লিবিয়ায় বন্যা: সতর্ক করলেই বেঁচে যেত হাজারো মানুষের প্রাণ
এডমিন, ৩০ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৮ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০১ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) বিদেশের খবর

লিবিয়ার ভয়াবহ বন্যায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য দেশটির আবহাওয়া বিভাগকে দায়ী করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির আবহাওয়া বিভাগ (ডব্লিউএমও) বলেছে, লিবিয়ার সরকারি আবহাওয়া ব্যবস্থাপনা অকেজো। তারা সময় মতো সতর্কতা জারি করতে পারেনি। সতর্ক করলেই হাজারো মানুষের প্রাণ বেঁচে যেত।
ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সৃষ্ট বন্যায় লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর দেরনা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
লিবিয়ায় গত সপ্তাহে (১০ সেপ্টেম্বর) শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের আঘাত হানে। এতে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি শহর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এতে বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। ঝড় ও বন্যায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। তবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উদ্ধারকারী দল ও ত্রাণ সহায়তার বহর দেরনা শহরে প্রবেশে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ বন্যার কারণে শহরের বেশিরভাগ রাস্তাই বন্ধ হয়ে গেছে। একটি মাত্র সড়ক কার্যকর রয়েছে।
বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেন ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে দেরনা শহর। ধসে গেছে শত শত বাড়ি ও রাস্তা-ঘাট। পানির গ্রোতে ভেসে গেছে অসংখ্য গাড়ি।
ভয়াবহ এই বন্যা পরিস্থিতির জন্য লিবিয়ার আবহাওয়া বিভাগের সমালোচনা করে জাতিসংঘ ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিকাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) মহাসচিব পিটেরি তালাস বলে, যদি তাদের আবহাওয়া বিভাগ স্বাভাবিক ও কার্যকর থাকত, তাহলে তারা সতর্কতা জারি করতে পারত।
তালাস আরও বলে, ডব্লিউএমও লিবিয়ার আবহাওয়া বিভাগের সংস্কারে দেশটির কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নিরাপত্তা হুমকির কারণে এই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সে বলে, ‘যেহেতু দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুবই প্রতিকূল, তাই সেখানে গিয়ে পরিস্থিতির উন্নয়ন করা কঠিন।’
চলতি মাসের শুরুর দিকে (৪ সেপ্টেম্বর) ভূমধ্যসাগর পাড়ের দেশ গ্রিসের ওপর তৈরি হয় গ্রীষ্মম-লীয় ঘূর্ণিঝড় ‘ডানিয়েল’। এ কারণে শক্তিশালী ঝড়ো বাতাস সৃষ্টি হয়। সঙ্গে যোগ হয় প্রচ- বৃষ্টিপাত। এ কারণে গ্রিস, তুরস্ক ও বুলগেরিয়ায় ব্যাপক বন্যা হয়েছে এবং এ দেশগুলোতেও অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে। হয়েছে ক্ষয়ক্ষতিও।
ইউরোপের এই তিন দেশের পর ঘূর্ণিঝড়টি ভূমধ্যসাগর পার হয়ে চলতি সপ্তাহে (১০ সেপ্টেম্বর) লিবিয়ার পূর্ব উপকূলে আঘাত হানে। এতে বেনগাজি, বায়দা ও দেরনাসহ দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় অন্তত শহরে বন্যা দেখা দেয়।
ভূমধ্যসাগরের একেবারে তীরে দেরনা শহরের অবস্থান। এটি একটি বন্দর নগর। এখানে প্রায় ১ লাখ মানুষের বাস। ভূমধ্যসাগরের পানি ঠেকাতে সাগরের পাড়ে কয়েকটি বাঁধ রয়েছে। যা বহু বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় ডানিয়েলের আঘাতে পুরনো বাঁধগুলোর মধ্যে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ ধসে পড়েছে।
বাঁধ ধসে পড়ায় ভূমধ্যসাগরের পানি প্রবল বেগে ওয়াদি দেরনা তথা দেরনা উপত্যকায় ঢুকে পড়ে। এক হিসেবে, বাঁধ ধসে অন্তত ৩ কোটি কিউবিক মিটার পানি শহরের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। দেরনা শহরের ডেপুটি মেয়র আহমেদ মাদরুদ বলেছেন, শহরটি যেভাবে তৈরি করা হয়েছে তাতে বেশিরভাগ মানুষ পানির প্রবেশপথে রয়েছে।
মেয়র মাদরুদ জানান, শহর রক্ষার জন্য নির্মিত বাঁধগুলো প্রায় দুই দশক ধরে সংস্কার করা হয়নি। বড় কোনো বন্যা ঠেকানো যায় নতুন করে এমন কোনো অবকাঠামোও নির্মাণ করা হয়নি। এর কারণ লিবিয়ায় গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত চলছে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ন্যাটো বাহিনীর হাতে নিহত হন লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি। এরপর থেকে রাজধানী ত্রিপোলি কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি সরকার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ করছে। আর পূর্বাঞ্চলে প্রতিদ্বন্দ্বী আরও একটি সরকার রয়েছে। যার কেন্দ্র হলো বেনগাজি। চলতি সপ্তাহের বন্যায় বিধ্বস্ত দেরনা শহর রয়েছে এই সরকারের নিয়ন্ত্রণে।