ঘটনা থেকে শিক্ষা
হাক্বীক্বী মৃত্যুকে স্মরণ করার মধ্যেই শহীদী দরজা মিলে
, ০২ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৪ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১৩ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২৯ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
এক এলাকায় এক বুযূর্গ ব্যক্তি, মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী ছিলেন। সেই দেশের যে বাদশাহ ছিল, সে উক্ত বুযূর্গ ব্যক্তির মুরীদ ছিল। তিনি নছীহত করতেন, তা’লীম দিতেন। বাদশাহও প্রায় সময় সেই ওলীআল্লাহর খানক্বা শরীফে আসতো। এসে নছীহত হাছিল করে তা’লীম নিয়ে যেত। একদিন সেই মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী, বুযুর্গ ব্যক্তি তিনি নছীহত করলেন যে, মানুষের অন্তরের মধ্যে দুনিয়ার মুহব্বত বেশী। মানুষ দুনিয়াতে গরক (মশগুল) থাকার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে গাফিল থাকে। তবে কোন ব্যক্তি যদি মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করতে পারে, তাহলে তার অন্তর থেকে দুনিয়ার মুহব্বত দূর হয়ে যাবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে- মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “কোন ব্যক্তি যদি প্রতিদিন ২০ বার মৃত্যুর কথা স্মরণ করে, তাহলে তাকে শহীদী দরজা দেয়া হবে। তাহলে তার অন্তর থেকে মূলতঃ দুনিয়ার মুহব্বতও দূর হয়ে যাবে। ” সেই বুযূর্গ ওলী তিনি নছীহত করলেন। বাদশাহ সেটা শুনলো, শুনে মনে মনে চিন্তা করলো- যেহেতু বাদশাহ সবসময় বাদশাহী কাজে মশগুল থাকে, তার অন্তরে দুনিয়ার মুহব্বত বেশী হওয়াটা স্বাভাবিক। বাদশাহ তার বাড়ীতে চলে গেল, কিছুদিন পর আবার আসলো সেই বুযূর্গ ব্যক্তির সাক্ষাতে। এসে জানালো, হুযূর! আমি একটা তছবীহ তৈরী করেছি। তার দানা হচ্ছে এক হাজারটা। অর্থাৎ এক হাজার দানার আমি একটা তছবীহ তৈরী করেছি। আপনি যেহেতু বলেছেন, প্রতিদিন ২০ বার মৃত্যুর কথা স্মরণ করলে শহীদী দরজা পাওয়া যায় এবং অন্তর থেকে মৃত্যুকে স্মরণ করলে অন্তর থেকে দুনিয়ার মুহব্বত দূর হয়ে যায়।
যেটা মূলতঃ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। আমি সেটা শুনে এক হাজার দানার একটা তছবীহ তৈরী করেছি। প্রতিদিন আমি এক হাজার বার মৃত্যুর কথা স্মরণ করে থাকি। যখন বাদশাহ এই কথা বললো, সেই বুযূর্গ ব্যক্তি কিছু বললেন না। বললেন খুব ভাল হয়েছে। বলে তিনি উনার নছীহত করলেন। বাদশাহও ইতমিনানের মধ্যে রয়েছে। সে মৃত্যুকে স্মরণ করতেছে। হয়ত তার অন্তর থেকে দুনিয়ার মুহব্বত দূর হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। বাদশাহ চলে গেল। হঠাৎ একদিন সেই বুযূর্গ ব্যক্তি উনার মুরিদ বাদশাহর দরবারে গিয়ে উপস্থিত হলেন। যেহেতু তিনি পূর্বে কোনদিন যাননি সেখানে। দাওয়াত ছাড়া বিনা কথা বিনা বলায় তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে গেলেন। বাদশাহ দেখেতো আশ্চর্য্য হয়ে গেল। যেহেতু বাদশাহর পাশে কোন আসন ছিলনা বসার মত। বাদশাহ একাই আসনে বসা ছিল, আর সকলেই নীচে বসা ছিল। এখন বাদশাহ কি করবে? অস্থির হয়ে তাড়াতাড়ি বাদশাহ সেই বুযূর্গ ব্যক্তি উনাকে তার আসনে বসিয়ে দিল এবং সে নিজে নীচে বসলো। যখন সে নীচে বসলো, তখন সেই মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী তিনি বললেন, হে বাদশাহ! তোমার দেশে তো নিয়ম রয়েছে, যে এই গদীতে বসবে তার কথামত দেশ চলবে। বাদশাহ বললো, হ্যাঁ। তখন সেই বুযূর্গ ব্যক্তি বললেন যে, আমি যেহেতু এখন আসনে বসেছি, এখন কি আমার কথামত চলবে? বাদশাহ বললো, জি হুযূর! অবশ্যই আপনি যা আদেশ করবেন সেটাই এখন পালন করা হবে। তখন সেই বুযূর্গ ব্যক্তি বললেন, এক কাজ করো, জল্লাদকে ডেকে নিয়ে আসো। জল্লাদকে ডাকা হলো। জল্লাদ আসলো। তখনো কেউ ব্যাপারটা কিছু বুঝতে পারলো না। যখন জল্লাদকে আনা হলো, তখন সেই মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী তিনি বললেন যে- এখন আমি যা আদেশ করবো, সেটা কি পালন করা হবে? জি, আপনি যা বলবেন, সেটাই তামিল করা হবে। তিনি বললেন, তাহলে এক কাজ করো হে জল্লাদ! তুমি বাদশাহকে রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধো, বাদশাহকে মৃত্যুদ- দেয়া হবে। যখন একথা বলা হলো, জল্লাদ বাদশাহকে বাঁধলো। সমস্ত উজীর-নাজীর যারা ছিল, তারাতো চিন্তা-পেরেশানীর মধ্যে পড়ে গেল। কি ব্যাপার হলো? আমরা জানি, তিনি বুযূর্গ মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী। তিনি এখানে আসলেন, বাদশাহকে বাঁধালেন, কি ব্যাপার? এবং বাদশাহকে মৃত্যুদ- দিয়ে তিনি কি রাজত্ব দখল করবেন? এই কি উনার খেয়াল অন্তরে? নানান চু-চেরা, কিল ও কাল তাদের মনে চলতে থাকলো। বাদশাহর মনেও নানান চিন্তা-ফিকির। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী, বুযূর্গ। তিনি কেন আমাকে বাঁধলেন আর কেনই বা আমাকে মৃত্যুদ- দিবেন। এদিকে সেই বুযূর্গ ব্যক্তি ঘোষণা করলেন, জল্লাদ! তুমি তরবারী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো। আমি ১ থেকে ২০ পর্যন্ত গণনা করবো। যখন আমার গোনা শেষ হয়ে যাবে, তখন তুমি বাদশাহর গর্দানে তরবারী চালিয়ে দিবে এবং তার পূর্বে কখনো করবেনা। ২০ না গোনা পর্যন্ত তরবারী তুমি চালাবে না।
জল্লাদ বললো, ঠিক আছে। সেই মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী তিনি গণনা শুরু করলেন আস্তে আস্তে। এক, দুই এরকম করে তিনি আস্তে আস্তে গোনতে লাগলেন। ১২-১৪ হয়ে গেল, মানুষতো অস্থির হয়ে গেল। বাদশাহর যেহেতু স্বাস্থ্য ভাল। বাদশাহর শরীর ঘেমে সমস্ত দরবার ভিজে গেল। সেখানে যা ছিল- বিছানাপত্র, কার্পেট সব ভিজে গেল। বাদশাহ অস্থির হয়ে গেল। যখন পনের-ষোলতে গোনা হলো, তখন বাদশাহ বেহুশ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হলো। তখন সেই মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী তিনি বললেন জল্লাদকে যে, তোমার তরবারী নিয়ে তুমি চলে যাও। সকলে সস্থির নিঃশ্বাস ফেললো। তখন বাদশাহর যারা খাছ খাদেম ছিল, তাদেরকে ডাকা হলো। ডেকে বলা হলো তোমরা এদিকে আসো। বাদশাহকে নিয়ে যাও। দৈনিক তোমরা বাদশাহকে যেভাবে তা’যীম-তাক্বরীমের সাথে গোসল করিয়ে থাকো শাহী কায়দায়, ঠিক আজকে সেই শাহী কায়দায় তোমরা গোসল করিয়ে আনো। নির্দেশ মুতাবেক খাদেমরা নিয়ে গেল বাদশাহকে। শাহী কায়দায় গোসল করায়ে, আতর-গোলাপ মেখে, নতুন কাপড় পরায়ে, আর দরবারে যা ভিজে গিয়েছিল সেগুলি মুছে পরিস্কার করে নতুন বিছানা দিয়ে আবার বাদশাহকে এনে বসানো হলো। মানুষ তো সব চিন্তার মধ্যে রয়ে গেল, কি ব্যাপার হচ্ছে। এরমধ্যে যখন এসে পৌঁছলো, তখন সেই বুযূর্গ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, “বাদশাহ! তুমি কি এখন বলতে পারবে, তোমার কেমন মনে হয়েছিল?” বাদশাহ বললো যে, হুযূর! এটা বলার মত নয় যে কি অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছিলাম, এটা বলার ভাষা আমার নেই। তখন সেই মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী বললেন, “তোমার রাজত্ব আমি দখল করতে আসিনি। এর চাইতে অনেক বড় রাজত্ব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে দান করেছেন। আমি শুধু এসেছিলাম, তুমি আমাকে বলেছিলে- তুমি এক হাজার দানার একটা তছবীহ তৈরী করেছো, প্রতিদিন তো মৃত্যুকে এক হাজারবার স্মরণ করে থাকো, তোমার এটা যেহেতু শুদ্ধ নয়, তোমাকে বাস্তবভাবে যদি আমি না বুঝিয়ে দেই, তুমি সেটা বুঝতে পারবে না। সেটা বুঝাবার জন্য আমি এসেছিলাম। আজকে তুমি যেভাবে মৃত্যুকে স্মরণ করলে, ঠিক এ রকমভাবে যদি কেউ ২০ বার মৃত্যুকে স্মরণ করতে পারে, তাহলে যেমন শহীদী দরজা সে পাবে, তদ্রুপ তার অন্তর থেকে দুনিয়ার মুহব্বতও দূর হয়ে যাবে। ” সুবহানাল্লাহ!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩১)
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র কুরবানী ও কুরবানীদাতার ফযীলত (২)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৮)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জীবানু অস্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদীদের জাতি নিধনের ষড়যন্ত্র (২)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ত্বাহারাতের ইস্তিব্রা ও ইস্তিন্ক্বার আহকাম
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৭)
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আত তাক্বউইমুশ শামসী”একটি নতুন সৌর সন (২)
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদেরকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৬)
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৫)
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)