ইতিহাস
মুসলমানদের নিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের একটি বানোয়াট ও হাস্যকর ইতিহাস প্রচারণার খন্ডন
, ১৮ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ২৫জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ইতিহাস

কথায় আছে- ইতিহাস না জানা জাতি হয় মূর্খ না হয় চরম পর্যায়ের উগ্র। এই প্রবাদটির উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। ভারতের প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে যদি হিন্দি ভাষায় অনুসন্ধান করা হয় তাহলে কতিপয় তথ্যজালিকা বা ওয়েবসাইট পাওয়া যায় সেখানে এই মূর্খরা বানোয়াট সব ইতিহাস লিখে রেখেছে।
সম্প্রতি দৈনিক আল ইহসান শরীফ উনার ইতিহাস বিভাগের অনুসন্ধানে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের একটি চরম পর্যায়ের হাস্যকর এবং বানোয়াট ইতিহাস দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তারা দাবি করছে যে, ভারতবর্ষে যতবার মুসলমানরা অভিযান পরিচালনা করেছেন তার মূখ্য উদ্দেশ্যই নাকি ছিলো এখানকার উন্নত সভ্যতা। এই সভ্যতায় আকৃষ্ট হয়েই নাকি মুসলমানরা বার বার ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছেন।
অথচ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম এবং মুসলমানদের ভারতবর্ষে আগমনের আগে ভারতের জীবনযাত্রা, শিল্প ও নগরায়ন অর্থাৎ সভ্যতা ছিলো নিতান্তই অনুন্নত এবং ভয়াবহ কুসংস্কারাচ্ছন্ন। মুসলমানরাই ভারতবর্ষকে আধুনিক, মার্জিত সভ্যতা দান করেছেন।
আরো সহজভাবে বলতে গেলে, মুসলমানদের আগমণের পূর্বে ভারতে কোন সভ্যতা ছিলো না, ছিলো কেবল অসভ্যতা। মুসলমানরা এ অঞ্চলের মানুষদেরকে সভ্য করে সভ্যতা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে মুঘল সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ভারতবর্ষে উনার আগমনের সময়ে ভারতের নগরগুলো, তার শিল্প, সভ্যতা ও সংস্কৃতি কেমন ছিলো তা তিনি “তুজুকে বাবরি” গ্রন্থে লিখেছেন- “এখানে ঘোড়ার জন্য কোনো মুক্ত চারণভূমি নেই। আঙ্গুর, নাশপাতি ও ভালো মানের ফল পাওয়া যায় না। বরফের অস্তিত্ব নেই। ঠা-া পানির পরিমাণও খুব সামান্য। নেই ‘হাম্মামখানা’ বা গোসলখানা। ”
তিনি আরও লিখেছেন- “ভারতবাসী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চেনে না। এখানে অস্তিত্ব নেই বাতিঘর ও মশালের। বাতির পরিবর্তে তারা তিন পায়া কাঠ ব্যবহার করে, যার এক পায়াতে লোহার নল থাকে, দ্বিতীয় পায়ায় দুর্বল সলতে থাকে এবং ডান পায়াতে থাকে ছোট ছিদ্র, যা থেকে সলতে বেয়ে তেল নেমে আসে। রাতের বেলা এসব নিম্নমানের আলোর ব্যবহার করে স্থানীয় শাসকরা।
শাসকদের বাগান ও প্রাসাদগুলোতে প্রবহমান ঝরনা ও পানির ব্যবস্থা ছিল না। প্রাসাদগুলো ছিলো অত্যন্ত নোংরা এবং বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থাও ছিল শোচনীয়। বেশিরভাগ মানুষ খালি পায়ে হাটে, ছেড়া কাপড় পরে এবং নারীরা লুঙ্গি (শাড়ি) দিয়ে লজ্জা নিবারণ করে এবং এক প্রান্ত দিয়ে মাথা ঢেকে রাখে। ”
অন্যদিকে, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা প্রচার করে- মুসলিম সিপাহসালাররা নাকি এদেশে অভিযান চালাতেন ভারতবর্ষের সুমিষ্ট ফল-ফলাদি এবং খাদ্যশস্যের জন্য। অথচ, মুসলমানরা আসার আগে এ অঞ্চলে তেমন কোনো ফলই উৎপাদন হতো না। কারণ উন্নত জাতের ফল-ফলাদির চাষের পদ্ধতিই জানতো না এখানকার কৃষকরা। যে ফল পাওয়া যেত তার বেশিরভাগ ছিলো গ্রীষ্মকালীন। আর তাও প্রয়োজন পূরণে পর্যাপ্ত ছিল না।
মুঘলরাই মূলত পুষ্টিকর এবং উন্নত জাতের সব ফল-ফলাদি ভারতবর্ষে চাষ শুরু করেছিলো। কারণ মুঘলরা ছিলেন উচ্চ রুচিসম্পন্ন ও ফলপ্রধান অঞ্চলের বাসিন্দা। মুঘলরা ভারতে বহু ফলের চাষাবাদ শুরু করে। এছাড়া মুঘলরা স্থানীয় কিছু ফলের জাতোন্নয়নে ভূমিকা রাখে। ফলে তা আরো সুস্বাদু হয়।
যেমন- আম ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সুস্বাদু ফল। পূর্বে আমগাছ শুধু বিচি থেকেই উৎপন্ন হতো। কিন্তু মুঘলরা কলম পদ্ধতি প্রয়োগ করে আমের জাত উন্নয়নে অবদান রাখে। ফলে মুঘল শাসনের শেষ ভাগে আমের প্রজাতি একশো ছাড়িয়ে যায়।
মূলত বর্তমান মুসলমান প্রজন্ম ভারতবর্ষে মুসলমানদের গৌরবান্বিত বিজয় ইতিহাস নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখায় না। তাই উগ্রবাদীরা মুসলমানদের নিয়ে এরকম বানোয়াট ইতিহাস প্রচারের সুযোগ পায়। রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যেন মুসলিম উম্মাহকে সঠিক ইতিহাস জানা এবং তা থেকে নছীহত হাছিল করার তাওফিক মুবারক দান করেন। আমিন!
সূত্র-
* তুজুকে বাবরি
* তুজুকে জাহাঙ্গীরি
- মুহম্মদ শাহ জালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২১)
২৪ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইউরোপের কৃষি কাঠামো মুসলমানদেরই হাতে গড়া
২২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করাই ছিলো ব্রিটিশ খ্রিস্টানদের টার্গেট
২০ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইতিহাস চর্চা হওয়া উচিত ছিলো হযরত ওলী-আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী, রাজা-বাদশাহদের রাজত্ব অনুযায়ী নয়
১৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঐতিহাসিক স্থান ও যিয়ারতগাহসমূহ:
১৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২০)
১৭ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভারতের হায়দরাবাদ দখল করে রাখার চাপা ইতিহাস
১৫ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ১১)
১৩ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ১০)
১০ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৯)
১০ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী বিশ্বকোষের আলোকে বালাকোট শহরের স্থাপত্য ও বালাকোট যুদ্ধের ইতিহাস (১)
০৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণে মুসলমানদের অবদান
০৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)