আল ইহসান ডেস্ক:

প্রতিদিনের ন্যায় পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদে অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ উনার সম্মানে বিশেষ মাহফিল মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। বাদ ইশা মহান মুর্শিদে আযম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি কূল-কায়িনাতের সকলের উদ্দেশ্যে নছীহত মুবারক পেশ করেন।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, চারটি বিষয় থেকে পানাহ চাওয়ার জন্য পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে। এমন ইলম অর্জন করা যার মধ্যে কোন ফায়দা নেই, অর্থাৎ এমন ইলম অর্জন করতে হবে যার মাধ্যমে মুহব্বত মারিফাত অর্জন করা যাবে। এমন কলব যে কলবটা ভয় করে না, অর্থাৎ যে কলবে খোদাভীতি তাকওয়া নেই তেমন কলব হতে পানাহ চাইতে হবে। এমন নফস যা পরিতৃপ্ত হয় না, বরং দুনিয়াতে যাই পেলো তাতে যেনো পরিতৃপ্ত থাকে এমন নফস থাকা চাই। এমন দুয়া যা কবুল হয় না, অর্থাৎ এমন দুয়া করতে হবে যাতে দুয়া কবুল হয়। প্রত্যেকের কলবটাকে এমন করতে হবে যাতে বেপরোয়া না হয়। অতৃপ্ত হওয়া হলো জাহান্নাম ও দুনিয়াদাররে খাসলত। এসব প্রত্যেকটা বিষয় হুজরীর সাথে সম্পর্কযুক্ত। কলব যদি জারী থাকে, তাতে যদি মুহব্বত মারিফাত থাকে তখন কলবের মধ্যে ভয় থাকবে। এজন্য হুজুরী কলব হাসিল করার জন্য কমপক্ষে সুলতানুল আযকার যিকির জারী করা প্রত্যেকের জন্যই ফরজ।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সারা দুনিয়ার পরিস্থিতি খুব কঠিন । তিনশো কোটি মুসলমানের মধ্যে কতজন হাক্বিকী মুসলমান রয়েছে। সাড়ে তিন হাত শরীরের মধ্যে দ্বীন ইসলাম না থাকলে অন্তরে কিভাবে ইসলাম থাকবে। সমস্ত মুসলমানের জন্য ইলম অর্জন করা জরুরী ছিলো। যারা বায়াত মুবারক গ্রহণ করে তাদের জন্য আরো বেশী জরুরী ইলম হাসিল করা। ইলম হাসিলের মজলিশে বসে কথাবার্তা বললে জহমত বর্ষিত হবে। ইলম অনুযায়ী আমল না করার কারণে মাদরাসায় পড়েও অনেক লোক গুমরাহ হয় যেহেতু তাদের প্রতি জহমত বর্ষিত হয়। তালিমী মজলিশে খুব মনোযোগের সাথে তালীম শুনতে হবে। সেখানে বসে কথাবার্তা বলা উশখুশ করা কখনোই জায়েজ নয়। কারণ একবার লানত বর্ষিত হয়ে গেলে হেদায়েত লাভ করা কঠিন হয়ে যাবে।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, চোখের এক পলকের তরেও খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের থেকে গাফিল থাকা যাবে না। হতে পারে যে মুহুর্তে উনারা রহমত বর্ষণ করবেন তখন সে গাফিল হয়ে আছে। মজলিশে থেকে গাফলতি করলে জহমত বর্ষিত হয়। রহমত বর্ষিত হলে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতি হেফাজত করেন। এজন্য মজলিশ মাহফিল তালিমে খুব মনযোগের সাথে, মুহব্বতের সাথে শুনতে হবে। কোন ব্যাক্তি উনাদের রহমত ছাড়া কোনভাবেই নাজাত লাভ করতে পারবে না।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, নঝীহত মুবারক শুনতে হবে মানতে হবে বিশ্বাস করতে হবে। তাহলে তাকমীলে পৌঁছাতে পারবে। যারা মনে করেন রহমত মুবারক হাসিল করে কামিয়াব হয়ে ওলীআল্লাহ হবেন উনারা সত্যিই বড় ওলীআল্লাহ হন। আর যারা মনে করে শুধুমাত্র রিয়াজত মুশাক্কাত করে কিছু হাসিল করবেন, উনারা খুব বড় উপরের মাক্বামে যেতে পারেন না। কারণ রিয়াজত মাশাক্কত নয় বরং রহমত মুবারক দ্বারাই কামিয়াবী হাসিল করতে হবে। একজন মুমিন আর মুনাফিকের পার্থক্য হলো, মুমিন গুনাহখতা করলে অস্থির হয়ে যায় তওবা করার জন্য, আর মুনাফিক মনে করে অসুবিধা নেই পরে তওবা করে নিবে। অথচ পরে তার আর তওবা নসীব হয় না, সে তওবা করতে পারে না। অনেক বড় বড় সিলসিলা গায়েব হয়ে গেছে কারণ তারা রহমত নিসবত মুবারক হতে বঞ্চিত হয়ে গেছে। তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবার কারণে রহমত থেকে বঞ্চিত হয়েছে, ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ বন্ধ হয়ে যাবার কারণে তাদের সিলসিলাও বন্ধ হয়ে গেছে।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মুহব্বতে তিতা জিনিস মিষ্টি হয়ে যায়। মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী করার পরও শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মুহ্ববত করার কারণে নাজাত পাওয়া সহজ হয়ে যায়। উনাকে মুহব্বত করার কারণে সকল গুনাহখতাও পরিস্কার হয়ে যায়। কারণ সমস্ত কিছুর মূল হলেন মুহব্বত। এজন্য দ্বীনি যেকোন বিষয়ই মুহব্বতের সাথে করলেই বরকত পাওয়া যাবে। মুহব্বতের সাথে না করলে কোন কিছুতেই বরকত রহমত কিছুই পাওয়া যাবে না।