হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৩য় পর্ব)
, ০৫ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ১ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ১৭ আষাঢ়, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আইন ও জিহাদ
ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র মদীনা শরীফবাসী উনাদের ব্যাপারে বলে-
لَيْسَ لَـهُمْ اِلَّا هٰذَا الْغَشْمَةُ وَاللهِ لَاَقْـتُـلَـنَّـهُمْ
অর্থ: “উনাদের জন্য শুধু ঐ যালিমটিরই (ইবনে উক্ববা লা’নাতুল্লাহি আলাইহিরই) প্রয়োজন। নাঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি অবশ্যই অবশ্যই উনাদেরকে শহীদ করবো। ” নাঊযুবিল্লাহ! (বিদায়াহ্-নিহায়াহ্ ৮/২৩৯)
ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি ইবনে উক্ববা লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে বলে, ‘যদি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হও এবং বায়াত গ্রহণে পবিত্র মদীনা শরীফবাসী উনারা রাজি না হন, তাহলে তুমি ছোট-বড় নির্বিশেষে সকলকে শহীদ করবে। ৩ দিন পর্যন্ত এই কাজ চালিয়ে যাবে। কাউকে বাদ দেবে না। আর উনাদের ধন-সম্পদ লুটপাট করে নিবে। ’ নাঊযুবিল্লাহ! (জযবুল কুলূব)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘যদি তুমি উনাদের উপর বিজয় লাভ করো, তাহলে পবিত্র মদীনা শরীফ উনাকে ৩ দিন হালাল ঘোষণা করবে। ’ নাঊযুবিল্লাহ! (বিদায়াহ্-নিহায়াহ্ ৮/২৩৯)
আল্লামা যারক্বানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
فَـبَـعَثَ اِلَـيْهِمْ عَسْكَـرًا عِدَّتُهٗ سَبْـعَةٌ وَّعِشْرُوْنَ اَلْفَ فَارِسٍ وَخَـمْسَةُ عَشَرَ اَلْفَ رَاجِلٍ
অর্থ: “তারপর ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র মদীনা শরীফবাসী উনাদের বিরুদ্ধে ২৭ হাজার অশ্বারোহী এবং ১৫ হাজার পদাতিক বাহিনী (মোট ৪২ হাজার সৈন্য) প্রেরণ করে। ” নাঊযুবিল্লাহ! (শারহুয যারক্বানী ১০/১৪২)
আর ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি প্রত্যেক সৈন্যকে ১০০ দীনার করে উপহার প্রদান করে। নাঊযুবিল্লাহ! (বিদায়াহ্-নিহায়াহ্ ৮/২৩৯)
ইয়াযীদ বাহিনীর তা-বলীলা:
১. খুন-হত্যা: ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির নির্দেশে ইবনে উক্ববা লা’নাতুল্লাহি আলাইহি ৪২ হাজার সৈন্য নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ আক্রমন করে এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনাকে ৩ দিনের জন্য হালাল ঘোষণা করে। নাঊযুবিল্লাহ! এ সময় ইয়াযীদ বাহিনী শিশু এবং মহিলা ব্যতীত সর্বমোট ১২,৪৯৭ জন পবিত্র মদীনা শরীফবাসী উনাদেরকে শহীদ করে। নাঊযুবিল্লাহ!
উনাদের মধ্যে হযরত মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত তাবেয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম ও আলিম-উলামা মিলে ছিলেন ১৭০০ জন, সাধারণ লোক ছিলেন ১০০০০ জন, হাফিযে কুরআন ছিলেন ৭০০ জন এবং কুরাইশ ছিলেন ৯৭ জন। (জযবুল কুলূব)
কেউ কেউ এর চেয়ে বেশিও বলেছেন। হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
قُتِلَ يَوْمَ الْحَرَّةِ سَبْعُمِائَةِ رَجُلٍ مِّنْ حَمَلَةِ الْقُراٰنِ مِنْهُمْ ثَلَاثِمِائَةٍ مِّنَ الصَّحَابَةِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمْ
অর্থ: “হাররার দিন ৭০০ হাফিযে কুরআন উনাদেরকে শহীদ করা হয়। উনাদের মধ্যে ৩০০ জন ছিলেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। ” নাঊযুবিল্লাহ! (শরহুয যারক্বানী ১০/১৪১)
হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
قُـلْتُ يَـوْمَ الْـحَرَّةِ قُتِلَ فِيْهِ مِنَ الْاَنْصَارِ مَنْ لَّا يُـحْصٰى عَدَدُهٗ وَنُـهِبَتِ الْمَدِيْـنَةُ الشَّرِيْـفَةُ وَبُذِلَ فِـيْـهَا السَّيْفُ ثَلَاثَةَ اَيَّامٍ
অর্থ: “আমি বলি- হাররার দিন হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্য থেকে অসংখ্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে শহীদ করা হয়েছে, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ব্যাপক লুটপাট করা হয়েছে এবং সেখানে ৩ দিন তরবারী চালানো হয়েছে। ” নাঊযুবিল্লাহ! (ফাতহুল বারী লি ইবনে হাজার ৩/১৭৭)
এছাড়াও ইয়াযীদ বাহিনী সমস্ত প্রকার অত্যাচার, অনাচার ও ধৃষ্টতাপূর্ণ অপকর্মে লিপ্ত হয় এবং ব্যভিচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করতেও তারা বিরত থাকেনি। নাঊযুবিল্লাহ!
২. ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া ও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অবমাননা করা: হযরত আব্দুল মালিক ইবনে হুসাইন ইবনে আব্দুল মালিক শাফিয়ী আছিমী মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ১১১১ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন-
وَافْـتَضَّ فِـيْـهَا اَلْفُ عَذْرَاءَ وَاِنَّ مُفْتَضَّهَا فَـعَلَ ذٰلِك اَمَامَ الْوَجْهِ الشَّرِيْفِ وَالْـتَمَسَ مَا يَـمْسَحُ بِهِ الدَّمَ فَـلَمْ يَـجِدْ فَـفَتَحَ مُصْحَفًا قَرِيْـبًا مِّنْهُ ثُـمَّ اَخَذَ مِنْ اَوْرَاقِهٖ وَرَقَةً فَـتَمَسَّحَ بِـهَا نَـعُوْذُ بِاللهِ مَا هٰذَا اِلَّا صَرِيْحَ الْكُفْرِ وَانْـتَـنَهٗ
অর্থ: “তখন সেখানে ১ হাজার কুমারী মেয়ে উনাদের কুমারীত্ব নষ্ট করা হয়। নাঊযুবিল্লাহ! নিশ্চয়ই কুমারিত্ব নষ্টকারীরা পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার সামনে ঐ জঘন্য কাজ করে। রক্ত মুছার জন্য কিছু খুঁজে না পেয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ খুলে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পাতা দিয়ে রক্ত মুছেছে। নাঊযুবিল্লাহ! নিঃসন্দেহে এটা সুস্পষ্ট কুফরী। আর পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনাকে নষ্ট ও দূর্গন্ধময় করেছে। ” নাঊযুবিল্লাহ! (সিমতুন নুজূম ৩/২০৪)
ইয়াযীদ বাহিনীর ব্যভিচারের কারণে এক হাজার অবৈধ সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। নাঊযুবিল্লাহ! অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ১০ হাজার অবৈধ সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। নাঊযুবিল্লাহ! (তাযকিরাতুল খাওয়াছ)
-মুহাদ্দিস ইবনে মারইয়াম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত আবয়াদ্ব ইবনে হাম্মাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিকদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (৪)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২৩০০)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন জিহাদে ব্যবহৃত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সমরাস্ত্রসমূহ এবং বাহন মুবারক উনাদের পরিচিতি মুবারক (৩)
২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন জিহাদে ব্যবহৃত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সমরাস্ত্রসমূহ এবং বাহন মুবারক উনাদের পরিচিতি মুবারক (২)
১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিক্বদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (১)
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৯৯)
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৯৮)
৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












