উলুঘ বেগ:
একজন হাফিজ মুসলিম শাসকের বিজ্ঞানচর্চার উপাখ্যান
, ১৭ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১০ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১০ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ২৪ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইতিহাস
বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও জ্ঞানপিপাসু। কিশোর বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাফিজ হন। এরপর দ্বীনশাস্ত্র, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় তিনি অত্যন্ত মাহির ছিলেন। ইসলামী শিল্প, সাহিত্যের প্রতিও উনার ভালোবাসা ছিল প্রগাঢ়। উনার পিতা মুহম্মদ শাহরুখ তিনিও ছিলেন অত্যন্ত ইলমপিপাসু।
উনার পিতা যদিও বিজ্ঞানী ছিলেন না। কিন্তু বিজ্ঞান চর্চার প্রতি অসামান্য আগ্রহ ছিলো। ফলে পুত্র উলুঘ বেগকে তিনি বিজ্ঞান, ইতিহাস, শিল্পসাহিত্য সম্বন্ধে বিশেষ শিক্ষাদান করেন। উলুঘ বেগও ছিলেন বাবার মতোই জ্ঞানানুরাগী। তুর্কিস্তান ও ট্রান্স অক্সিয়ানার শাসনকর্তা থাকাকালে শত ব্যস্ততার মাঝেও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনায় নিমগ্ন থাকতেন তিনি। জ্যোতির্বিজ্ঞান, ত্রিকোণমিতি, জ্যামিতি প্রভৃতিসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তিনি সুদক্ষ ছিলেন। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় নিজে যেমন ডুবে থাকতেন, অন্যদেরও উৎসাহ দিতেন।
পিতার ইন্তেকালের পর তিনি শাসকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। উনার আমলে সমরকন্দ জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা লাভ করে। তিনি সমরকন্দে সুউচ্চ গম্বুজের বহু খানকা শরীফ ও বহু মসজিদও নির্মাণ করেন। এসব নির্মাণকাজে উনার গভীর স্থাপত্যবিদ্যা ও শিল্পকলার স্বাক্ষর বর্তমান ছিল।
উনার গবেষণাপত্র ‘জিজ-ই-জাদিদই-মুলতানি’ বেশ পরিচিত। এতে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ১. বিভিন্ন গণনা ও বর্ষ, ২. সময়জ্ঞান, ৩. নক্ষত্রের গতিপথ, ৪. স্থির নক্ষত্রের অবস্থান প্রভৃতি সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন। তালিকাটি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সর্বত্রই বিশেষভাবে সমাদৃত হয়। উলুঘ বেগস টেবল নামে এখনো তা বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এতে পূর্ববর্তী বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন তথ্যফলসহ তাঁদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণের ফলাফলও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এই জিজ তৈরির কাজে সালাউদ্দীন মুসা, মোল্লা আল-কুশজি, পিয়াসউদ্দিন জামশিদ, মইনুদ্দিন কাশানী, কাজিজাদা রুমি প্রমুখ উনার সহকর্মী ছিলেন।
ত্রিকোণমিতির সাইন, কোসাইন, ট্যানজেন্ট প্রভৃতি পূর্বাবিষ্কৃত বটে; কিন্তু সবই ছিল এলোমেলো, প্রক্ষিপ্ত। উলুঘ বেগই প্রথম বিজ্ঞানীদের সুবিধার জন্য এসব সংগ্রহ করে তালিকাভুক্ত করেন। এর আগে কোনো বিজ্ঞানীই তা করেনি। এই তালিকায় উনার মৌলিক অবদান ছিল ব্যাপক। তিনি বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। সেসব মুদ্রিত ও পা-ুলিপি অবস্থায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়।
মুসলিম উম্মাহর অগ্রগতির জন্য সবসময় চিন্তা করা এই মুসলিম শাসক ১৪৪৯ সালে ইন্তেকাল করেন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
১৯৭১ সালে ভারতের লুটপাটের খতিয়ান এবং ভারতের কাছে বাংলাদেশের পাওনার পরিমাণ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উজ্জ্বল সাক্ষী সাতৈর শাহী মসজিদ (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪১)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের উট এবং হস্তিবাহিনীর ইতিহাস
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪০)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












