯ হিজরীতে তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। তখন উপমহাদেশে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার আন্দোলন চলছিলো। হযরত শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কোন ছেলে সন্তান ছিলেন না, উনার মেয়ে পক্ষের পারিবারিক সিলসিলার সবাই একসময় হিজরত করে দিল্লী থেকে মদীনা শরীফ চলে যান। পরবর্তীতে উনার প্রধান খলীফা শুধুমাত্র হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মাধ্যমে সিলসিলা জারী থাকে।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, কাফিররা সবসময় চিন্তা করতো মুসলমানরা কিভাবে কেনো জিতে যায়, তারা বুঝতে পারলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবত মুবারক থাকার কারণেই মুসলমানরা যুদ্ধ জিহাদে জিতে যায়। তখন তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিসবত মুবারক হতে মুসলমানদেরকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহন করে। মুসলমানরা কাফেরদের ষড়যন্ত্র ধোঁকা বুঝতে পারে নাই।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, একটা গাধাকে পানের পিক দেয়ার বুজর্গের ঘটনাটা বুঝার জন্য যথেস্ট হবে। হিন্দুস্থানের ওই বুজুর্গ ব্যাক্তি ইন্তেকালের পর একটা লোক স্বপ্ন দেখলো উনাকে। লোকটি জানতে চাইলো- হুজুর! আপনি কেমন আছেন? বুজুর্গ ব্যক্তি বললেন, বর্তমানে আমি ভালো আছি, তবে আমার উপর দিয়ে কঠিন অবস্থা গেছে । আমার ইন্তেকালের পর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমাকে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট নিয়ে গেলেন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, তাকে এখানে আনলে কেনো? তারতো হাশর নশর হিন্দুদের সাথে হবার কথা। ওই বুজুর্গ ব্যক্তি তখন বললেন, আল্লাহ পাক! আমার হাশর নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেনো, আমিতো মুসলমান। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, তুমি তো পুজা করেছিলে, সেজন্য তোমার হাশর নশর হিন্দুদের সাথে হবে। ওই বুজুর্গ ব্যক্তি বললেন, আল্লাহ পাক! আমিতো পূজা দূরের কথা, আমি কোনদিন মন্দিরের আশে পাশেও যাইনি। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, তুমি স্মরন করে দেখো। যেদিন হিন্দুস্থানে হোলি পুজা হচ্ছিলো তখন তোমার পাশ দিয়ে একটা গাধা যাচ্ছিলো, তুমি তখন বললে কি হে গাধা! আজকে হোলি পুজা হচ্ছে। সব জায়গায় রঙ দেয়া হচ্ছে ,তোমাকে কি কেউ রঙ দেয়নি। তখন তুমি পান চিবাচ্ছিলে, তখন গাধার দিকে পানের পিক মেরে বলেছিলে যাও আমি তোমাকে রঙ দিয়ে দিলাম। তখন বুজুর্গ ব্যক্তি বললেন, ইয়া আল্লাহ পাক! এটা যে পূজা হবে তাতো আমি চিন্তাও করিনি, আমার মন সাবধান করেনি, কেউ আমাকে সতর্কও করেনি। তিনি তখন অনেক কান্নাকাটি করে তওবা ইস্তেগফার করতে লাগলেন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাঁকে তাঁর অন্যান্য নেক আমলের কারণে ক্ষমা করে দিলেন। এখন একটা গাধাকে পানের পিক দিলে যদি হিন্দু হয়ে যায়, তাহলে হযরত নবী রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ভুল করছেন- এটা বললে সেকি ঈমানদার থাকতে পারবে? সেতো নিশ্চিতকাফের হয়ে যাবে। নাউজুবিল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যার ভালাই চান তাকে দ্বীনের সহীহ সমঝ দান করেন। হাকিকী মুত্তাকি হলে কেউ হযরত নবী রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ভুল করেছেন এটা বলার কথা নয়, এমন কথা বললে সে ওলীআল্লাহ হবার তো প্রশ্নই আসে না। এখন কেউ যদি তওবা করে ওলীআল্লাহ হয়ে যায় সেটা ভিন্ন কথা। হযরত সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুক্বে আযম আলাইহিস সালাম উনাকে ফারুক্ব লকব দেয়া হলো, কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার দ্বারা সত্য-মিথ্যাকে পার্থক্য করেছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে হাক্বিকতে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুক্বে আযম আলাইহিস সালাম তিনিই মনোনীত করেছেন। তিনি বলেছিলেন, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একটি আয়াত শরীফেই তিনটি ছানা-ছীফত যার সুমহান শান মুবারকে নাযিল করা হয়েছে তিনি থাকতে কেউ খলীফা হতে পারেন না। এই বলে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দিকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার দুই হাত মুবারক ধরে বায়াত মুবারক গ্রহণ করলেন। পরবর্তীতে ফক্বিহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছিলেন,সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দিক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি যদি তখন খলীফা না হতেন তাহলে মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে যেতো।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ওলামায়ে-ছু এরা একদিকে বলে হযরত নবী রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত আবার বলে উনারা ভুল করেছেন। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বিষয়ে বলে উনারাতো ভুলের উপর ছিলেন। নাউজুবিল্লাহ! কাফিরগুলি তো এদের কিতাব হতেই এসব নিয়ে উনাদের বিরুদ্ধে বলে থাকে, লিখে থাকে। সহীহ সমঝ অনেক সুক্ষ্ম জিনিস, সুক্ষ্ম বিষয় এজন্য মানুষ আমাদের ফতোয়াগুলো বুঝে না। যদি হেদায়েত নসীব থাকে কারো তাহলে আমাদের কথা বুঝবে না হয় কিয়ামত পর্যন্ত কেউ বুঝবে না। কারণ সহীহ সমঝ একটি বিশেষ বিষয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবকিছু হাদীয়া মুবারক করে দিয়েছেন। এককথায়, তিনি হলেন সবকিছুর বন্টনকারী, কেউ বুঝুক আর না বুঝুক, বিশ্বাস করুক আর না করুক, এটাই হলো প্রকৃত সত্য বিষয়। সুবহানাল্লাহ!