ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
, ১০ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৪ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ০২ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ১৭ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “Confession of British Spy and British enmity against Islam গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
যেহেতু অন্যের বপন করা বীজের ফসল আমরা খাচ্ছি, সে কারণে অন্যের জন্য আজ আমরা বপন করে যাচ্ছি। যদি ব্রিটিশরা এই পরিকল্পনা ভালভাবে বাস্তবায়িত করতে পারে তবে পরবর্তীতে সমস্ত খ্রিস্টান সম্প্রদায় সুখে থাকবে এবং বার’শ শতাব্দী জুড়ে বিরাজমান অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করবে।
সচিব বলতে থাকলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ক্রুসেড চালিয়ে কোন ফায়দা হয়নি। মোগল এবং চেঙ্গিস সেনাদলও ইসলামের তেমন কোন ক্ষতি করতে পারেনি। কারণ তাদের কর্মকা- ছিলো অতর্কিত ও অপরিকল্পিত। তারা শত্রু দমনের জন্যে শুধু সামরিক অভিযান চালিয়েছে। ফলে অল্পতেই তারা কাহিল হয়ে পড়তো। কিন্তু এখন আমাদের দক্ষ প্রশাসন চাচ্ছে একটা পরিকল্পিত পন্থায় দীর্ঘ সময়ে ধৈর্য্য সহকারে ইসলামের বিনাশ করতে। আমরাও সামরিক শক্তিকে কাজে লাগাবো। তবে সেটা আসবে চূড়ান্ত পর্যায়ে।
আমরা যখন ইসলামকে পুরোপুরি হজম করতে পারবো এবং যখন ইসলামকে সব দিক থেকে আঘাত হানতে সক্ষম হবো, যখন একে চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেলে দিতে পারবো, ইসলামকে যখন আর পুনরুদ্ধারের মত অবস্থায় পাওয়া যাবে না তখন আমাদের বিরুদ্ধে আর তাদের লড়ার যোগ্যতা থাকবে না।
সচিবের শেষ কথা ছিলো, ইস্তাম্বুলে আমাদের যে সব পদস্থ কর্মকর্তা আছেন তারা অবশ্যই জ্ঞানী ও মেধা সম্পন্ন। তারা আমাদের পরিকল্পনা খুব সূক্ষ্মভাবে বাস্তবায়িত করছেন। তারা সেখানকার মুসলমানদের সাথে মিশছেন এবং তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য মাদরাসা খুলছেন অন্যদিকে গীর্জাও প্রতিষ্ঠা করছেন। শরাব, জুয়া আর অশ্লীলতাকে জনপ্রিয় করার ব্যাপারে এবং ক্লাব ও ফুটবল খেলার মাধ্যমে তাদেরকে দল-উপদলে বিভক্ত করার ব্যাপারে তারা পরিপূর্ণভাবে সার্থক হয়েছে। মুসলমান যুবকদের মনে তারা সন্দেহ প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে, তৈরী করেছে সরকার বিরুদ্ধ দল এবং ভিন্ন মতালম্বী। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে দাঙ্গা ও সন্ত্রাস এবং অন্যায় কার্যকলাপ।
প্রশাসক, পরিচালক ও রাজন্যবর্গ সবার ঘরে ঘরে খ্রিস্টান মেয়েদের চালান করে সবাইকে করেছে নীতিভ্রষ্ট। এসব কুকীর্তির মাধ্যমে তারা সকল শক্তি বিনষ্ট করে, তাদের বিশ্বাসে চিড় ধরিয়েছে। আদর্শের দিক থেকে তাদের অধঃপতিত করে তাদের ঐক্য এবং যোগ্যতাকে বিনষ্ট করেছে। এবার সময় এসেছে যে কোন সময় যুদ্ধ ঘোষণা করার এবং ইসলামকে ধ্বংস করার।
ওহাবী মতবাদ প্রতিষ্ঠার নীল নকশা:
প্রথম গোপন বিষয়টি উপভোগ করার পর দ্বিতীয় গোপন বিষয়টি জানার জন্য আমি (হেমপার) ব্যাকুল হয়ে উঠি। অবশেষে একদিন সচিব আমাকে দ্বিতীয় গোপন বিষয়টি তার প্রতিশ্রুতি মুতাবিক ব্যাখ্যা করলেন। দ্বিতীয় গোপন বিষয়টি ছিলো ৫৩ পৃষ্ঠার একটি স্কীম। এটা তৈরী হয়েছিলো মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার জন্য যারা এক শতাব্দীর মধ্যে ইসলামকে ধ্বংস করার কাজে ব্যবহার করবে। এই স্কীমটিতে ছিলো মোট ১৪টি অনুচ্ছেদ এবং এটি বিশেষভাবে সংরক্ষিত ছিলো যাতে কোনভাবে এটা মুসলমানদের হাতে চলে না যায়।
স্কীমের অনুচ্ছেদগুলো ছিলো নিম্নরূপ:
১. আমাদের এমন একটি শক্তিশালী মিত্র বাহিনী তৈরী করতে হবে এবং রাশিয়ার জারের সাথে চুক্তিতে আসতে হবে যাতে বুখারা, তাজিকিস্তান, আর্মেনিয়া, খোরাসান এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর উপর আক্রমণ চালিয়ে দখল করা যায়। রাশিয়ার সাথে অপর একটি চুক্তি করতে হবে যাতে তুরস্ক দখল করা যায়।
২. ফ্রান্সের সাথেও আমাদের সখ্যতা তৈরী করতে হবে যাতে ইসলামকে ভেতর এবং বাহির দু’দিক থেকেই ধ্বংস করা যায়।
৩. ইরান ও তুরস্ক উভয় দেশের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে বীজ বপন করতে হবে। তাদের উভয়ের মধ্যে জাতীয়তাবোধ এবং সাম্প্রদায়িক ধারণা সৃষ্টিতে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
৪. মুসলিম দেশগুলোর অংশ বিশেষ অবশ্যই অমুসলিম সম্প্রদায়ের হাতে দিতে হবে যেমন মদীনা শরীফকে দিতে হবে ইহুদীদের হাতে। আলেকজান্দ্রিয়া দিতে হবে খ্রিস্টানদের হাতে। তেমনি ইমারা যাবে সাইবার (সার্বিয়া) কাছে। কারমানশাহ (ইরানের একটি প্রদেশ), নুসারিয়া গ্রুপের কাছে। ইরান উপসাগর তুলে দিতে হবে হিন্দুদের নিয়ন্ত্রণে, ত্রিপোলিয়া যাবে দ্রুজদের (এরা ইসমাইলিয়া সম্প্রদায় ভুক্ত) হাতে, কারস (তুরস্কের একটি অঞ্চল) যাবে আলাউসদের হাতে এবং মাসকাট যাবে খারিজী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তী কাজ হবে তাদের হাতে অস্ত্র দেয়া যাতে তারা প্রত্যেকে ইসলামের জন্য গায়ের কাটা হয়ে দাঁড়ায়। তাদের দখলী এলাকার সম্প্রসারণ করতে হবে যাতে ইসলাম মুখ থুবড়ে পড়ে এবং শেষে ধ্বংস হয়ে যায়।
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক খেমকারান যুদ্ধ: যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৬)
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান, যেগুলো সম্পর্কে সচেতন-সতর্ক হওয়া আবশ্যক
১৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আমেরিকা-অটোম্যান নৌ যুদ্ধ
১৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












