সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (২৮)
, ০৮ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৯ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ০৫ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
প্রকৃত বিদয়াতী দাজ্জালে কাযযাবদের আরেকটি মিথ্যাচার হলো: তারা বলে থাকে যে, হযরত ইমামে আ’যম ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত হলো, সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ এবং রোযা রাখা হবে। নাউযুবিল্লাহ!
ধারাবাহিক আলোচনা.........
হযরত ইমাম হুসামুদ্দীন শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
صام أهل بلدة الرؤية ثلثين يوما وبلدة أخرى تسعة وعشرين يوما فعلم من صام تسعة وعشرين يوما فعليهم قضاء يوم لأن الذين صاموا ثلثين يوما رأوا هلال رمضان قبلهم بليلة والعمل بقول من رأى لا بقول من لم ير هذا إذا كان بين البلدتبين تقارب بحيث لا تختلف المطالع وإن كانت تختلف لا يلزم أهل أحد من البلدتين حكم الآخر
অর্থাৎ কোন শহরের অধিবাসীরা যদি চাঁদ দেখে ত্রিশ দিন রোযা রাখে, আর অন্য শহরের অধিবাসীরা উনত্রিশ দিন রোযা রাখে, অতঃপর উনত্রিশ রোযা আদায়কারীগণ তা জানতে পারে। তাহলে তাদেরকে একটি রোযা কাযা করতে হবে। কারণ যারা ত্রিশ রোযা রেখেছে তারা একরাত আগে চাঁদ দেখেছে। আর আমল তো তাদের কথা অনুসারেই হওয়া চাই যারা (চাঁদ) দেখেছে। তাদের কথা অনুসারে নয় যারা দেখেনি। এ (হুকুম) ঐ ক্ষেত্রে যখন দুই শহর কাছাকাছি হয়, এদের উদয়স্থল আলাদা না হয়। উদয়স্থল আলাদা হলে কোনো শহরের হুকুম অন্য শহরের জন্য অবশ্য অনুসরণীয় হবে না। (আলফাতাওয়াল কুবরা পৃষ্ঠা ১৬)
হযরত ইমাম ওয়ালওয়ালিজি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
هذا إذا كان بين البلدتين تفاوت بحيث لا تختلف المطالع فإن كانت تختلف لا يلزم أحد البلدين حكم الآخر
অর্থাৎ, এ হুকুম এমন দুই শহরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যে দুই শহরের উদয়স্থল ভিন্ন নয়। যদি উদয়স্থল ভিন্ন হয়, তাহলে এক শহরের হুকুম অপর শহরের উপর প্রযোজ্য হবে না। (আল ফাতাওয়া ওয়াল ওয়ালিজিয়্যাহ ১/২৩৬)
আরো বর্ণিত রয়েছে-
وَذَكَرَ فِي الْفَتَاوَى الْحُسَامِيَّةِ إِذَا صَامَ أَهْلُ مِصْرٍ ثَلَاثِينَ يَوْمًا بِرُؤْيَةٍ وَأَهْلُ مِصْرٍ آخَرَ تِسْعَةً وَعِشْرِينَ يَوْمًا بِرُؤْيَةٍ فَعَلَيْهِمْ قَضَاءُ يَوْمٍ، إِنْ كَانَ بَيْنَ الْمِصْرَيْنِ قُرْبٌ بِحَيْثُ تَتَّحِدُ الْمَطَالِعُ وَإِنْ كَانَتْ بَعِيدَةً بِحَيْثُ تَخْتَلِفُ لَا يَلْزَمُ أَحَدَ الْمِصْرَيْنَ حُكْمُ الْآخَرِ.
অর্থাৎ কোন শহরের অধিবাসীরা যদি চাঁদ দেখে ত্রিশ দিন রোযা রাখে, আর অন্য শহরের অধিবাসীরা উনত্রিশ দিন রোযা রাখে, অতঃপর উনত্রিশ রোযা আদায়কারীগণ তা জানতে পারে। তাহলে তাদেরকে একটি রোযা কাযা করতে হবে। এ (হুকুম) ঐ ক্ষেত্রে যদি শহর দুটি পরস্পর নিকটবর্তী হয় এবং একই মাতলা’ তথা একই উদয়স্থলভুক্ত অঞ্চল হয়। আর যদি দূরবর্তী অঞ্চল হয় এবং ভিন্ন উদয়স্থলভুক্ত অঞ্চল হয়, তাহলে এক শহরের হুকুম অন্য শহরের জন্য অবশ্য অনুসরণীয় হবে না। (আল ইখতিয়ারু লি তা’লীলিল মুখতার ১/১২৯)
فَقَدْ قَال الْحَنَفِيَّةُ فِي هَذِهِ الْحَالَةِ بِأَنَّهُ لِكُل بَلَدٍ رُؤْيَتُهُمْ وَأَوْجَبُوا عَلَى الأمْصَارِ الْقَرِيبَةِ اتِّبَاعَ بَعْضِهَا بَعْضًا، وَأَلْزَمُوا أَهْل الْمِصْرِ الْقَرِيبِ فِي حَالَةِ اخْتِلاَفِهِمْ مَعَ مِصْرٍ قَرِيبٍ مِنْهُمْ بِصِيَامِهِمْ تِسْعَةً وَعِشْرِينَ وَصِيَامِ الآْخَرِينَ ثَلاَثِينَ اعْتِمَادًا عَلَى الرُّؤْيَةِ أَوْ إِتْمَامَ شَعْبَانَ ثَلاَثِينَ أَنْ يَقْضُوا الْيَوْمَ الَّذِي أَفْطَرُوهُ
অর্থ: এই অবস্থার সমাধানে হানাফীগণ বলেন, নিশ্চয়ই প্রত্যেক শহরে নতুন চাঁদ দেখার ভিন্নতা রয়েছে। নিকটবর্তী শহরসমূহ এ ক্ষেত্রে একে অন্য শহরের অনুসরণ করা কর্তব্য এবং যে শহরে চাঁদ দেখা গেছে উক্ত শহরের রোযা রাখার সাথে ত্রিশ দিন পূর্ণ করা কর্তব্য। যদি নিকটবর্তী শহরের লোকেরা উনত্রিশ দিন রোযা পূর্ণ করে থাকে। (আল মাওসূয়াতুল ফিক্বহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ ২২/৩৫)
চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












