সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস্ সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
, ২৯ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৭ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ০৫ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২১ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
পরিচিতি মুবারক:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার মূল নাম মুবারক ছিলেন হযরত হিন্দা আলাইহাস সালাম। উনার উপনাম বা কুনিয়াত মুবারক হযরত উম্মে সালামাহ আলাইহাস সালাম। হযরত সালামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পুত্রের নাম এবং সেজন্য তিনি হযরত উম্মে সালামাহ আলাইহাস সালাম এই সম্মানিত নামেই প্রসিদ্ধ ছিলেন। উনার পিতার নাম আবু উমাইয়া ইবনুল মুগীরা। আবু উমাইয়ার লক্বব ছিল “যাদুর রাকব” অর্থাৎ কাফেলার পাথেয়। পবিত্র মক্কা শরীফে দানশীলতা ও মেহমানদারীর জন্য তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি যখন কোন কাফেলার সাথে কোথাও বের হতেন, তখন গোটা কাফেলার খাওয়া-দাওয়া সহ যাবতীয় দায়-দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতেন। এই উদারতা ও মহানুভবতার কারণে সমকালীন আরববাসী উনাকে “যাদুর রাকব” লক্বব মুবারক দান করে। উনার মাতার নাম ’আতিকা বিনতে ’আমির ইবনে রাবী’য়া।
বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল উমাম, আহলু বাইতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, পবিত্র মক্কা শরীফে কুরাইশ গোত্রের মাখযুম বংশে নবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের ১৭ বছর পূর্বে পবিত্র মাহে মুহররম শরীফ উনার ২৫ তারিখ, ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। (দৈনিক আল ইহসান শরীফ)
প্রাথমিক জীবন মুবারক:
হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার প্রথম শাদী মুবারক হয় হযরত আবু সালামা ইবনুল আসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে। হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা হযরত আবদুল্লাহ আলাইহিস সালাম ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফুফা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফুফু হযরত বুররা আলাইহাস সালাম উনাকে তিনি শাদী করেন। উনারই ছেলে হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। খাজা আবু তালিব, সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম ও হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনারা সকলই হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত মামা ছিলেন। (আসাহহুস সিয়ার)
দ্বীন ইসলাম গ্রহণ:
হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনারা উভয়ে “আছ-ছাবিকুন আল-আউয়ালুন” (প্রথম যুগের মুসলমান)-উনাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর বনু মাখযুম গোত্র হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর নির্দয়ভাবে জুলুম অত্যাচার চালাতে লাগল। এক পর্যায়ে তিনি খাজা আবু তালিব উনার আশ্রয়ে চলে আসেন। বনু মাখযুমের লোকেরা বলল, আবু তালিব! এতদিন আপনি আপনার ভাতিজা উনার সাহায্য-সমর্থন করছিলেন, এখন আপনার আশ্রয়ে থাকা আমাদের ভাইয়ের ছেলেকেও আমাদের হাতে সমর্পন করছেন না। খাজা আবু তালিব বললেন হ্যাঁ, বিপদ থেকে আমার বোনের ছেলেকে রক্ষা করছি।
হিজরত মুবারক:
হিজরতের হুকুম হলে হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হাবশায় হিজরত করেন। তিনিই সর্বপ্রথম উনার আহলিয়াসহ হিজরত করেন। হিজরতের ব্যাপারে উনারা উভয়ে একসাথে এবং একমতে ছিলেন (আসাহহুস সিয়ার)
কিছুকাল হাবশায় থেকে উনারা আবার মক্কা শরীফে ফিরে আসেন। অতঃপর কাফিরদের প্রতিরোধের কারণে হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একাকী মদীনা শরীফে হিজরত করেন।
হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হিজরতের পরে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনিও পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত করেন। ঐতিহাসিকদের মত অনুযায়ী তিনিই প্রথম মহিলা ছাহাবী যিনি হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ আনেন। পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরতের সময় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম যে হৃদয়-বিদারক ঘটনার সম্মুখীন হন তিনি নিজেই তা বর্ণনা করেন, হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন মদীনা শরীফ চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন উনার নিকট মাত্র একটি উট ছিল। তিনি সেই উটের উপর আমাকে ও সালামাকে উঠান এবং নিজে উটের লাগাম ধরে চলতে আরম্ভ করেন। আমার পিতৃকুল বনু মুগীরার লোকেরা হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বাধা দিয়ে বলল, আমরা আমাদের মেয়েকে এমন খারাপ অবস্থায় যেতে দেব না। হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত থেকে তারা উটের লাগাম ছিনিয়ে নিল এবং আমাকে তারা সঙ্গে করে নিয়ে চলল। এদিকে হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খান্দান বনু আবদিল আসাদের লোকেরা এসে পড়ে এবং তারা আমার সন্তান সালামাকে আমার নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তাদের দখলে নিয়ে গেল। তারা বনু মুগীরাকে বলল, তোমরা যদি তোমাদের মেয়েকে উনার আহাল উনার সাথে যেতে না দাও, তাহলে আমরাও আমাদের সন্তানকে তোমাদের মেয়ের নিকট থাকতে দিব না। এভাবে আমি, আমার আহাল এবং আমার সন্তান তিনজন তিন দিকে পৃথক হয়ে পড়লাম। আহাল ও সন্তান উনাদের বিচ্ছেদ ব্যাথায় আমার অবস্থা খুবই কঠিন হয়ে পড়ল। যেহেতু হিজরতের নির্দেশ এসে গিয়েছিল, তাই হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছে যান। আর এদিকে পবিত্র মক্কা শরীফে আমি একাকী পড়ে রইলাম। প্রতিদিন সকালে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তাম এবং আবতাহ উপত্যকায় একটি টিলার উপর বসে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাঁদতাম। সন্ধ্যা হলে ঘরে ফিরে আসতাম। এভাবে প্রায় সাত/আট দিন চলে যায়।
একদিন আমাদের হিতাকাঙ্খী বনু মুগীরার এক ব্যক্তি আমার এ দুরবস্থা দেখে ভীষণ কষ্ট পেলেন। তিনি বনু মুগীরার লোকদের একত্র করে তাদের সম্বোধন করে বললেন, আপনারা এই সম্মানিত মহিলাকে মুক্তি দিচ্ছেন না কেন? উনাকে কেন উনার জওয মুকাররম ও সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন? উনাকে মুক্তি দিয়ে দিন এবং উনার জওয মুকাররম ও সন্তানের সাথে মিলিত হতে দিন। তিনি কথাগুলি এমন আবেগভরা শব্দে প্রকাশ করেন যে, তাতে আমার পিতৃ-গোত্রের লোকদের অন্তর বিগলিত হয়। তারা আমাকে আমার জওয মুকাররম উনার নিকট যাওয়ার অনুমতি দেয়। এ খবর শুনে বনু আবদুল আসাদও আমার সন্তানকে আমার নিকট পাঠিয়ে দেয়। অতঃপর আমি একটি উটের উপর হাওদায় বসলাম এবং পুত্র সালামাকে কোলে করে সওয়ার হয়ে গেলাম। পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে একাকিনী বেরিয়ে তানঈম পর্যন্ত পৌঁছলাম। সেখানে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার চাবি রক্ষক হযরত উছমান বিন ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখনও তিনি মুসলমান হননি) উনার সাথে দেখা হলো। তিনি আমার ইচ্ছার কথা জেনে আমার সাথে আর কেউ আছে কিনা তা জানতে চাইলেন। আমি বললাম, না, আমার সাথে আর কেউ নেই। শুধু আমি ও আমার এ শিশু সন্তান। একথা শুনে তিনি আমার উটের রশি ধরলেন এবং বললেন, আপনি যাদুর রাকব সম্মানিত ব্যক্তিত্ব আবু উমাইয়ার মেয়ে। আপনি এভাবে পরিত্যক্ত হতে পারেন না। অতঃপর উটের রশি ধরে তিনি আগে আগে চলতে লাগলেন।
মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি হযরত উছমান বিন ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চেয়ে ভালো ও ভদ্র মানুষ তৎকালীন আরবে আর কাউকে দেখিনি। যখন আমরা কোন মনযিলে পৌঁছতাম এবং আমাদের বিশ্রামের প্রয়োজন হতো, তিনি উটকে বসিয়ে দিয়ে দূরে কোন গাছের আড়ালে চলে যেতেন। আবার চলার সময় হলে তিনি উট প্রস্তুত করে আমার কাছে এসে বলতেন, উঠে বসুন। আমি উটের পিঠে ভালভাবে বসার পর তিনি রশি ধরে আগে আগে চলতে থাকতেন। গোটা ভ্রমনটিই এই নিয়মে হয়েছিল। যখন আমরা মদীনা শরীফে বনু আমর ইবনে আওফ উনাদের গ্রাম কুবা পল্লীতে পৌঁছলাম, হযরত উছমান বিন ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাকে বললেন, আপনার জওয মুকাররম এই পল্লীতে আছেন। হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেখানে অবস্থান করছিলেন। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ভরসা করে মহল্লার মধ্যে প্রবেশ করলাম এবং হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাক্ষাত পেয়ে গেলাম। এভাবে হযরত উছমান বিন ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাকে হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সন্ধান দিয়ে আবার পবিত্র মক্কা শরীফের দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। (উসুদুল গাবা)
পরবর্তীকালে হিজরতের প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলতেন, দ্বীন ইসলামের জন্য হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরিবারকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, পবিত্র আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্য কাউকে সেরূপ কষ্ট পোহাতে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। (উসুদুল গাবা)
হিজরতের দুর্ভোগ ও কষ্টের স্মৃতি তখনও উনাদের মন থেকে মুছে যায়নি এবং হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বপরিবারে একসাথে বসবাসের সুযোগও বেশী দিন হয়নি। এরইমধ্যে উহুদের জিহাদের ডাক এসে যায় এবং হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেই ডাকে সাড়া দিয়ে জিহাদে যোগদান করেন। শত্রুপক্ষের নিক্ষিপ্ত একটি তীরে উনার একটি বাহু আহত হয় এবং এক মাস চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে যান। (তাবাকাত)
হিজরী ৪র্থ সনের মাহে ছফর শরীফে উনার সেই পুরানো ক্ষত আবার তাজা হয়ে উনার জীবন আশঙ্কা দেখা দেয়। সেই বছর জুমাদাল ঊখরা শরীফ মাসের ৯ তারিখ তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, ইছাবা)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জানাযার নামায আদায় করেন। সেই নামাযে তিনি নয়টি তাকবীর দিয়েছিলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনার নামাযে আপনি নয়টি তাকবীর কেন দিলেন? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হাজার তাকবীর লাভের যোগ্য। বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সময় হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চোখ দু’টি খোলা ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের পবিত্র দুই নূরুল মাগফিরাত মুবারক (হাত মুবারক) দিয়ে উনার চোখ দু’টি বন্ধ করে দেন এবং উনার জন্য দোয়া মুবারক করেন। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী শরীফ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ:
হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরে আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার একাকীত্ব ও দুঃখ-বেদনার কথা চিন্তা করে উনার সাথে শাদী মুবারকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি।
হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আত্মত্যাগ ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার একাকীত্ব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুভূতি মুবারককে তীব্রভাবে নাড়া দিতে থাকেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি অবহিত হন। অতঃপর খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার নিজ নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার প্রস্তাব প্রদান করেন। এই নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার প্রস্তাব শুনে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম কতগুলি আরজি পেশ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আরজুসমূহ জানতে চান। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, (১) আমার কয়েকজন সন্তান রয়েছেন (২) আমি একজন বয়স্কা মহিলা (৩) আমার কোন অভিভাবক নেই। এসব আরজি পেশ করে তিনি বলেন যে, এই কারণসমূহ আপনার যথার্থ খেদমতের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হয় কিনা। এর জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনার সন্তানদের দায়িত্ব খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উপর। আপনার অভিভাবকদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে এ কাজে রাজী হবে না। আর আপনি বয়স্কা তা ঠিক, তবে আপনার চেয়ে আমার বয়স মুবারক বেশী।
অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার পুত্র হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, আপনি যান, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার ব্যবস্থা করুন। (তাবাকাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ইছাবা)
হিজরী ৪র্থ সনে পবিত্র ২৪ মাহে শাওওয়াল শরীফ এই মহাপবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছালী শান মুবারকের পরে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম যে দুঃখ-বেদনার শিকার হয়েছিলেন, এভাবে তা দূর হয়। খালিক, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার দুঃখকে অনন্তকালের জন্য আনন্দে রূপান্তর করে দেন।
বর্ণিত আছে যে, একবার সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার জওয মুকাররম, হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলেছিলেন, আমি শুনেছি, যদি কোন মহিলার আহাল মৃত্যুর পর জান্নাতে যায়, আর তার আহলিয়া দ্বিতীয় বিবাহ না করে, তাহলে মহান আল্লাহ পাক সে আহলিয়াকেও উনার আহালের সাথে জান্নাতে স্থান দান করবেন। এই অবস্থা পুরুষদের জন্যও যদি হয়, তাহলে আসুন আমরা অঙ্গীকার করি, আপনি আমার পরে আর কোন শাদী করবেন না, আর আমিও আপনার পরে আর কোন শাদী করব না। হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আপনি কি আমার কথা মানবেন? সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম বললেন, আপনার কথা মানা ছাড়া আমার আনন্দ আর কোথায়? হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি যদি আপনার আগে ইন্তিকাল করি, আপনি আবার শাদী করবেন। তারপর হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এভাবে দোয়া করলেন, আয় আল্লাহ পাক! আমার পরে আমার আহলিয়া উনাকে আমার চেয়েও উত্তম আহাল হাদিয়া করুন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম বলেন, যখন হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করলেন, তখন আমি মনে মনে বলতাম, হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চেয়ে উত্তম আহাল আর কে হতে পারেন? এর কিছুদিন পরেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। (তাবাকাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উপলক্ষে ঐতিহাসিকগণ একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, যেদিন তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফে তাশরীফ আনয়ন করেন, সেদিনই তিনি নিজ হাতে খাবার তৈরী করেন। এই নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার কয়েক মাস পূর্বেই সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল খ¦মিসাহ উম্মুল মাসাকীন আলাইহাস সালাম তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তাই সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল খ¦মিসাহ উম্মুল মাসাকীন আলাইহাস সালাম উনারই পবিত্র হুযরা শরীফে তাশরীফ আনয়ন করেন। পাক-শাক ও গৃহস্থালীর জিনিসপত্র আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম একটি কলস থেকে কিছু যব বের করেন এবং অন্য একটি পাত্র থেকে কিছু চর্বি বের করে একটি হাঁড়িতে চড়িয়ে দেন। তারপর যবগুলি যাঁতায় পিষে চর্বিতে মিশিয়ে এক প্রকার খাবার তৈরী করেন। তাই ছিল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনাদের ১ম দিনের পবিত্র খাদ্য মুবারক। (তাবাকাত, কানযুল উম্মাল)
হিজরী ৫ম সনে পবিত্র মদীনা শরীফের বিশ্বাসঘাতক ইহুদী গোত্র বনু কুরাইজার অবরোধের এক পর্যায়ে তাদের সাথে আলোচনার জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পাঠান। তাদের সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি হাতের ইঙ্গিতে তাদেরকে একথা বুঝিয়ে দেন যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে। কিন্তু তিনি এটাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গোপন ভবিষ্যদ্বানী প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে (এই ভবিষ্যদ্বানী হচ্ছে ইহুদীরা দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করতে রাজী হবে না, ফলে বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে বিচারক হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তাওরাত শরীফের আইন অনুযায়ী বিচারে তাদেরকে হত্যা করা হবে) মনে করে নিজে নিজে ভীষণ অনুতপ্ত হন। তারপর তিনি মসজিদের একটি খুঁটিতে নিজেকে বেঁধে ফেলেন। অনেকদিন পর্যন্ত তিনি নিজেকে এই অবস্থায় রাখেন। অতঃপর উনার তওবা কবুল হয়। সেদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র হুযরা শরীফে অবস্থান মুবারক করছিলেন। সকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত নূরুল মুত্বমাইন্নাহ মুবারক অর্থাৎ ঘুম থেকে জেগে মুচকি হাসি মুবারক প্রকাশ করছিলেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি তা দেখে বললেন, মহান আল্লাহ পাক আপনাকে সর্বদা হাসিতে রাখুন। এ সময় হাসির কারণ কি? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আবু লুবাবা উনার তওবা কবুল হয়েছে। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম এই খোশ-খবরটি শোনাবার অনুমতি চাইলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ, ইচ্ছা করলে আপনি শোনাতে পারেন। অনুমতি পেয়ে তিনি পবিত্র হুজরা শরীফের দরজায় দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বললেন, হে আবু লুবাবা! আপনাকে মুবারকবাদ! আপনার তওবা কবুল হয়েছে। এ আওয়াজ মানুষের কানে যেতেই পবিত্র মদীনা শরীফবাসী যেন খুশি প্রকাশ করেন। (সীরতে ইবনে হিশাম)
এই ঘটনা ছিল পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পূর্বে। সেই বছরই পর্দার আয়াত শরীফ নাযিল হয়।
হিজরী ৬১ সনে সংঘটিত কারবালার মর্মান্তিক ঘটনায় হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাহাদাত মুবারক উনার খবরে তিনি এতই চিন্তিত ও মর্মাহত হন যে, তিনি মুর্চ্ছিতা হয়ে পড়েছিলেন। (মসনদে আহমদ)
হিজরী ৬৩ সনে অনুষ্ঠিত হাররার হৃদয়-বিদারক ঘটনাও তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এ সময় উমাইয়া শাসকগণের নির্দেশে মদীনা শরীফে অভিযান চালিয়ে অনেক আলেম উলামাকে নৃশংসভাবে শহীদ করা হয়েছিল। নাউযুবিল্লাহ!
বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল উমাম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে তিনি সর্বশেষ বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম তিনি ব্যতীত অন্য সবার চেয়ে দীর্ঘায়ু লাভ করেন। হিজরী ৬৪ সনের সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আসইয়াদ, সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ পবিত্র মাহে রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার ৫ তারিখ, সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়াম শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সময় উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক হয়েছিলেন প্রায় ৯৩ বছর ১ মাস ১০ দিন।
উমাইয়া শাসকদের প্রতি বিরক্ত হয়ে তিনি ওছীয়ত করে যান যেন তৎকালীন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার উমাইয়া শাসকগণের তরফ থেকে নিযুক্ত গভর্নর ওলীদ বিন উতবা উনার জানাযার নামায না পড়ায়। সেই অনুযায়ী ওলীদ অরণ্যের দিকে চলে যায়। তখন হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার জানাযার নামায পড়ান। সুবহানাল্লাহ!
ফযীলত ও মর্যাদা মুবারক:
পবিত্র কুরআন শরীফে সমস্ত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অতুলনীয় ফাযায়িল ফযীলত মুবারক উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ উনার ৬ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক করা হয়-
ألنَّبِيُّ أوْلَى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أنْفُسِهِمْ وَ أزْوَاجُهُ أمُّهَاتُهُمْ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনদের নিকট নিজেদের জানের চেয়েও অধিক প্রিয় এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত মাতা আলাইহিন্নাস সালাম।
এই আয়াত শরীফের প্রেক্ষিতে উনারা হচ্ছেন أمَّهَاتُ الْمُؤْمِنِيْنَ (মু’মিনগণের মাতা) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন ছিলেন, এখন আছেন এবং ভবিষ্যতে থাকবেন উনাদের সকলেরই সম্মানিত মাতা। সুবহানাল্লাহ!
বুখারী শরীফে বর্ণনা এসেছে, হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সফর সঙ্গিনী ছিলেন। এই সন্ধির অনেক শর্তাবলী বাহ্যিকভাবে মুসলমানদের স্বার্থ বিরোধী ছিল। এ কারণে সাধারণভাবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম কাফিরদের উপর মনোক্ষুন্ন ছিলেন। উনারা সন্ধি শর্তগুলির পরিবর্তন কামনা করছিলেন। কিন্ত সন্ধির শর্ত অনুসারে যেহেতু কারোই পবিত্র মক্কা শরীফে যাওয়ার উপায় ছিল না, তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমভাবে ঘোষণা করে দেন, লোকেরা যেন হুদায়বিয়ায় নিজ নিজ আনিত পশুগুলি কুরবানী করে দেয়। পর পর তিন বার তিনি ঘোষণা দেন, কিন্তু ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মধ্যে নির্দেশ পালনের কোন লক্ষণ দেখা গেল না। তিনি এ ব্যাপারে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে পরামর্শ করলেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আপনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর অসন্তুষ্ট হবেন না। আপনি কাউকে কিছু না বলে বাইরে গিয়ে নিজের কুরবানী করুন এবং পবিত্র নূরুল হুদা মুবারক (মাথা মুবারকের) নূরুল ফাতাহ মুবারক (চুল মুবারক) মুন্ডন করুন এবং ইহরামের কাপড় খুলেন। উনার পরামর্শ অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাই করলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবার নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে, সন্ধির শর্ত কোন অবস্থাতেই পরিবর্তন হবে না। তাই উনারা সকলেই তৎক্ষণাৎ নিজ নিজ কুরবানী করে ইহরামের কাপড় খুলে ফেললেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার একটি পরামর্শ মুহূর্তের মধ্যে একটি কঠিন সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ পালনে অনীহা প্রকাশ করবেন অথবা আদেশ পালনে শিথিলতা করবেন, তা কল্পনাই করা যায় না। উনারা অপেক্ষা করছিলেন এই আশায় যে, হয়ত সন্ধির শর্ত পরিবর্তন হতে পারে, অথবা উনারা সে মূহূর্তের অপেক্ষায় ছিলেন, যেই মুহূর্তে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ কাজটি নিজে করবেন, সেই মুহূর্তে উনারাও তাই করবেন। ঘটনা তদ্রুপই হয়েছিল। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, আসাহহুস সিয়ার)
শিক্ষা দীক্ষায় তিনি ছিলেন বেমেছাল। পবিত্র হাদীছ শরীফ মুখস্ত রাখা ও স্মরণ শক্তির ব্যাপারে তিনি প্রায় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার অনুরূপ ছিলেন। অনেক ছাহাবী এবং শীর্ষ স্থানীয় তাবেয়ীগণ উনার নিকট থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। (তাবাকাত, ইছাবা)
পূর্ণ কুরআন শরীফ উনার মুখস্ত ছিল। তিনি বিশুদ্ধভাবে সুস্পষ্ট কন্ঠে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন এবং উনার উচ্চারণ পদ্ধতি ঠিক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উচ্চারণ পদ্ধতির অনুরূপ সুস্পষ্ট হতো। সুবহানাল্লাহ! (মসনদে আহমদ)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অত্যন্ত মুহব্বত করতেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কয়েকটি নূরুল ফাতাহ মুবারক (চুল মুবারক) তিনি নিজের নিকট বরকত স্বরূপ সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! উনার একটি রূপার পাত্র ছিল, তাতে তিনি উক্ত নূরুল ফাতাহ মুবারক সংরক্ষণ করেছিলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কেউ কোন দুঃখ-বেদনা পেলে এক পেয়ালা পানি এনে উনার সামনে রাখতেন, তিনি উক্ত নূরুল ফাতাহ মুবারক সেই পানিতে ডুবিয়ে দিতেন। সেই পবিত্র পানির বরকতে উনার সকল দুঃখ কষ্ট দূরিভূত হয়ে যেত। (আনসাবুল আশরাফ, ছাহাবিয়াত)
সূত্র সমূহ: উসুদুল গাবা, ইছাবা, বুখারী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, তাবাকাত, আনসাবুল আশরাফ, ছাহাবিয়াত, অন্যান্য সীরত গ্রন্থাবলী।
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনভী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন ঘুম বা বিশ্রামের জন্য সুন্নতী চকি
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
২৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ্ ছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, আত্বওয়ালু ইয়াদান, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ মুবারক
২০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, আত্বওয়ালু ইয়াদান, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ মুবারক
১৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, আত্বওয়ালু ইয়াদান, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ মুবারক
১১ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস্ সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
০৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)