ইতিহাস
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের উট এবং হস্তিবাহিনীর ইতিহাস
, ১৮ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১১ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইতিহাস
ভারতবর্ষে মুসলমান শাসনের সুদীর্ঘ সময়ের একটি বড় অংশ মোঘল সালতানাতের। মোঘল সালতানাতের ব্যপ্তি ছিলো পুরো ভারতবর্ষ তো অবশ্যই পাশাপাশি আফগানিস্তান পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ছিলো। সুবিশাল এই সালতানাতের বিস্তৃতির পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে সেনাবাহিনী। যা ইতিহাসে মোঘল সেনাবাহিনী হিসেবে পরিচিত। এই সেনাবাহিনীর শক্তিশালী দুইটি ইউনিট ছিলো। ১. উটবাহিনী ২. হস্তিবাহিনী।
দুর্দান্ত মোঘল সেনাবাহিনীর অন্যতম শক্তি ছিলো উটবাহিনী। এই বাহিনীটিকে ‘জাম্বুরাক’ বলা হতো। বাদশাহ হুমায়ুন সর্বপ্রথম মোঘল সেনাবাহিনীর জন্য এই জাম্বুরাক বাহিনীটি তৈরি করেন। মরু যুদ্ধের জন্য এই বাহিনীটি ছিলো অদ্বিতীয়। যুদ্ধক্ষেত্রে পদাতিক বাহিনীর পরেই উট বাহিনীকে মোতায়েন করা হতো।
জাম্বুরাক বাহিনীর প্রতিটি উটের উপরে থাকতো ছোট ছোট কামান। এই ছোট কামানগুলোকে ‘সুইভেল গান’ বলা হতো। সুইভেল গানটিকে যন্ত্রের সাহায্যে উটের পিঠের উপর ঘোরানো যেতো। আর ফায়ারিং এর সময় উটগুলোর হাঁটু ভেঙ্গে বসতে হতো।
প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে মোতায়েন করা ছাড়াও পরিবহনের কাজে ব্যবহারের জন্যও বিপুল সংখ্যক উট বরাদ্দ ছিলো। মূলত মরুভূমিতে এসব উট ব্যবহার করা হতো। এই ধরনের উটগুলো বেশ কয়েকদিন পানি পান না করেও প্রায় ২০০ কেজি বোঝাসহ দিনে ৩০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব পাড়ি দিতে পারতো। আর বোঝাশূন্য অবস্থায় জাম্বুরাক বাহিনীটি দ্রুতগামী অশ্বারোহী বাহিনীর সাথেও তাল মেলাতে পারতো। মূলত মরুর প্রাণী হলেও হিন্দুস্তানের পূর্বাঞ্চলের জন্য উটদের প্রতিকূল আবহাওয়ায় বিভিন্ন অভিযানে মোতায়েন করা হতো। দিল্লিসহ আগ্রা, ফৈজাবাদ আর লখনৌতে মোঘল সেনাবাহিনীর জন্য সবসময় ১ লাখ উট প্রস্তুত থাকতো।
হিন্দুস্তানের যুদ্ধের ইতিহাস ঘাঁটলে প্রায় প্রতিটি যুদ্ধেই হাতির দেখা মিলবে। হস্তীবাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে সম্মুখভাগে মোতায়েন করা হতো না। কারণ আহত বা নিহত হলে বিশালাকার হাতির জন্য সেনাবিন্যাস ভেঙ্গে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতো। এ কারণে হস্তীবাহিনীকে মোতায়েন করা হতো যুদ্ধক্ষেত্রের পেছনের দিকে। হস্তীবাহিনীর সামনেই থাকতো মোঘল সেনাবাহিনীর উট বাহিনীটি।
যুদ্ধের সময় হস্তীবাহিনীর মূল লক্ষ্য থাকতো কমান্ডারদের নিরাপত্তা বিধান করা। হাতির উপরে একধরনের মঞ্চ বসানো থাকতো, যাকে ‘হাওদা’ বলা হয়। স্বয়ং বাদশার পক্ষ থেকে যুদ্ধ পরিচালনাকারী কমান্ডাররা এই হাওদায় বসে যুদ্ধক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতেন।
যাই হোক, যুদ্ধের জন্য বিপুল সংখ্যক হাতি সংরক্ষণ করে রাখা হতো। শত্রু সৈন্যরা যদি মোঘল সেনাবাহিনীর কোনো অংশ ভেদ করে মূল সেনাবাহিনীর ভেতরে ঢুকে যেতো, তাহলে দ্রুত সংরক্ষিত হস্তীবাহিনীকে সেসব স্থানে মোতায়েন করা হতো, যাতে মোঘল সেনাবিন্যাস ঠিক থাকে। এছাড়া অবরোধ যুদ্ধের সময় দুর্গ অবরোধ কিংবা দুর্গের দেয়াল ভাঙ্গার কাজে হস্তীবাহিনী ব্যবহৃত হতো। হস্তীবাহিনীকে রসদ পরিবহনের কাজেও ব্যবহার করা হতো।
সম্পাদনায়: মুহম্মদ শাহ জালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪০)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












