হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৬)
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
, ২৭ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৫ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৮ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) আইন ও জিহাদ
ইয়াযীদ বাহিনীর তা-বলীলা:
১. খুন-হত্যা: ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির নির্দেশে ইবনে উক্ববা লা’নাতুল্লাহি আলাইহি ৪২ হাজার সৈন্য নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ আক্রমন করে এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনাকে ৩ দিনের জন্য হালাল ঘোষণা করে। না‘ঊযুবিল্লাহ! এ সময় ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির বাহিনী শিশু এবং মহিলা ব্যতীত সর্বমোট ১২,৪৯৭ জন পবিত্র মদীনা শরীফবাসী উনাদেরকে শহীদ করে। না‘ঊযুবিল্লাহ! উনাদের মধ্যে হযরত মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম এবং বিশিষ্ট হযরত তাবেয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা মিলে ছিলেন ১৭০০ জন, সাধারণ লোক ছিলেন ১০০০০ জন, হাফিযে কুরআন ছিলেন ৭০০ জন এবং কুরাইশ ছিলেন ৯৭ জন। (জযবুল কুলূব) কেউ কেউ এর চেয়ে বেশিও বলেছেন। যেমন হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
قُتِلَ يَوْمَ الْحَرَّةِ سَبْعُمِائَةِ رَجُلٍ مِّنْ حَمَلَةِ الْقُراٰنِ مِنْهُمْ ثَلَاثِمِائَةٍ مِّنَ الصَّحَابَةِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمْ
অর্থ: “হাররার দিন ৭০০ হাফিযে কুরআন উনাদেরকে শহীদ করা হয়। উনাদের মধ্যে ৩০০ জন ছিলেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। ” না‘ঊযুবিল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ্ ৩/১৩৬, শরহুয যারক্বানী ১০/১৪১)
হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
قُلْتُ يَوْمَ الْحَرَّةِ قُتِلَ فِيْهِ مِنَ الْاَنْصَارِ مَنْ لَّا يُحْصٰى عَدَدُهٗ وَنُهِبَتِ الْمَدِيْنَةُ الشَّرِيْفَةُ وَبُذِلَ فِيْهَا السَّيْفُ ثَلَاثَةَ اَيَّامٍ
অর্থ: “আমি বলি- হাররার দিন হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের মধ্য থেকে অসংখ্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে শহীদ করা হয়েছে, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ব্যাপক লুটপাট করা হয়েছে এবং সেখানে একাধারে ৩ দিন তরবারী চালানো হয়েছে। ” না‘ঊযুবিল্লাহ! (ফাতহুল বারী ৩/১৭৭)
এছাড়াও ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির বাহিনী সমস্ত প্রকার অত্যাচার, অনাচার ও ধৃষ্টতাপূর্ণ অপকর্মে লিপ্ত হয় এবং ব্যভিচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করতেও তারা বিরত থাকেনি। না‘ঊযুবিল্লাহ!
২. ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া ও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অবমাননা করা: হযরত আব্দুল মালিক ইবনে হুসাইন ইবনে আব্দুল মালিক শাফিয়ী আছিমী মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ১১১১ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন-
وَافْتَضَّ فِيْهَا اَلْفُ عَذْرَاءَ وَاِنَّ مُفْتَضَّهَا فَعَلَ ذٰلِك اَمَامَ الْوَجْهِ الشَّرِيْفِ وَالْتَمَسَ مَا يَمْسَحُ بِهِ الدَّمَ فَلَمْ يَجِدْ فَفَتَحَ مُصْحَفًا قَرِيْبًا مِّنْهُ ثُمَّ اَخَذَ مِنْ اَوْرَاقِهٖ وَرَقَةً فَتَمَسَّحَ بِهَا نَعُوْذُ بِاللهِ مَا هٰذَا اِلَّا صَرِيْحَ الْكُفْرِ وَانْتَنَهٗ
অর্থ: “তখন সেখানে ১ হাজার কুমারী মেয়ে উনাদের কুমারীত্ব নষ্ট করা হয়। না‘ঊযুবিল্লাহ! নিশ্চয়ই কুমারিত্ব নষ্টকারীরা পবিত্র রওযা শরীফ, মসজিদে নববী শরীফ উনার সামনে ঐ জঘন্য কাজ করে। রক্ত মুছার জন্য কিছু খুঁজে না পেয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ খুলে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পাতা দিয়ে রক্ত মুছেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! নিঃসন্দেহে এটা সুস্পষ্ট কুফরী। আর পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনাকে নষ্ট ও দূর্গন্ধময় করেছে। ” না‘ঊযুবিল্লাহ! (সিমতুন নুজূম ৩/২০৪)
ইয়াযীদ বাহিনীর ব্যভিচারের কারণে এক হাজার অবৈধ সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। না‘ঊযুবিল্লাহ! অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ১০ হাজার অবৈধ সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাযকিরাতুল খাওয়াছ)
৩. পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ ও পবিত্র রওযা শরীফ উনাদের অবমাননা: ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির বাহিনী পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার অমার্জনীয় অবমাননা করে। এই স্থান মুবারক উনাকে তারা ঘোড়ার আস্তাবলে পরিণত করে। না‘ঊযুবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত রওযা শরীফ এবং মিম্বর শরীফ উনাদের মধ্যবর্তী স্থান মুবারক ঘোড়ার মলমূত্র দ্বারা কলুষিত করে। না‘ঊযুবিল্লাহ! (জযবুল কুলূব)
আল্লামা হযরত সামহূদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ আরো অনেকে লিখেন-
وَجَالَتِ الْخُيُوْلُ فِىْ مَسْجِدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبَالَتْ وَرَاثَتْ بَيْنَ الْقَبْرِ وَالْمِنْۢبَرِ
অর্থ: “পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে ঘোড়াগুলো ঘুরে বেড়িয়েছিলো আর মহাসম্মানিত রওযা শরীফ এবং মিম্বর শরীফ উনাদের মধ্যবর্তী স্থান রওদ্বতুম মির রিয়াদ্বিল জান্নাহ্ মুবারক উনার মধ্যে মলমূত্র ত্যাগ করেছিলো। ” না‘ঊযুবিল্লাহ! (খুলাছাতুল ওয়াফা ১/২৯০) (চলবে)
-আল্লামা মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৭)
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৫)
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
২৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৪)
২৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৫)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৪)
১৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৩)
১৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (২৩)
১২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরীমূলক কাজের ফিরিস্তি (৩)
১০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (২)
০৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (২২)
০৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)