আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদেরকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১০)
, ২০ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৯ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ২৭ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ১৩ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

নিম্নে সে বিষয়সমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
সনদ ছহীহ না হলেও উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের
আমলের দ্বারা তা ছহীহ সাব্যস্ত হয়
হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যদি গ্রহণ করে নেন তবে তা ছহীহ বলে সাব্যস্ত হয়। এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিখ্যাত আলিমে দ্বীন হযরত খতীব বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কয়েকটি হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেন যা সনদগতভাবে দুর্বল।
কিন্তু সকল আলিম এই হাদীছ শরীফগুলো আমল করে আসছেন। আর তাই তিনি বলেন-
وَإِنْ كَانَتْ هٰذِهٖ أَحَادِيْثَ لَا تُثَبِّتُ مِنْ جِهَةِ الْإِسْنَادِ لٰكِنَّ لَـمَا تَلَقَّتْهَا الكَافَّةُ عَنِ الْكَافَّةِ غَنَّوْا بِصِحَّتِهَا عِنْدَهُمْ عَنْ طَلَبِ الْإِسْنَادِ لَّـهَا فَكَذٰلِكَ حَدِيْثُ مُعَاذٍ لَمَّا اِحْتَجُّوْا بِهٖ جَمِيْعًا غَنَّوْا عَنْ طَلَبِ الْأَسْنَادِ لَهٗ
অর্থ : “আমলের মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে এগুলো ছহীহ হিসাবে অনুসরণ করে একথার প্রমাণ করেছেন যে, এগুলোর সনদ তালাশ করার প্রয়োজন নেই। অনুরূপভাবে হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাদীছ শরীফ, যখন সকলেই এ হাদীছ শরীফ দ্বারা দলীল দিয়েছেন, তখন সকলের নিকট উক্ত হাদীছ শরীফ উনার সনদের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পেয়েছে। ” (আল ফক্বিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ ১/৪৭১, ই‘লামু মুওয়াক্কিঈন লি ইবনিল কাইয়্যিম ১/২০২)
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ বিষয়ে বলেন-
يـُحْكَمُ لِلْحَدْيْثِ بِالصِّحَّةِ اِذَا تَلْقَاهُ النَّاسَ بِالْقُبُوْلِ وَاِنْ لَّـمْ يَكُنْ لَّهٗ اِسْنَادٌ صَحِيْحٌ
অর্থ : “কোন হাদীছ শরীফ উনার ছহীহ সনদ না পাওয়া গেলেও যদি সকলের আমলের মাধ্যমে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বক্তব্য অনুসৃত হয় তাহলে সে হাদীছ শরীফখানা ছহীহ বলে গণ্য হবে। ” (তাদরীবুর রাবী ১/৬৬)
হাফিজে হাদীছ, বুখারী শরীফ উনার অন্যতম ব্যাখাকারক হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যে বৈশিষ্ট্যের কারণে হাদীছ শরীফ গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয় তার মধ্যে একটি হলো কোন হাদীছ শরীফ উনার বক্তব্য অনুযায়ী আমল করার ব্যাপারে সকল আলিম ঐক্যবদ্ধ হওয়া। তাহলে সে হাদীছ শরীফখানা গ্রহণযোগ্য ও তার বক্তব্য অনুযায়ী আমল করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। ”
উছূলে হাদীছ শরীফ উনার অনেক ইমাম এই নীতি সুস্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য, “কোন পানির যদি স্বাদ, গন্ধ, রং পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে তা ব্যবহারযোগ্য নয়। ”
এ হাদীছ শরীফখানা উনার সনদকে যদিও হাদীছ শরীফ বিশারদগণ ছহীহ মনে করেন না, তথাপি এটাই সকলের বক্তব্য, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত আছে বলে আমার জানা নেই। “ওয়ারিশদের জন্য অসিয়ত প্রযোজ্য নয়” এ হাদীছখানাও হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা (সনদগতভাবে) প্রমাণিত মনে করেন না, কিন্তু সকলের আমলের মাধ্যমে এটি অনুসৃত হয়েছে। ” (তাউযীহুল আফকার ১/২৫৭, ছহীহ ইবনে খুযায়মা : হাদীছ শরীফ নং ১৬৪৩)
সুতরাং চট করেই কোন হাদীছ শরীফ উনার সনদ পাওয়া না গেলে বা ছহীহ না মনে হলেই জাল বলে বর্জন করার সুযোগ নেই। কারণ উছূলে হাদীছ শরীফ উনার নীতি অনুযায়ী, যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপর সকলে আমল করে আসছেন বা গ্রহণ করে নিয়েছেন তার বিরুদ্ধে এতদিন পরে এসে জাল, দ্বয়ীফ ফতওয়া উদগীরণ করা জায়িয হবে না। কেউ এরকম করলে সেটা স্পষ্ট নফসানিয়াত ও বিদ্বেষ বৈ কিছু নয়।
কোন মুহাদ্দিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি কোন হাদীছ শরীফ উনার ব্যাপারে “ছহীহ নয়” শব্দটি ব্যবহার করলেই তা জাল হয় না
বর্তমানে ওহাবী-সালাফীরা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য কিছু ইমাম মুহাদ্দিছ উনাদের বক্তব্য لا يصح (ছহীহ নয়) এমন বক্তব্য দিয়ে হাদীছ শরীফ জাল বলার অপচেষ্টা করে। কিন্তু ছহীহ নয় দ্বারাই কি জাল হয়ে যায়? ছহীহ’র পরের স্তর হাসান, তারপরের স্তর দ্বয়ীফ, তারপরে গিয়ে হচ্ছে মওদ্বু বা জাল। ছহীহ নয় বললে হাসান হওয়াতে নিষেধ কোথায়?
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
قَوْلُ السَّخَاوِّىِّ لَا يَصِحُّ لَا يُنَافِـي الضَّعْفَ وَالْـحَسَنَ
অর্থ : “ইমাম হযরত সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ‘ছহীহ নয়’ দ্বারা পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হাসান ও দ্বয়ীফ হওয়া নিষেধ করে না। ” (আসরারুল মারফুয়া ১/৩৪৯)
হাফিযে হাদীছ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
لَا يَلْزِمُ مِنْ نَفِىِ الثُّبُوْتِ ثُبُوْتَ الضَّعْفِ لِاِحْتِمَالٍ اَنْ يُّرَادَ بِالثُّبُوْتِ الصِّحَةَ فَلَا يَنْتَفِى الْـحَسَنَ
অর্থ : “পবিত্র হাদীছ শরীফ সাবিত নয় বা দৃঢ় নয় দ্বারা দ্বয়ীফ হওয়া আবশ্যক নয়। হাদীছ শরীফখানা সাবিত নয় দ্বারা ছহীহ নয় বুঝানো হয়েছে। তাই বলে হাসান হওয়াকে নিষেধ করা হয়নি। ” (তুহফাতুল আবরার ১/৪)
এছাড়া হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘তা’কিবাত আলাল মওদ্বুয়াত’ কিতাবে, হযরত তাহের ফাত্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত ‘তাযকিরাতুল মাওদ্বুয়াত’ কিতাবে, আব্দুল হাই লখনবী রচিত ‘আসরারুল মারফুয়া’ কিতাবে, আল্লামা আযলুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত ‘কাশফুল খফা’ সহ অসংখ্য কিতাবে ছহীহ নয় দ্বারা হাসান হাদীছ শরীফ বুঝানো হয়েছে কখনোই জাল বলা হয়নি।
তাই যারা বিভিন্ন কিতাব থেকে ‘ছহীহ নয়’ উদ্বৃতি দিয়ে হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলার অপচেষ্ট করে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে হাদীছ শরীফ অস্বীকার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
-মুহম্মদ নূরুদ্দীন (পলাশ)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাই শবে বরাত প্রমাণিত (৪)
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হালালকে হারাম করা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে র্শিক করার শামিল
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৯)
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে ক্বিয়াম করা পবিত্র আয়াতে কুরআন মাজীদ দ্বারা প্রমাণিত
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাই শবে বরাত প্রমাণিত (৩)
১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: হক্ব তালাশীদের জন্য সার্বিক দিক-নির্দেশনা রয়েছে পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার মধ্যেই
১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাই শবে বরাত প্রমাণিত (২)
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা পালন করা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই শান্তি ও পবিত্রতা হাছিলের কারণ
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)