৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
, ২০ ই জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৬ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) আইন ও জিহাদ
অতঃপর হযরত আবূ উবাইদা ইবনে জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘এমন কে আছেন যিনি শত্রু ছাওনির ভিতরে গিয়ে আমাদের জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের সংবাদ মুবারক নিয়ে আসবেন? যিনি এই কাজ করবেন, উনার প্রতিদান স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই দিবেন। ’ হযরত আবূ উবাইদা ইবনে জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার এই সম্মানিত আহ্বান মুবারক-এ সবার আগে সাড়া দেন হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি। হযরত আবূ উবাইদা ইবনে জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘হে হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! আপনি তো সম্মানিত জিহাদ মুবারক করে সবেমাত্র ময়দান থেকে এসেছেন, আপনি অত্যন্ত ক্লান্ত-শ্রান্ত। আপনি এই কাজ করতে পারবেন না। আপনি বিশ্রাম গ্রহণ করুন। ’ হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘আমি অবশ্যই এই কাজে যাবো আর এই বিষয়ে আমিই অধিক হক্বদার। ’ এই কথা মুবারক বলেই তিনি উনার ঘোড়াটি হযরত হাযিম ইবনে আদী নাজ্জারী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার ঘোড়ার সাথে পরিবর্তন করে নিলেন। তিনি যখন অগ্রসর হলেন, তখন উনার পিছনে মুসলমান উনাদের একটি দলও এগিয়ে গেলেন। হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি কিছু দূর যেতেই সম্মানিত তাকবীর ধ্বনি মুবারক শুনতে পেলেন। তখন তিনিও সম্মানিত তাকবীর ধ্বনি মুবারক দিলেন। আর দেখলেন সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ উনারা অপর দিক থেকে এগিয়ে আসছেন। হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উনাদেরকে দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে সম্মানিত সালাম মুবারক দিলেন।
সম্মানিত আমীরুল মুজাহিদীন হযরত আবূ উবাইদা ইবনে জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি হযরত ফযল ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে এবং হযরত মিরকাল ইবনে হাশিম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসতে দেখে অত্যন্ত খুশি হয়ে শুকরিয়া আদায় করে সিজদাহ্ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি হযরত ফযল ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনারা কোথায় গিয়েছিলেন?’ হযরত ফযল ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘মুশরিকদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পরাজিত ও ব্যর্থ করে দেয়ার পর আমরা তাদেরকে ধাওয়া করতে গিয়েছিলাম। কারণ তারা আমাদের কয়েকজন মুজাহিদ ভাইদেরকে বন্দী করেছে। উনাদেরকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে গেলেও আমরা উনাদের কোনো খবর পাইনি। সন্দেহ নেই যে, উনারা সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক গ্রহণ করেছেন। ’ হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘না; উনারা বন্দী অবস্থাতেই আছেন। ’ হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘আপনি কিভাবে জানলেন যে, উনারা বন্দী অবস্থায় আছেন?’
হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘জিহাদ মুবারক উনার ময়দানে বীর মুজাহিদ উনারা ১০ জন শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করেছেন, আমরা ১০ জন মুজাহিদ উনাদের সম্মানিত জিসিম মুবারক পেয়েছি। এখানে আমরা ২০ জন রয়েছি। আর আপনারা আছেন ২৫ জন। কাজেই ৫ জন বন্দী হয়েছেন এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। ’
উল্লেখ্য, এই ৫ জন মুজাহিদ হলেন- হযরত রাফি’ ইবনে উমাইয়াহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি, হযরত রবী‘আহ্ ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি, হযরত দিরার ইবনে আযূর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি, হযরত আছিম ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি এবং হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি অর্থাৎ উনারা।
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় সবাই অত্যন্ত চিন্তিত হলেন। তখন হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘হে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম! আমি মহান আল্লাহ পাক উনার পথে সম্মানিত শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করার জন্য আমার সম্মানিত প্রাণ মুবারক উৎসর্গ করেছি। কিন্তু সম্মানিত শাহাদাত মুবারক লাভ করতে পারিনি। যে সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক গ্রহণ করেছেন, উনাদের সম্মানিত বিছাল শরীফ উনার সময় হয়েছেন, তাই উনারা সম্মানিত শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করতে পেরেছেন। আর যে কয়জন সম্মানিত মুজাহিদ উনারা বন্দী হয়েছেন, উনাদেরকে মুক্ত করার দায়িত্ব আমার। ইনশাআল্লাহ!’ অবশেষে উনাদেরকে মুক্ত করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
৬০ জন মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা ৬০ হাজার আরব খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে এই অসম জিহাদ মুবারক-এ বিজয় লাভ করার কারণে সেই রাতে মুসলিম মুজাহিদ বাহিনী উনারা অত্যন্ত আনন্দ এবং খুশি মুবারক প্রকাশ করেন। আর মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত শান মুবারকে ছলাত-সালাম মুবারক পেশ করেন। সুবহানাল্লাহ! অন্যদিকে রোমান খ্রিষ্টানরা তাদের সমর্থনকারী আরব খ্রিষ্টানদের কঠিন পরাজয় বরণ এবং তাদের মনোবল ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে অত্যন্ত দুঃখ-বেদনায় ডুবে ছিল। (সমাপ্ত)
-মুহাদ্দিস মুহম্মদ ইবনে ছিদ্দীক্ব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৭)
২১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঐতিহাসিক ইয়ারমুকের সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ মাত্র ৩৫ হাজার সম্মানিত বীর মুজাহিদ উনারা পরাজিত করলেন ২ লাখ কাফির সৈন্যকে (২)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ঐতিহাসিক ইয়ারমুকের সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ মাত্র ৩৫ হাজার সম্মানিত বীর মুজাহিদ উনারা পরাজিত করলেন ২ লাখ কাফির সৈন্যকে (১)
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘জিহাদ’ মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক
০৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা জায়িয নেই
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৫)
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বীরত্ব মুবারক (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬২)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ উনার ময়দানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ একজন অপরজনকে প্রাধান্য দেয়ার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)