আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
, ২৮ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২১ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০৫ পৌষ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আসমাউর রিজালসমূহের কিতাব থেকে নফসানিয়াত অনুযায়ী বক্তব্য উল্লেখ করে ওহাবী সালাফীরা যেভাবে মানুষকে ধোঁকা দেয়:
برد بن سنان وثقه ابن معين، والنساءي، وضعفه ابن المديني قال ابو حاتم: ليس بالمتين. وقال مرة: كان صدوقا قدرياوقال ابو زرعة: لا بأس به وقال ابو داود، يرمي بلقدر
অর্থ: হযরত বুরাদ ইবনে সিনান রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার সম্পর্কে ইমাম ইবনে মুঈন ও হযরত নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, তিনি ছিক্বাহ। হযরত ইবনে মাদীনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি দুর্বল। হযরত আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মজবুত নন। হযরত মুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি সত্যবাদী এবং শক্তিশালী। ইমাম আবু যুরআ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার কোন সমস্যা নাই। ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, দূরে নিক্ষেপ করতে হবে। (মিযানুল ইতিদাল ২/১১: রাবী নং ১১৪৭)
হযরত বুরাদ ইবনে সিনান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ব্যাপারে হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা দুজন উনাকে ছিক্বাহ বলেছেন। অপরদিকে হযরত ইবনে মাদীনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, দুর্বল। অর্থাৎ কেউ জারাহ করেছেন, আবার কেউ তা’দীল করেছেন। এখানে মতপার্থক্য দেখা গেলো।
بشير بن ثابت وثقه ابن حبان وقال ابو حاتم: مجهول
অর্থ: হযরত বশির ইবনে সাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে ছিক্বাহ বলেছেন। হযরত ইমাম আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন ‘মাজহুল’ বা অপরিচিত। (মিযানুল ইতিদাল ২/২৪: রাবী নং ১১৮৯)
এখানেও আমরা দু’জন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রিজাল বিশারদের মধ্যে ইখতেলাফ দেখতে পেলাম। একজনের কাছে হযরত বশির ইবনে ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিক্বাহ বা বিশ্বস্ত আবার অন্য একজন ইমামের কাছে সেই রাবীই মজহুল বা অপরিচিত।
وقال احمد: منكر الحديث يجيء بالعجب وقال ابو حاتم: لا يحتج به بشير بن المهاجر وثقه ابن معين وغيره وقال النسائى : ليس به باس وقال ابن عدي : فيه بعض الضعف
অর্থ: হযরত বশির ইবনে মুহাজির রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও অন্য ইমামগণ উনারা ছিক্বাহ বলেছেন। হযরত ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার মধ্যে কোন সমস্যা নেই। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আশ্চর্যজনকভাবে মুনকার বর্ণনা করেন। আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উনার সম্পর্কে আপত্তি নেই। হযরত ইবনে আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার সামান্য দুর্বলতা আছে। (মিযানুল ইতিদাল ২/৪৩: ১২৪৫)
এখানে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও হযরত আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা দু’জন এই রাবী সম্পর্কে জারাহ করেছেন। অন্যরা তা’দীল বা প্রশংসা করেছেন।
بكر بن بكار قال النسائى : ليس بثقة وقال ابو معين : ليس بشىء وقال ابو عاصم النبيل : ثقة وقال ابن حبان : ثقة، ربما يخطىء. وقال ابو حاتم : ليس بالقوى
অর্থ: হযরত বকর ইবনে বকর রহমতুল্লাহি আলাইহি। ইমাম হযরত নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি ছিক্বাহ নন। হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি, তার ব্যাপারে কোন আপত্তি নাই। হযরত আবু আছিম আন নাবিল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বিশ্বস্ত। হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি তিনি বলেন, ছিক্বাহ, সম্ভবত তিনি তা নন। ইমাম আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি শক্তিশালী নন। (মিযানুল ইতিদাল ২/৫৮-৫৯: ১২৭৭)
এখানেও ইমাম উনাদের জারাহ ও তা’দীল নিয়ে মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। কেউ ছিক্বাহ বলেছেন, কেউ শক্তিশালী নন বলেছেন।
حريث بن السائب البصرى وثقه ابن معين وقال ابو حاتم: ما به باس وقال زكريا الساجي : ضعيف
অর্থ: হযরত হারিছ বিন সায়িব আল বাছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে ছিক্বাহ বলেছেন। হযরত আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সমস্যাযুক্ত। হযরত যাকারিয়া আস সাজী তিনি বলেন, তিনি দ্বয়ীফ বা দুর্বল। (মিযানুল ইতিদাল ২/২১৭: ১৭৯০)
উক্ত রাবী সম্পর্কেও ইমামগণ উনাদের পক্ষে বিপক্ষে মত রয়েছে। এরকমভাবে তাহযিবুল কামাল, তাহযীবুত তাহযীব, তাকরীবুত তাহযীবসহ অনেক আসমাউর রিজাল উনার কিতাবে মতপার্থক্য বর্ণিত আছে। এখানে দেখানোর যে বিষয় সেটা হলো, কোন একজন রাবী সম্পর্কে একেক ইমাম উনার একেক মতামত থাকে কেউ জারাহ করেন, কেউ তা’দীল। ওহাবী সালাফীরা কোন হাদীছ শরীফ উনাকে মওজু অথবা দ্বয়ীফ প্রমাণ করতে শুধুমাত্র যে রাবী সম্পর্কে জারাহ বা আপত্তি করা হয়েছে তার বর্ণনাটা পেশ করে। তারা বলে অমুক ইমাম এই রাবীকে জারাহ করেছে তাই এটা গ্রহণযোগ্য নয়, কিন্তু কেউ যে প্রশংসাও করেছেন সে কথা ভুলেও উল্লেখ করে না। আর সাধারণ মানুষও যেহেতু উছুল জানে না সেই সাথে রিজালের কিতাব জীবনে চোখেও দেখেনি তাই তারাও সেটা মেনে নিয়ে গোমরাহ হয়। নাউযুবিল্লাহ! ইনশাআল্লাহ! (চলবে)
-খাজা মুহম্মদ নুরুদ্দীন পলাশ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












