উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৩)
, ২৭ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ৩০ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ১৩ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
উলামায়ে সূ’দের স্বরূপ:
উলামায়ে সূ’দের হরেক রকম আচরণ রয়েছে। বিশেষ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইহুদী আলিমদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অনেকগুলো পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَثَلُ الَّذِيْنَ حُمِّلُوا التَّوْرَاةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوْهَا كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا ۚ بِئْسَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوا بِاٰيَاتِ اللهِ ۚ وَاللهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
অর্থ: যাদেরকে পবিত্র তাওরাত শরীফ দেয়া হয়েছিল, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত সেই গাধার মতো, যে কিতাব বহন করে, (কিন্তু তার মূল্য বুঝে না। ) যারা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ উনাদের প্রতি মিথ্যারোপ করে, তাদের দৃষ্টান্ত কতইনা নিকৃষ্ট। মহান আল্লাহ পাক তিনি যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না। (পবিত্র সূরা জুমু‘আহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ وَّرِثُوا الْكِتَابَ يَأْخُذُوْنَ عَرَضَ هٰذَا الْأَدْنـٰى وَيَقُوْلُوْنَ سَيُغْفَرُ لَنَا وَإِن يَّأْتِهِمْ عَرَضٌ مِّثْلُه يَأْخُذُوْهُ ۚ أَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِمْ مِّيْثَاقُ الْكِتَابِ أَن لَّا يَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ إِلَّا الْحَقَّ وَدَرَسُوْا مَا فِيْهِ
অর্থ: অতঃপর (হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম) উনাদের পর এমন কিছু অযোগ্য উত্তরসুরি উনাদের স্থলাভিষিক্ত হলো যারা সম্মানিত কিতাব উনার উত্তরাধিকারী হয়েছে। তারা এই তুচ্ছ দুনিয়ার সামগ্রী গ্রহণ করে এবং বলে, আমাদেরকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেয়া হবে'। যদি অনুরূপ সামগ্রী তাদের সামনে পুনরায় আসে তাহলে তাও গ্রহণ করে। তাদের থেকে কি সম্মানিত কিতাবে এই অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, মহান আল্লাহ পাক উনার উপর সত্য বৈ (মিথ্যা) কিছু আরোপ করবে না? আর কিতাবে যা কিছু লেখা ছিল তারা যথারীতি তা পাঠও করতো। (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৯)
এই হলো ইহুদী আলিমদের স্বভাব। বর্তমান যামানার উলামায়ে সূ’দের মাঝেও এসব বদ স্বভাব সমানভাবে বিদ্যমান। তারা দিনের পর দিন পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ পড়ে, পড়ায়। কিন্তু তারা সেটা বুঝে না। তারা দুনিয়ার সামান্য স্বার্থ্যরে জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্পর্কে মিথ্যারোপ করে, অপব্যাখ্যা করে। নাঊযুবিল্লাহ!
সেটাই হযরত শাহ ওয়ালীল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
إِذَا أَرَدْتَّ أَنْ تَرٰى نَـمَاذِجَ الْيَهُوْدِ فِيْ هٰذِهِ الْأُمَّةِ فَانْظُرْ إِلٰى عُلَمَاءِ السُّوْءِ
অর্থ: তোমরা যদি এই উম্মতের মাঝে ইহূদীদের নজীর দেখতে চাও তাহলে উলামায়ে সূ’দেরকে দেখো। (আল ফাউযুল কাবীর- ৫৩ পৃষ্ঠা)
এদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّه قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ يَخْرُجُ فِيْكُمْ قَوْمٌ تَحْقِرُوْنَ صَلاَتَكُمْ مَعَ صَلاَتِهِمْ وَصِيَامَكُمْ مَعَ صِيَامِهِمْ وَعَمَلَكُمْ مَعَ عَمَلِهِمْ وَيَقْرَءُوْنَ الْقُرْاٰنَ لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ يَمْرُقُوْنَ مِنَ الدِّيْنَ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ
অর্থ: হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাক বলতে শুনেছি, ভবিষ্যতে এমন সব লোকের আগমন ঘটবে, যাদের নামাযের তুলনায় তোমাদের নামায কে, তাদের রোযার তুলনায় তোমাদের রোযাকে এবং তাদের আমলের তুলনায় তোমাদের আমলকে তোমরা তুচ্ছ মনে করবে। তারা পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করবে; কিন্তু তা তাদের কন্ঠনালীর নিচে নামবে না (অর্থাৎ অন্তরে প্রবেশ করবে না এবং তা লোক দেখানো হবে)। এরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনভাবে নিক্ষিপ্ত তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। (বুখারী শরীফ : পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৫০৫৮)
অর্থাৎ তাদের আমলগুলো হবে লোক দেখানো, অন্তুরসমূহ থাকবে রিয়ায় পরিপূর্ণ। তাই তাদের এই আমল কোনই কাজে আসবে না।
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَ حَضْرَتْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ سَيَكُونُ فِىْ أُمَّتِىْ اِخْتِلاَفٌ وَفُرْقَةٌ قَوْمٌ يُحْسِنُوْنَ الْقِيْلَ وَيُسِيْئُوْنَ الْفِعْلَ وَيَقْرَءُوْنَ الْقُرْاٰنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ يَمْرُقُوْنَ مِنَ الدِّيْنِ مُرُوْقَ السَّهْمِ مِنَ الرَّمِيَّةِ لَا يَرْجِعُوْنَ حَتَّى يَرْتَدَّ عَلٰى فُوقِهِ هُمْ شَرُّ الْخَلْقِ وَالْخَلِيْقَةِ طُوْبَى لِمَنْ قَتَلَهُمْ وَقَتَلُوْهُ يَدْعُوْنَ إِلٰى كِتَابِ اللهِ وَلَيْسُوْا مِنْهُ فِىْ شَىْءٍ مَنْ قَاتَلَهُمْ كَانَ أَوْلٰى بِاللهِ مِنْهُمْ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا سِيْمَاهُمْ قَالَ اَلتَّحْلِيْقُ
অর্থ: হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অর্থাৎ উনারা উভয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে মতভেদ ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হবে। (তখন তাদের মধ্যে এমন একটা ক্বওম বের হবে) যারা উত্তম কথা বলবে, আর নিকৃষ্ট কাজ করবে। তারা পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের গলার হাড় (কন্ঠনালী) অতিক্রম করবে না। তারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক থেকে ছুটে যায়। তারা আর (দ্বীন ইসলামে) ফিরে আসবে না যতক্ষণ না ছুটে যাওয়া তীর ধনুকে ফিরে আসে। তারা সৃষ্টি জগতে সর্ব নিকৃষ্ট সৃষ্টি এবং বদ চরিত্র হবে। ঐ ব্যক্তি ভাগ্যবান যে তাদেরকে হত্যা করবে এবং তারা তাকে শহীদ করবে। তারা মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাবের দিকে ডাকবে কিন্তু তাদের নিজেদের মাঝে তার কোনো কিছুই থাকবে না। যে ব্যক্তি তাদেরকে হত্যা করবে সে-ই হবে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সর্বোত্তম। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সুওয়াল করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাদের আলামত কি? নূরে মুৃজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তারা হবে নেড়া মাথাওয়ালা গোষ্ঠী। (যারা ঘনো ঘনো মাথা মু-ণ করে। ) (আবূ দাঊদ শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৪৭৬৫)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












