আল ইহসান ডেস্ক:

পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদে অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ উনার সম্মানে ৪ দিনব্যাপী আনজুমান তালিমী মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল ১ম দিন বাদ ইশা মহান মুর্শিদে আযম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি কূল-কায়িনাতের সকলের উদ্দেশ্যে নছীহত মুবারক পেশ করেন।

সাইয়িদ্যুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মুরীদ হবার পরও যারা কথা শুনে না, যিকির আযকার করে না, তারা কিভাবে মুহব্বত মারিফাত হাসিল করবে। যিকির আযকার ছাড়া কোন উপায় নাই। জাহেরী যত ইলম থাকুক না কেনো যিকির আযকার করে ক্বলব ইঁলাহ না করলে কোনই লাভ নাই। যিকির করে সুলতানুল আযকার পর্যন্ত পৌঁছাতেই হবে। দশ লতিফা পুরো শরীরে জারী করা হলে মাথার তালু হতে পায়ের তলা পর্যন্ত শরীরের রগ রেশায় সব জায়গায় যিকির জারী হবে। এটাই সুলতানুল আযকার যিকির এর প্রথম স্তর। এতটুকু যিকির জারী করা সকলের জন্যই ফরজে আইন। ইলমে ফিকাহর মাসয়ালা মাসায়েল শিখার সাথে সাথে যিকির আযকার তরতীব মতো করতে হবে। ইলমে ফিকাহ ছাড়া ইলমে তাসাউফ হলো নিমকহীন খাদ্যের মতো। আর ইলমে তাসাউফ ছাড়া ইলমে ফিকাহ শিখলে ফাসেক নাফরমান হয়ে থাকতে হবে।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ যিকির করতে করতে একজন লোক ওলীআল্লাহ হয়ে যায়। যিকির আযকার না করলে কেউ কখনো ওলীআল্লাহ হতে পারবেনা। ইলমে তাসাউফের ফরজ পরিমাণ যিকির অবশ্যই সবাইকে করতে হবে। পৃথিবীর কোন কিতাবেই লেখা নেই কতটুকু পরিমাণ যিকির আযকার করা সবার জন্য ফরজ। সুলতানুল আযকারের প্রথম স্তর পর্যন্ত যিকির আযকার করে ইখলাস হাসিল করাই সকলের জন্য ফরজে আইন। কারণ ইখলাস ছাড়া কোন আমল ইবাদত বন্দেগী কোনটাই কবুল করা হবে না।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মানুষের এখন ঘর সংসার করতে করতেই জিন্দেগী শেষ করে দিচ্ছে। সারাদিন দুনিয়া আর দুনিয়া। চাকরী ব্যবসা খেত খামারসহ সারাদিন দুনিয়ার ফিকিরে থাকা হয়। কাট্টা দুনিয়াদারীকেই মানুষ এখন বেছে নিয়েছে। ওলীআল্লাহ উনারে ছোহবত মুবারক বা দিয়ে দুনিয়াদার ফাসিক ফুজ্জারদের বদ সোহবতেই সারাদিন কাটানো হয়। মনে রাখতে হবে, চাকরী ব্যবসা, খেত খামার করতে গিয়ে যদি দ্বীনদারী কাজের কোন ব্যাঘাত ঘটে তাহলে বুঝতে হবে সে দুনিয়াদার। আর এসব করতে গিয়েও যদি তার দ্বীনদারী ঠিক থাকে তাহলে সে হলো দ্বীনদার। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগন উনারা নিজেদের জানমাল কুরবানী করে দ্বীনদারী সব কাজে আনজাম দিয়েছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সোহবত মুবারক উনার বরকতেই উনারা সবকিছু হাসিল করেছেন। সবাইকে মনে রাখতে হবে, ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ হাসিল করা ছাড়া কখনোই তাকমীলে পৌঁছা যাবে না। কখনোই মুমিনে কামিল হওয়া যায় না। এই ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ পাবার জন্যই মুরশিদে কামিল আলাইহিস সালাম উনার নিকট বায়াত মুবারক গ্রহণ করে সবক নিয়ে যিকির আযকার করতে হয়, সোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে হয়।

সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, প্রত্যেকেই তার মাক্বাম থেকেই কথা বলে। যে যতটুকু ইলমে তাসাউফ হাসিল করবে সে ততটুকু মাক্বাম হতেই কথা বলবে। মক্তবের ছাত্রকে তাফসীর পড়ানো হলে সেতো তাফসীরের কিছুই বুঝবে না। এজন্য শুরু থেকেই যিকির আযকার করে যার যার পরকালের ঘরটাকে ঠিক করা উচিত। নতুবা চোখ বন্ধ হলে সব শুন্য হয়ে যাবে। নেকীর পাল্লা শুন্য দেখাবে আর বদীর পাল্লা ভারী দেখাবে। যিকির হতে ফিকির আসে। বিষয়গুলো সবার ফিকির করতে হবে। চিরন্তন সত্য কথা হলো- বান্দা হলে মহান আল্লাহ পাক উনাকে মানতেই হবে। উম্মত হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমস্ত কথা মুবারক মানতেই হবে কোন চু চেরা করা যাবে না। কোন কামিল মুরশিদ আলাইহিস সালাম উনার মুরীদ হলে উনার সমস্ত আদেশ নিষেধ মানতেই হবে, কোন চু চেরা করা যাবে না। সন্তান হলে পিতা মাতার সব শরীয়তসম্মত কথা মানতেই হবে। কেউ কারো আহালিয়া হলে তাকে তার আহালের কথা শুনতেই হবে, মানতেই হবে। এগুলো হচ্ছে ফরজে আইন বিষয়। এসব বিষয়ে চু-চেরা করলে ঈমান বরবাদ হয়ে যাবে। যখন যা আদেশ নিষেধ করা হয় তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। তাহলেই ইহ পরকালে কামিয়াবী হাসিল করা যাবে।