সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

পবিত্র সূরা আরাফ শরীফ উনার ১০নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মানুষের মধ্যে খুব কমই মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।”

পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “অধিকাংশ মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করে না।”

আর পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ উনার ৩৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মানুষ অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ ও অন্যায়কারী।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মানুষ নামধারী কিছু পশ্বাধম যে কত কঠিন অন্যায়কারী ও অকৃতজ্ঞ হতে পারে তার নিকৃষ্ট নজির স্থাপিত হয়েছে- ৬১ হিজরী সনে পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনে, কারবালার মরু প্রান্তরে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পবিত্র কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনা শুনেন নাই- এমন মুসলমান কমই রয়েছে। তবে পবিত্র কারবালায় সংঘটিত ঘটনার নছীহত বুঝেছেন- এমন মুসলমানের সংখ্যাও বলতে গেলে খুবই কম। পবিত্র কারবালা প্রান্তরের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হক্ব মত-পথে অটল থাকার ক্ষেত্রে যে অনুপম দৃঢ়তা দেখিয়েছেন- তা ইতিহাসে বেমেছাল। একদিকে শিশু-নারীসহ উনার সাথে ছিলেন মাত্র ৭২-৮২ জন হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা। অপরদিকে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত কাট্টা কাফির, কমবখত, বদবখত ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহির বিশাল বাহিনী। সামান্য আপোস এক্ষেত্রে পবিত্র শাহাদাত শরীফ সংঘটনের কাহিনী ঘুরিয়ে দিতে পারতো, দিতে পারতো দুনিয়াবী সমৃদ্ধির অপার সুযোগ। কিন্তু নাহক্বের সাথে বিন্দুমাত্র আপোস করলেন না হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতিভূ সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শহীদে কারবালা, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। বিশাল নাহক্ব বাহিনীকে পরওয়া না করে হক্ব মত-পথে অটল থেকে পান করলেন পবিত্র শাহাদাত মুবারকের অমীয় পেয়ালা।

মূলত, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাহাদাতী শান মুবারকের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তিনি যালিম শাসক ইয়াযীদ সরকারের আনুগত্য মেনে না নেয়ার কারণে। তিনি ছিলেন হক্ব মত-পথের উপর বেমেছাল ইস্তিকামত। তবে উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিহাদ কোনো কাফির শাসকের বিরুদ্ধে ছিল না। উনার জিহাদ ছিল নামধারী মুসলিম শাসক- চরম অন্যায়কারী, নিকৃষ্ট, অকৃতজ্ঞ ইয়াযীদের বিরুদ্ধে।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি শহীদ করবে, তাকে জাহান্নামে আগুনের বাক্সে রাখা হবে। সমস্ত দুনিয়াবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জিন-ইনসানকে যত শাস্তি দেয়া হবে, ওই সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিকে এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! তার হাত এবং পাগুলো আগুনের শিকল দ্বারা শক্তভাবে বাঁধা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করা হবে। তার কঠিন দুর্গন্ধ থাকবে। সমস্ত জাহান্নামবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত লোক জাহান্নামে যাবে, তারা সকলেই সেই কঠিন পঁচা দুর্গন্ধ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।” (শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ ৫/৩১৪)

বলাবাহুল্য, যালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যের ও জিল্লতের পরিবর্তে নাজাতের মহিমায় ভাস্বর ঐতিহাসিক মহান দিবসের নাম- ‘পবিত্র আশূরা শরীফ’। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয় নাওয়াছা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাহাদাত মুবারকের স্মৃতিবিজড়িত কারবালার ঘটনা বাতিল ও গোমরাহ শাসকের বিরুদ্ধে হক্বের চিরন্তন জিহাদের অনবদ্য দৃষ্টান্ত। বিশাল শক্তিশালী বাতিলের বিরুদ্ধে স্বল্পসংখ্যক হলেও হক্ব মত-পথে অটল থেকে, উনার জিসম মুবারকে ২১টি তীর, ৩৪টি বর্শা এবং ৪০টি তলোয়ারের আঘাত গ্রহণ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রাণপ্রিয় নাওয়াছা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শাহাদাত মুবারক উনার মাক্বামকে সুউচ্চ করে মুসলিম ইতিহাসে অনন্তকালের জন্য অনবদ্য প্রেরণার উৎসরূপে উদ্দীপ্ত হয়ে আছেন। সুবহানাল্লাহ!

বলাবাহুল্য, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সে অনুপম আদর্শ মুবারক আজ সম্পূর্ণ ও সার্থকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছেন- যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল উমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্র্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার ও উনার সম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাঝে। সুবহানাল্লাহ!

আজকের প্রচ- দাপটশালী মিডিয়াকে অগ্রাহ্য করে উনারা পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী ছবি তোলার বিপক্ষে বলে যাচ্ছেন। যাবতীয় গোমরাহ শাসক তথা তন্ত্র-মন্ত্রের বিরুদ্ধে বলে যাচ্ছেন। ব্যাপক প্রাধান্য বিস্তারকারী সব উলামায়ে ‘সূ’দের বিরুদ্ধে একাই জিহাদ করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, মূলত উনিই নিচ্ছেন এবং আরো সামগ্রিকভাবে নিবেন শুহাদায়ে কারবালা উনার প্রতিশোধ। ইনশাআল্লাহ! তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, অতীতকাল থেকে বর্তমান অনৈসলামিক শাসকগোষ্ঠীও মূলত এক অর্থে ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহির পথেই চলছে। নাঊযুবিল্লাহ! ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহির কাছে সবচেয়ে বড় ও কাঙ্খিত তথা অনিবার্য বিষয় হয়ে উঠেছিল ‘ক্ষমতা’। তার কাছে সম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মূল্যায়নের বিষয়টি ছিল নিতান্ত অনুপস্থিত। নাঊযুবিল্লাহ!

মূলত, ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্তমান রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র অথবা গণতন্ত্রের গলদে পরিচালিত শাসকগোষ্ঠী কেউই সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজুন নুবুওওয়াহ উনার পথে পরিচালিত নয়। তাই তারা হয় স্বেচ্ছাচারী নতুবা স্বৈরাচারী অথবা যুগপৎভাবে স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী দুটোই। নাঊযুবিল্লাহ! বলাবাহুল্য, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এবং যারা শাসনক্ষমতার প্রত্যাশী- তারা কেউই এ ধারাবাহিকতার বাইরে নয়। তাই তারাও ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহির মতোই বর্তমান যামানার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মূল্যায়ন করতে পারছে না। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!

বিশেষ করে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উত্তরসূরি তথা বর্তমান যামানায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর এবং ক্বায়িম-মাক্বাম, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনারও মূল্যায়ন করতে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী সম্পূর্ণই ব্যর্থ হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! উনার সম্পর্কে জানতে, উনার সম্পর্কে উপলব্ধি করতে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী পুরোই অথর্বতা প্রকাশ করছে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! উনার পরামর্শ মুতাবিক চলতেও তারা অক্ষমতা প্রদর্শন করছে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! উনার দোয়া মুবারক লাভ করতেও তারা উদাসীন থাকছে। এবং ফলশ্রুতিতে কামিয়াব হতেও তারা ব্যর্থ হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!

কাজেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে মুসলমান হিসেবে আমাদের সবাইকে তওবা করতে হবে।

ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্র্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)