১০ হাজার বছরের বিদ্যুতের জোগান! শক্তির সেই ‘বীজ’ পেতেই কি চাঁদে যাওয়ার ধুম বিভিন্ন দেশের?
এডমিন, ০১ রবীউর আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৯ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৭সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০২ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) বিদেশের খবর
হিলিয়ামের একটি হালকা আইসোটোপ হিলিয়াম-৩। যার মধ্যে দু’টি প্রোটন রয়েছে। কিন্তু নিউট্রন মাত্র একটি। পারমাণবিক ভর ৩। ১৯৩৪ সালে হিলিয়াম-৩-এর অস্তিত্বের কথা প্রথম বলে অস্ট্রেলিয়ার পারমাণবিক পদার্থবিদ মার্ক ওলিফ্যান্ট।
হিলিয়াম। পর্যায় সারণির দ্বিতীয় মৌল হিলিয়াম। যার দু’টি প্রোটন, দু’টি নিউট্রন এবং দু’টি ইলেকট্রন রয়েছে। পারমাণবিক ভর ৪। কিন্তু হিলিয়ামের আরও একটি রূপ রয়েছে। তার নাম হিলিয়াম-৩। বিজ্ঞানীদের ধারণা, হিলিয়ামের এই রূপ অফুরান শক্তির উৎস।
পৃথিবীর বুকে প্রাকৃতিক ভাবে হিলিয়াম-৩-এর খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত এটিকে মূলত একটি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলে মনে করা হচ্ছিল। এর পর বায়ুম-ল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের কূপ থেকে খুব অল্প পরিমাণে হিলিয়াম-৩-এর খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল।
হিলিয়াম-৩ পৃথিবীর একমাত্র স্থিতিশীল আইসোটোপ যাতে নিউট্রনের চেয়ে প্রোটনের সংখ্যা বেশি। পৃথিবীতে হিলিয়ামের এই রূপের উপস্থিতি বিরল। তবে পারমাণবিক ফিউশন গবেষণায় হিলিয়াম-৩ বিপ্লব ঘটাতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
একই সঙ্গে বিজ্ঞানীদের অনুমান, পৃথিবীতে বিরল হলেও চাঁদের মাটিতে হিলিয়াম-৩ প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত রয়েছে।
বর্তমানে সমস্ত পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে তাপ উৎপাদনের জন্য পারমাণবিক বিক্রিয়া ব্যবহার করে পানিকে বাষ্পে পরিণত করা হয় এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য টারবাইন চালানো হয়।
পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে পারমাণবিক বিভাজন চুল্লি (ফিশন রিঅ্যাক্টর) রয়েছে। যেখানে জ্বালানি হিসাবে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। এটি শক্তি উৎপাদন করার পাশাপাশি তেজস্ক্রিয় বর্জ্যও তৈরি করে। এই তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিরাপদে সংরক্ষণ করতে হয়। ফলে বিপদের ভয় থেকেই যায়।
নিউক্লিয়ার ফিউশন কার্যকর ভাবে একই শক্তি উৎপন্ন করে। তবে তা তেজস্ক্রিয়তা এবং পারমাণবিক বর্জ্য তৈরি করে না। নিউক্লিয়ার ফিউশন থেকেই সূর্য এবং অন্যান্য নক্ষত্র শক্তি পায়।
একটি ফিউশন বিক্রিয়ায়, দু’টি হালকা নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে একটি একক ভারী নিউক্লিয়াস তৈরি করে। প্রক্রিয়াটি শক্তি নির্গত করে কারণ একক নিউক্লিয়াসের মোট ভর দু’টি মূল নিউক্লিয়াসের ভরের চেয়ে কম। ফলে অবশিষ্ট ভর শক্তিতে পরিণত হয়।
তবে বিজ্ঞানীদের অনুমান হিলিয়াম-৩ শক্তির উৎসের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। এই অতেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ফিউশন চুল্লিতে শক্তি উৎপাদনের আদর্শ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করছে বিজ্ঞানীরা।
ডিউটেরিয়ামের সঙ্গে হিলিয়াম-৩ ব্যবহার করে ফিউশন চুল্লিতে শক্তি উৎপাদন করা যেতে পারে। যদিও এটি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, চুল্লির কন্টেনমেন্ট চেম্বার এই জাতীয় শক্তি ধারণ করে রাখতে পারলে এটি একটি কার্যকর শক্তির উৎস হয়ে উঠতে পারে। পৃথিবীর শক্তি উৎপাদনের চিন্তা দূর হওয়ার পাশাপাশি তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ভয়ও থাকবে না।
কিন্তু পৃথিবীতে হিলিয়াম-৩-এর অস্তিত্ব এতই কম যে সেটি পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহারের সুযোগও কম। আর তাই নাকি হিলিয়াম-৩ পেতে চাঁদের উপর ভরসা করছে বিজ্ঞানীরা। কারণ, চাঁদে প্রচুর পরিমাণে হিলিয়াম-৩ রয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস।
চাঁদে বায়ুম-ল নেই এবং কোটি কোটি বছর ধরে হিলিয়াম-৩ যুক্ত সৌরবায়ু বাধাহীন ভাবে চাঁদের বুকে আছড়ে পড়ছে।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, চন্দ্রপৃষ্ঠে কমপক্ষে ১১ লক্ষ মেট্রিক টন হিলিয়াম-৩ রয়েছে যা ১০ হাজার বছর পর্যন্ত মানবজাতির শক্তির চাহিদা পূর্ণ করতে সক্ষম। শক্তির চাহিদা মিটলে পৃথিবী আরও তরতাজা হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করছে বিজ্ঞানীরা।
এ-ও মনে করা হচ্ছে যে, শক্তির এই অফুরান উৎস হাতের মুঠোয় পাওয়ার জন্যই চাঁদের বুকে মহাকাশযান পাঠানোর এত ধুম দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের মধ্যে।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে চাঁদের মাটিতে একটি রোবট ল্যান্ডার অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছিল চিন। এর উদ্দেশ্য ছিল চাঁদের মাটি এবং পাথর নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসা। সেই মাটি এবং পাথর থেকে হিলিয়াম-৩ সংগ্রহ করে তা দিয়ে পরীক্ষা চালাতে চাইছিল চিন।
অন্য দিকে, রাশিয়ার বেসরকারি সংস্থা ‘এনার্জিয়া’ ২০০৬ সালে দাবি করেছিল, ২০১৫ সালে চাঁদের বুকে স্থায়ী ভাবে ঘাঁটি তৈরি করে ২০২০ সাল পর্যন্ত হিলিয়াম-৩ সংগ্রহ করবে তারা। কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত হয়নি।
২০১৯ সালে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরো চাঁদে দ্বিতীয় চন্দ্রযান পাঠানোর আগেও জল্পনা উঠেছিল, হিলিয়ামের আইসোটোপের খোঁজেই চাঁদে যান পাঠাচ্ছে ভারত।