৩য় হিজরী মুবারকের সম্মানিত গাতফানের জিহাদ (১)
, ০৪ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৭ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২১ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আইন ও জিহাদ

হিজরী তৃতীয় বৎসর সংঘটিত হয় সম্মানিত গাতফানের জিহাদ। এই সম্মানিত জিহাদকে আনমারের জিহাদ বা যী আমরের জিহাদও বলা হয়। স্থানটি ছিলো নজদের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ (তথা পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ) এ জিহাদ সংঘটিত হয়েছিল। অন্য বর্ণনায় ৩য় হিজরী পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গাতফান গোত্রকে তা’লীম দেয়ার উদ্দেশ্যে নজদের পথে বের হন। এই সম্মানিত জিহাদ উনার কারণ ছিলো, সংবাদ প্রচারিত হয়ে গেলো যে, বানী ছা’লাবা এবং বানী মুহারিবের লোকজন নজদের সীমামা নামক স্থানে এসে সমবেত হয়েছে। তারা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পাশ্ববর্তী এলাকায় লুটতারাজ চালাতে চায়। নাউযুবিল্লাহ! তাদের একত্রিত করেছে দাছুর ইবনে হারিছ মাহারেবী নামক এক ব্যক্তি। খতীবে বাগদাদী বলেছে, তার নাম ছিলো নাওয়াছ। সে ছিলো এক বেপরওয়া যুদ্ধবাজ।
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুসলমান তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে একত্রিত হতে বললেন। তারপর তিনি চারশ’ পঞ্চাশজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বেরিয়ে পড়লেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সেখানে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন তখন তারা সেস্থান থেকে পালিয়ে বিভিন্ন পাহাড়ের মধ্যে আত্মগোপন করলো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বানী ছা’লাবার এক লোককে সামনে পেয়ে তাকে ধরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আনলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত দিলেন। সেই ব্যক্তি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই নতুন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গী করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! এই ব্যক্তি ছাড়া তাদের আর কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলো না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে ছফর মাস অবস্থান মুবারক করলেন। কিন্তু কেউই উনাদের মুকাবিলা করার জন্য আসলো না। ফলে পবিত্র শাহরুল আ’যম (পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস) কোন জিহাদ ছাড়াই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে আসেন। সুবহানাল্লাহ!
এ ছফর মুবারকে পথিমধ্যে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই বৃষ্টির পানিতে ভিজে যান। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি গাছের নিচে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। তিনি সেখানে বিশ্রাম মুবারক গ্রহণ করছিলেন। সুবহানাল্লাহ! সেই এলাকায় এক যুদ্ধবাজ ব্যক্তি ছিলো, শত্রুরা গিয়ে তাকে সংবাদ দিলো যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একাকি একটি গাছের নিচে অবস্থান মুবারক করছেন। ওই ব্যক্তি দ্রুত আসলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে। সেই ব্যক্তির নাম ছিলো দাছুর। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একাই গাছের নিচে বিশ্রাম মুবারক গ্রহণ করছেন। উনার কাছাকাছি আর কেউ ছিলেন না। লোকজন দাছুরকে বললো, অবশ্যই তুমি উনাকে কাবু করতে পারবে। নাউযুবিল্লাহ! দাছুর নামক লোকটি তরবারি উঠিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শিয়র মুবারকের সামনে দাঁড়িয়ে বললো, “এখন আপনাকে কে হিফাযত করবে?” নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে হিফাযত করবেন! সুবহানাল্লাহ! উনার কথা মুবারক শেষ না হতেই সেখানে উপস্থিত হলেন খাদিম হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি।
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি দাছূরের বুকে আঘাত করলেন। সঙ্গে সঙ্গে সে মাটিতে পড়ে গেল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তার হাত থেকে তরবারী নিয়ে বললেন, এখন কে তোমাকে হিফাযত করবে? সে বললো, আমাকে হিফাযতকারী আর কেউ নেই। তবে আমি স্বাক্ষ্যি দিচ্ছি-
أَشْهَدُ أَلا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “আমি স্বাক্ষ্যি দিচ্ছি মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, নিশ্চয়ই আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ” সুবহানাল্লাহ! (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৯)
০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছাহিবে কা’বা কাওসাইনে আও আদনা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযীমুশ শান মি’রাজ শরীফ উনার বর্ণনা মুবারক (৭)
৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৮)
২৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৭)
২১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঐতিহাসিক ইয়ারমুকের সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ মাত্র ৩৫ হাজার সম্মানিত বীর মুজাহিদ উনারা পরাজিত করলেন ২ লাখ কাফির সৈন্যকে (২)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ঐতিহাসিক ইয়ারমুকের সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ মাত্র ৩৫ হাজার সম্মানিত বীর মুজাহিদ উনারা পরাজিত করলেন ২ লাখ কাফির সৈন্যকে (১)
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘জিহাদ’ মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক
০৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা জায়িয নেই
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৫)
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বীরত্ব মুবারক (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)