ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশন লংঘনকারী দেশ!
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিদ্বেষী নীতির শিকার ফ্রান্সের মুসলিম নারীরা
এডমিন, ১১ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৫ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ৩রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ২০ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা

ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ২০১০ সালের ১১ই এপিল ফ্রান্স বোরকা নিষিদ্ধ করার আইন কার্যকর করে। এ আইন অনুযায়ী ফরাসি পুলিশ ঘরের বাইরে বোরকা বা হিজাব পরা মুসলিম মহিলাদের ১৫০ ইউরো জরিমানা করতে পারে। এ ছাড়াও এ আইন অনুযায়ী যেসব পুরুষ তাদের স্ত্রী বা বোনকে পর্দা বা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শালীন পোশাক পরতে বাধ্য করবে তাদেরকেও এক বছরের কারাদ- ও ত্রিশ হাজার ইউরো জরিমানা করতে পারে। এর আগে ফরাসি সংসদ ২০০৪ সালে শিক্ষাঙ্গনে পর্দানশীন মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে।
প্যারিস ১৯৮৩ সালে নারীর প্রতি বৈষম্য বিরোধী কনভেনশনে যোগ দেয়। ওই কনভেনশনের ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘হিজাব বা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শালীন পোশাক পরার কারণে কোনো মেয়ে বা নারীকে শিক্ষার সূযোগ এবং যে কোনো ধরনের সামাজিক কর্মকা-ে অংশ নেয়া থেকে বিরত রাখা যাবে না।’ অথচ ফ্রান্সের বোরকা বা হিজাবধারী বা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শালীন পোশাকধারী মহিলারা সবচেয়ে কঠোর সীমাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সেই মুসলমানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই দেশটির মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি।
পুরো মুখ ঢেকে রাখা পোশাক বা বোরকা পরার ওপর ফরাসি সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং এ ধরনের অন্য পদক্ষেপগুলো মানবাধিকার সংক্রান্ত ইউরোপীয় কনভেনশনেরও লংঘন। কারণ এ কনভেনশনে মানুষের প্রাথমিক স্বাধীনতাগুলো নিশ্চিত করার যে কথা বলা হয়েছে এইসব নিষেধাজ্ঞা তার পরিপন্থী।
পোশাক মানুষের সংস্কৃতি ও বিশ্বাস বা চিন্তাধারাকে অনেকাংশে তুলে ধরে। মুসলিম নারীর হিজাব বা পর্দার অর্থ হল উনারা সমাজে নিজ শরীর ঢেকে রাখতে চান। কারণ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম নারীর পর্দাকে ফরয করে দিয়েছেন। বোরকা হিজাব নারীকে অসুস্থ মনের পুরুষদের অশালীন দৃষ্টি ও আশোভনীয় আচরণ থেকে রক্ষা করে এবং এভাবে সমাজ সুস্থ থাকে ও নারী নির্বিঘœ থাকতে পারেন। কিন্তু পাশ্চাত্য নারীর স্বাধীনতার নামে সমাজে সৃষ্টি করেছে লাগামহীনতা ও অশ্লীল অনাচার। পাশ্চাত্যের কথিত এই নারী স্বাধীনতায় নারীকে কেবল ভোগের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ অবস্থায় সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ঠেকানোর জন্য পাশ্চাত্যে দেশগুলো বোরকা নিষিদ্ধ করেছে এবং নারীকে অশালীন জীবনের পংকিলতায় ডুবিয়ে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিস্তার ঠেকানো সম্ভব যাবে বলে তারা মনে করে।
অষ্টাদশ শতকের কুখ্যাত বৃটিশ গোয়েন্দা ‘হেম্পার’ মুসলিম বিশ্বে নারীকে বেপর্দা করার পশ্চিমা পদক্ষেপের অশুভ উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেছে, “মুসলিম মহিলারা খুবই পর্দানশীন হওয়ায় তাদের মধ্যে অশালীনতা বা ব্যাভিচারের ধারা চালু করা অসম্ভব। এ অবস্থায় মুসলিম মহিলাদেরকে ধোঁকা দিয়ে তাদেরকে পর্দা বা বোরকার আচ্ছাদন থেকে বের করে আনতে হবে।”
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা নূর শরীফ উনার ৩১ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে এবং পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ উনার ৫৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নারীকে নিজ সম্ভ্রম রক্ষা করতে ও যাদের সামনে খোলামেলা হওয়া বৈধ নয় তাদের সামনে পর্দা করার বা শরীর ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বর্তমান বিশ্বে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, বোরকা বা হিজাব নারীকে নিরাপত্তা দেয়, তাদেরকে দেয় সম্মান এবং আত্মবিশ্বাস। মার্কিন লেখিকা উইন্ডি শিলিট বলেছে, “পাশ্চাত্যের লাগামহীন বা বলগাহীন জীবন-যাপন পদ্ধতি মাত্রাতিরিক্তি উস্কানীমূলক এবং এর ফলে ধ্বসে পড়ছে পরিবার-ব্যবস্থা ও দেখা দিয়েছে আদর্শিক অচলাবস্থা। বর্তমান প্রজন্মের মানুষ এই লাগামহীন স্বাধীনতায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এবং তারা স্বাভাবিক মানবীয় প্রকৃতির মাধুর্যের স্বাদ পূণরায় পেতে চায়।”
তাইতো ফ্রান্সসহ ও পাশ্চাত্যের অনেক দেশে হিজাব বা পর্দার ওপর নানা সীমাবদ্ধতা আরোপ সত্ত্বেও পশ্চিমা নারী সমাজের মধ্য সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি ও উনার শালীন পোশাকের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
-উম্মু মুযযাম্মিল