সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (২)
, ০৫ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১১ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ০৯ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي عَوْنٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهَ قَالَ كَانَ مِنْ أَمْرِ بَنِي قَيْنُقَاعَ أَنّ امْرَأَةً مِنْ الْعَرَبِ قَدِمَتْ بِجَلَبِ لَهَا، فَبَاعَتْهُ بِسُوقِ بَنِي قَيْنُقَاعَ وَجَلَسَتْ إلَى صَائِغٍ بِهَا، فَجَعَلُوا يُرِيدُونَهَا عَلَى كُشْفِ وَجْهِهَا، فَأَبَتْ فَعَمِدَ الصّائِغُ إلَى طَرَفِ ثَوْبِهَا فَعَقَدَهُ إلَى ظَهْرِهَا، فَلَمّا قَامَتْ انْكَشَفَتْ سَوْءَتُهَا، فَضَحِكُوا بِهَا، فَصَاحَتْ. فَوَثَبَ رَجُلٌ مِنْ الْمُسْلِمِينَ عَلَى الصّائِغ فَقَتَلَهُ وَكَانَ يَهُودِيّا، وَشَدّتْ الْيَهُودُ عَلَى الْمُسْلِمِ فَقَتَلُوهُ فَاسْتَصْرَخَ أَهْلُ الْمُسْلِمِ الْمُسْلِمِينَ عَلَى الْيَهُودِ، فَغَضِبَ الْمُسْلِمُونَ فَوَقَعَ الشّرّ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ بَنِي قَيْنُقَاعَ
অর্থ: “হযরত আবূ আউন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বানূ কাইনুকার ঘটনা সম্পর্কে বলেন, আরবের জনৈক মহিলা কিছু পণ্য নিয়ে একদা বানূ কাইনুকার বাজারে তা বিক্রি করলো। তারপর সেখান থেকে এক ইহুদী স্বর্ণকারের কাছে যেয়ে বসে পড়লো। ইহুদী সে স্বর্ণকার মহিলাকে তার চেহারা খুলতে বললো। মহিলা তাতে অসম্মত হলেন, স্বর্ণকার মহিলার কাপড়ের এক কোণ তার পিছনের দিকে বেঁধে দিল। ফলে মহিলা উঠার সময় তার কাপড় উঠে গেল। এ অবস্থা দেখে ইহুদীটি হাসতে লাগলো। সাথে সাথে মহিলাটি চিৎকার করে উঠলো। তখন জনৈক হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ অবস্থা দেখে ইহুদী স্বর্ণকারকে হত্যা করে ফেললেন। যখন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই স্বর্ণকার ইহুদীকে হত্যা করে ফেললেন তখন অন্যান্য ইহুদীরা সেই হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর আক্রমন করে উনাকেও শহীদ করে ফেললো। নাউযুবিল্লাহ! উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আত্মীয়-স্বজন উনারা ইহুদীদের বিরুদ্ধে মুকাবিলা করার জন্য অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কাছে সাহায্য চাইলেন। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিলেন। এখান থেকেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও বানূ কাইনুকার মাঝে জিহাদের সূত্রপাত ঘটে। ” (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, রওদ্বুল উনূফ, তারিখুল ইসলাম লিইমামি যাহাবী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে ইহুদীরা বিভিন্ন রকম অবমাননাকর কথা ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে, পাশাপাশি যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ইহুদীদের ষড়যন্ত্রের ও যুদ্ধের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে পারলেন তখন উনারাও জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। হযরত আসিম ইবনে আমর ইবনে কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইহুদীদের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপ দেখে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। পরিশেষে ইহুদীরা সাময়িকভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফায়সালা মুবারক মেনে নিতে রাজি হয়। তখন মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল সে ইহুদীদের পক্ষ নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কথা বললো। সে বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আমার মিত্রদের প্রতি অনুগ্রহ করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন জবাব দিলেন না। সে আবার বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মিত্রদের প্রতি অনুগ্রহ, দয়া ও ইহসান করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্য দিকে উনার নূরুর রহমত মুবারক অর্থাৎ মহাসম্মানিত চেহারা মুবারক ফিরিয়ে নিলেন। এবার সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ক্বমীছ বা কোর্তা মুবারক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পকেট মুবারকে হাত ঢুকিয়ে দিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে উবাই বিন সুলূল! তুমি আমার মহাসম্মানিত কোর্তা মুবারক ছেড়ে দাও। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুবই গোসসা মুবারক করলেন। উনার নূরুল মুনাওওয়ার ও নূরুর রহমত মুবারক তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চোখ মুবারক ও চেহারা মুবারক গোস্সায় লাল হয়ে গেল। তিনি আবারও বললেন, তুমি আমার মহাসম্মানিত কোর্তা মুবারক ছেড়ে দাও। কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল বললো, না আমার মিত্রদের প্রতি যতক্ষণ উদার ও সহজ সিদ্ধান্ত না দেবেন ততক্ষণ কোর্তা মুবারক ছেড়ে দিবো না। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, বানূ কায়নুকা তারা সংখ্যায় ছিল ৭০০ জন। তারমধ্যে চারশ’ জন নিরস্ত্র আর তিনশ’ জন বর্ম পরিহিত। কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল সে বললো, এই ইহুদীরা সাদা কালো সকল মানুষদের আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করেছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কি এক ভোরেই তাদের সকলকে ধ্বংস ও নির্মূল করে দিতে চান? মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি কিন্তু তাতে বড় বিপদের আশংকা করছি।
فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " هُمْ لَك"
অর্থ: অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “(হে উবাই বিন সুলূল!) তবে তাদের ব্যাপারে তোমার উপরই ছেড়ে দিলাম। (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, তারিখুল ইসলাম লিল ইমামিয যাহাবী, তারিখে আবিল ফাদা) (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাইয়্যিদ আহমদ শাবীব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬২)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ উনার ময়দানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ একজন অপরজনকে প্রাধান্য দেয়ার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)