ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪১)
, ২১ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৪ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “Confession of British Spy and British enmity against Islam” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
কয়েকদিন পর আমি (হেমপার) মন্ত্রী ও সচিবের নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে এবং আমার পরিজনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বসরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। যখন বিদায় নিচ্ছিলাম, আমার ছেলে বললো, “বাবা তাড়াতাড়ি চলে এসো।” আমার চোখ ভিজে গিয়েছিলো। অনেক কষ্টের পর রাতের বেলায় বসরায় পৌঁছি। যখন আবু রিদার বাড়ীতে পৌঁছলাম তখন সে ঘুমে আচ্ছন্ন। ঘুম থেকে জেগে সে আমাকে দেখে খুব খুশী হলো। সে আমাকে অতিথেয়তা প্রদর্শন করলো। আমি তার ওখানেই রাত অতিবাহিত করি। পরদিন সকালে সে বললো, ওহাবী নজদী আমার এখানে এসেছিলো। সে তোমাকে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠি খুলে পড়লাম।
ওহাবী নজদী লিখেছে, সে তার দেশ নজদে চলে যাচ্ছে। সেখানে তার ঠিকানাও উল্লেখ করেছে। আমি তখনি তার দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। অত্যন্ত ক্লান্তিকর ভ্রমণ শেষে আমি তার ওখানে পৌঁছলাম। আমি তাকে বাড়ীতেই পেলাম। তার ওজন অনেক কমে গিয়েছিলো। অবশ্য সে ব্যাপারে তাকে কিছু বলিনি। পরে জানলাম সে বিয়ে করেছে। আমরা নিজেরা ঠিক করে নিলাম যে, সে মানুষের কাছে আমাকে তার ভৃত্য হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিবে এবং আমাকে তার কাজে কোথাও পাঠিয়েছিলো সেখান থেকে ফিরেছি (বলে আশ্বস্ত করবে)।
ওহাবী নজদী সেভাবেই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো। আমি দু’বছর ওহাবী নজদীর সঙ্গে অবস্থান করেছিলাম। তার দাওয়াত প্রচারের বিষয়ে আমরা একটা কর্মসূচী নেই। শেষ পর্যন্ত হিজরী ১১৪৩ মোতাবেক ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে আমি তাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হই।
ওহাবী নজদী তার চারপাশে কিছু সমর্থক যোগাড় করে তার ঘনিষ্ট লোকজনদের মধ্যে দাওয়াত প্রচার করতে লাগলো। দিনে দিনে তার কার্যক্রম বাড়তে থাকলো। আমি তার চারপার্শে¦ দেহরক্ষীর ব্যবস্থা করলাম শত্রুর আক্রমণ মোকাবেলা করার জন্যে। তারা যা চাইতো সে রকম অর্থ এবং সম্পদ দিতে থাকলাম। যখনই শত্রুরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতো আমি তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতাম। তার আহ্বান যত বাড়তে থাকে তত তার শত্রুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। মাঝে মাঝে সে তার এই দাওয়াতের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে চাইতো। বিশেষত তার উপর ঘন ঘন আক্রমণ হতে দেখে ভীষণ হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু আমি তাকে ছেড়ে কখনো যাইনি বরং তাকে উৎসাহিত করতে থাকি। আমি প্রায়শঃ বলতাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমার চেয়ে অনেক বেশী কষ্ট সহ্য করেছেন। তুমি জেনে রাখো সে পথেই রয়েছে সম্মান ও প্রতিপত্তি। যে কোন বিপ্লবীদের মত তোমাকেও কিছু দুর্যোগ পোহাতে হবে।
আমি জানতাম তার উপর যেকোন মুহূর্তে শত্রুর আক্রমণ হতে পারে তাই শত্রুপক্ষের ভিতর গোয়েন্দা নিয়োগ করেছিলাম। যখন শত্রু তার ক্ষতি করতে চাইতো, গোয়েন্দারা আমাকে জানিয়ে দিতো এবং আমি তা প্রতিহত করতাম। একবার জানলাম, শত্রুরা ওহাবী নজদীকে মেরে ফেলার চেষ্টায় আছে। আমি তখনি তাদের সকল প্রচেষ্টা নষ্ট করে দেয়ার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেই। যখন ওহাবী নজদীর চারপাশের লোক তাকে হত্যার প্রচেষ্টার খবর জেনে যায় তখন তারাও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের ঘৃণা ও নিন্দা করতে থাকে। এতে করে হত্যা লিপ্সু ব্যক্তিরা নিজেরা নিজেদের ফাঁদে আটকে যায়।
ওহাবী নজদী আমাকে অঙ্গীকার করেছিলো যে, স্কিমের ছয়টি ধারাই সে বাস্তবায়িত করবে। সে আরও বলে, কিছু সময়ের জন্য আমি ধারাগুলোর আংশিক বাস্তবায়ন করবো। সে তার সিদ্ধান্তে সঠিক ছিলো কেননা সে সময় সবগুলো ধারা বাস্তবায়ন সম্ভব ছিলো না। সে উপলব্ধি করেছিলো যে, কা’বা শরীফ ধ্বংস করা সম্ভব নয়। ফলে কা’বা শরীফ মূর্তি সদৃশ্য (নাউযূবিল্লাহ)
এ ধারণাটি প্রচার থেকে সে বিরত থাকে। এ ছাড়াও কুরআন শরীফ পরিবর্তন করে ছাপানোর পরিকল্পনাও সে বাদ দেয়।
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের উট এবং হস্তিবাহিনীর ইতিহাস
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪০)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












