ইফতারীসহ বিভিন্ন খাদ্য ও পানীয়কে লোভনীয় করতে মেশানো হয় বিভিন্ন আকর্ষণীয় রং। সাধারণ মানুষ রংবিহীন বিশুদ্ধ খাবারের পরিবর্তে রংযুক্ত ভেজাল ও ক্ষতিকর খাদ্য ও পানীয় ক্রয় করতেই বেশি উৎসাহী। এতে করে তারা আর্থিকভাবে এবং স্বাস্থ্যগতভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা নেই।
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আমল থাকলে সাধারণ মুসলমান এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। (১ম পর্বের পর)
, ১২ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ২৩ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ০৯ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মন্তব্য কলাম
আমাদের বাজারে ভারতীয় অজস্র কোম্পানির পাশাপাশি আইসিআই, বায়ার, মার্ক, ডোলডার ইত্যাদি কোম্পানির রং খোলা বাজারে দেদার বিক্রি হয়। রং বিক্রির উপরে এদেশে কোনো বিধিনিষেধ নেই। এই টেক্সটাইল কালারগুলো কোনো না কোনো কারখানা থেকে কালো পথে খোলাবাজারে চলে আসে এবং তা আসছে যুগের পর যুগ ধরে। ফলে এ অন্যায়টিকে মানুষ আর অন্যায় বলেই মনে করছে না।
সমস্যার কিন্তু এখানেই শেষ নয়। অনুমোদিত প্রতিটি রংয়ের আবার সর্বোচ্চ নিরাপদ মাত্রা-সীমা রয়েছে। অর্থাৎ এ নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি ব্যবহার করলে শরীরের ক্ষতি হবে। একেক দেশে এ মাত্রা-সীমা একেক রকম। তুলনামূলকভাবে কম প্রযুক্তিগত দক্ষতাসম্পন্ন দেশগুলোতে এ মাত্রা-সীমা বেশি, কিন্তু উন্নত প্রযুক্তিগত দক্ষতার দেশগুলোতে এটি কম। আমাদের মতো গরিব দেশে কোনো খাদ্য ও পানীয় উৎপাদক এ মাত্রা-সীমা মেনে অনুমোদিত রং মেশাচ্ছে কিনা তা দেখার অর্থাৎ পরীক্ষা করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এখনো নেই। যে দেশে ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ দেখার জন্য এখনো কোনো উপযুক্ত আইন বা ল্যাব সুবিধা নেই, সে দেশে কোনো খাদ্য বা পানীয়তে ব্যবসায়ীর কথা অনুযায়ী অননুমোদিত রংয়ের বদলে অনুমোদিত রং মেশানো হয়েছে এটা জেনে তাই আশ্বস্ত হওয়ার কোনো কারণও নেই।
পিয়াজু, বেগুনিতে রং ও মবিল: ইফতারীর মুখরোচক পিয়াজু, বেগুনি, সবজিবড়া, বিভিন্ন কাবাব, আলুর চপ ও জিলাপির রং আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকারক সিনথেটিক রং। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এগুলোয় লাল রং মেশানো হয়। সাধারণত নির্দিষ্ট মাত্রায় খাবারের রং মেশানোর নিয়ম থাকলেও দাম বেশি হওয়ায় (প্রতি কেজি ৪ হাজার টাকা) ব্যবসায়ীরা কম দামি কাপড়ে ব্যবহৃত রংও (প্রতি কেজি ২০০ টাকা) খাবারে ব্যবহার করছে। এমনকি যে তেলে এগুলো ভাজা হচ্ছে তাতে মবিল ব্যবহার করা হচ্ছে এর ফলে খাবার মচমচে হচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, কম দামি টেক্সটাইল রং কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাছাড়া মবিলের ভাজা খাবার খেলে দীর্ঘস্থায়ীভাবে দেহের ক্ষতি হয়। এতে ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া পরিপাক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গেরও ক্ষতি হয়। জানতে চাইলে মগবাজারের এক ইফতারী দোকানি জানান, রং ব্যবহার না করলে খাবার রং সুন্দর হয় না। এতে ক্রেতারাও খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয় না।
জিলাপি ও ছোলায় হাইড্রোজ: জিলাপির খামির জমতে কিছুটা সময় লাগে আর একশ্রেণীর বিক্রেতা চটজলদি জিলাপি বানাতে এতে হাইড্রোজ ব্যবহার করছে। এতে জিলাপি মচমচে হয়। অন্যদিকে কাল ছোলা সাদা করতে দোকানিরা হাইড্রোজ দিয়ে তা সিদ্ধ করে বলে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়। আকর্ষণীয় করতে অনেক সময় জিলাপিতে লাল ও হলুদ সিনথেটিক রং মেশানো হচ্ছে।
মুড়িতে ইউরিয়া: ইফতারে মুড়ি প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য। এটি ভাজা হচ্ছে হাইড্রোজ বা ইউরিয়া সার দিয়ে। মূলত আকারে বড় ও সাদা করতেই এমনটি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ীর এক মুড়ি বিক্রেতা জানায়, ইউরিয়া সার ছাড়া মুড়ি ভাজলে তা লাল হয় আর লাল মুড়ির ক্রেতা নেই বলেই মুড়িতে সার ব্যবহার করা হয়।
২০ কেজি চিনির সমান এক মুঠো সাইক্লামেট: খাদ্যদ্রব্য মিষ্টির জন্য ২০ কেজি চিনির পরিবর্তে এক মুঠো নাম্বার ওয়ানই যথেষ্ট। এর আগে এই নামটি শোনেনি দেশের মানুষ। কারণ এটি চিনির মতো কোনো খাদ্যদ্রব্য নয়। সোডিয়াম জাতীয় এই পদার্থ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হতে পারে মানুষের। চিনির পরিবর্তে বিষাক্ত এই পদার্থ ব্যবহৃত হচ্ছে ইফতার সামগ্রীতে। দেশের বাজারে সোডিয়াম সাইক্লামেট হিসেবে প্রবেশ করেছে এটি। তবে বিক্রেতারা এটিকে নাম্বার ওয়ান বলে থাকেন। পানীয়, জুস জাতীয় ইফতার সামগ্রীতে মিশানো হচ্ছে এই বিষ। এছাড়া খেজুর, মুড়ি থেকে শুরু করে কোনো সামগ্রী নিরাপদ না। রাসায়ানিক কেমিক্যাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের রং, পুরনো তেল এমনকি মবিলও মেশানো হচ্ছে। এসব ভেজাল সামগ্রী খাওয়ার ফলে কিডনি, লিভার এমনকি ব্রেইন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিকাল হলেই যত্রতত্র বসছে ইফতারের হাট। অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি হচ্ছে এসব ইফতারী। পুরনো তেলের ব্যবহার প্রকাশ্যে দেখলেও এতে তৈরি সামগ্রী কিনতে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। ইফতারের সময় ঘনিয়ে এলে সেখানে শুরু হয় ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন।
বেইলী রোড, মিরপুর, পুরান ঢাকার চকবাজার, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ীসহ অলিগলিতে তৈরি হচ্ছে বাহারি ইফতার সামগ্রী। সূত্রমতে, ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই), জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশন। কিন্তু রমজান শুরুর পর থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য কোনো অভিযান হয়নি।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, জুস জাতীয় ইফতার সামগ্রীতে ময়দার মতো একটা পদার্থ মেশানো হচ্ছে। এতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট। মিডফোর্ট ও চকবাজারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তা বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি মিরপুরের পল্লবীর একটি সোডিয়াম ফ্যাক্টরি থেকে এই পদার্থ জব্দ করেছে র্যাব।
মূলত, খাদ্যে এসব রং মেশানো হচ্ছে আকর্ষণীয় করার জন্য। আর মানুষ রং চং দেখলেই আকর্ষিত হয়। অথচ এটা হলো কৃত্রিমতা। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা নেই।”
কাজেই মানুষের মধ্যে যদি এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অনুভূতি ও আমল থাকতো তাহলে রংচং মার্কা ইফতারীর দিকে মানুষ আকৃষ্ট হতো না। আর বিক্রেতারাও তাহলে রংচং মেশাতে উৎসাহী হতো না।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নারীরা এখন প্রকাশ্যে সিগারেট থেকে সব ধরণের মাদক সেবন ও বিকি-কিনিতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে। রক্ষা পেতে নারীদের জন্য সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার বিকল্প নেই
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ভীনদেশী অ্যাপের ফাঁদে পড়ে বিপথে যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম বাড়ছে নারীপাচার, দেশে বাড়ছে অশ্লীলতা ও পর্ণোগ্রাফির প্রচার কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করেই একটি মহল এসব অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে এসব অপসংস্কৃতি নির্মূলে দ্বীন ইসলামই একমাত্র সমাধান
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলায় কৃষিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক; বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বিলুপ্তির পথে ১৯২ জাতের উপকারী পোকা। সরকারের উচিত অবিলম্বে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রন করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষিকে বিষমুক্ত করা।
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সন্ত্রাসবাদ নয়; জিহাদী যোগ্যতা অর্জন করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী ফরয। ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সব নাগরিকের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকরা লাভবান হলেও চিকিৎসার উচ্চ ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর দারিদ্রসীমায় চলে যাচ্ছে অর্ধকোটি মানুষ চিকিৎসার সরকারি ব্যয় আগের তুলনায় বেড়েছে। তারপরও মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বেড়েই চলেছে। যার বড় একটি কারণ চিকিৎসকদের একটি অংশের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ সরকারকে সত্ত্বর ব্যবস্থা নিতে হবে।
২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
খাবারের নামে আমরা কী খাচ্ছি? ভেজাল খাবারে দেশব্যাপী চলছে নীরব গণহত্যা। ভেজাল দমনে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
রক্ত নিয়ে বাণিজ্য- মেশানো হচ্ছে স্যালাইন, লবণ পবিত্র দ্বীন ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার ব্যতীত রক্ষা নেই
২২ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তথাকথিত ইসলামী ব্যাংকগুলো আদৌ ইসলামী নয়। সুদবিহীন ব্যাংক নয়। দ্বীনদার, পরহেজগার মুসলমানের জন্য সুদবিহীন ইসলামী ব্যাংকের সুবিধা ও সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
২১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গঃ জবরদখলে থাকা সরকারি সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, খাস জমি অথবা রেলওয়ের বেহাত জমি। পরিত্যক্ত জমির হিসাব ভূমি মন্ত্রণালয়ে নেই। উদ্ধারেও সক্রিয় ও জোরদার তৎপরতা নেই।
২০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সবজি উৎপাদন ১২ বছরে ৭ গুন বাড়লেও বাড়ছেনা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন। উৎপাদন পর্যায়েই সবজিতে মিশছে ২০ গুন বিষাক্ত কীটনাশক। ক্যান্সার, প্যারালাইসিস, কিডনি রোগ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছেই।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ভূমি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় আইন-কানুন জানেনা দেশের সিংহভাগ মানুষ পাঠ্যপুস্তকে ভূমি বিষয়ক আইন ও নিয়মকানুন এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্ভাবনাময় স্ট্রবেরি চাষ সমৃদ্ধি অর্জনের নতুন সোপান। অশিক্ষিত-শিক্ষিত সব বেকারেরই ভাগ্য বদলের উছীলা।
১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)