ইতিহাস
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
, ২০ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৪ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ১২ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৭ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইতিহাস
বর্তমানে ইউরোপজুড়ে মুসলমানবিদ্বেষ চরম আকার ধারণ করেছে। ইউরোপের অমুসলিম দেশগুলোতে মুসলমানদের উপর চলছে অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়ন। অথচ এই ইউরোপকেই সমৃদ্ধ করেছেন মুসলমানরা। বিশেষ করে আফ্রিকান মুর মুসলমানরা।
শুধু আধুনিক কালেই আফ্রিকার মুসলমানরা ইউরোপকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করেনি, বরং প্রাচীনকালেও ইউরোপে সভ্যতার আলো দান করেছিলেন তারা।
পশ্চিমা বিশ্বের ইতিহাস পড়ানোর সময় মধ্যযুগকে সাধারণভাবে অন্ধকার যুগ বলা হয়। অথচ, এর পেছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র ও বিদ্বেষ। কারণ এই মধ্যযুগে জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতির চরম শিখর স্পর্শ করেছিলেন মুসলমানরা। বিশেষ করে আফ্রিকান মুর মুসলমানরা। মধ্যযুগে আফ্রিকার মুসলমান সালতানাতগুলো জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক উন্নত ছিলো এবং বিশ্বের শিক্ষাকেন্দ্রগুলো আফ্রিকান মুসলমানদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলো। সে সময় ইউরোপীয়রাই মূলত ছিলো অনাচারী বর্বর।
মুসলমান স্পেনে শিক্ষা ছিলো সর্বজনীন। বিপরীতে সে সময় খ্রিস্টান ইউরোপের ৯৯ শতাংশ জনগণ ছিলো নিরক্ষর। এমনকি কোনো কোনো তথাকথিত খ্রিষ্টান শাসক লিখতেও জানতো না। যখন ইউরোপে মাত্র দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো, তখন মুর মুসলমানদের ছিলো সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তীতে মুসলমান স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিদর্শনের পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলো।
বর্তমান বিশ্বের সর্বপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হলো মরক্কোর আল-কারউইন বিশ্ববিদ্যালয়, যা মুর সালতানাতের স্বর্ণযুগে ৮৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ফাতেমা আল-ফিহরি নামক একজন মুর নারীর মাধ্যমে।
আধুনিক যুগের ইউরোপ যেসব বিষয় নিয়ে গর্ব করে তাদের অনেক কিছুই তারা মুসলমান স্পেন থেকে লাভ করেছিলো। বিশেষত মুক্ত বাণিজ্য, কূটনীতি, মুক্ত সীমান্ত, শিষ্টাচার, উন্নত সমুদ্রযাত্রা, গবেষণা পদ্ধতি ও রসায়নের মৌলিক উন্নতি।
যখন মুররা ছয়শ’র বেশি পাবলিক গোসলখানা তৈরি করেছিলেন এবং মুসলমান শাসকরা জমকালো প্রাসাদে বসবাস করতেন, তখন জার্মানি, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের শাসকরা জনসাধারণকে বোঝাতো পরিচ্ছন্নতা পাপ এবং ইউরোপীয় শাসকরা বড় শস্য গুদামে বসবাস করতো। যেখানে না ছিলো কোনো জানালা, না ছিলো কোনো চিমনি। ছাদে শুধু একটি ছিদ্র রাখা হতো ধোঁয়া বের হওয়ার জন্য।
দশম খ্রিস্টাব্দে কর্ডোভা শুধু স্পেনের রাজধানী ছিলো না, বরং এটা ছিলো ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আধুনিক শহর। সে সময় কর্ডোভায় পাঁচ লাখ মানুষ বাস করতো। এই শহরের ছিলো সড়ক বাতি, ৫০টি হাসপাতাল, পানির সরবরাহ ব্যবস্থা, পাঁচশ’ মসজিদ ও ৭০টি পাঠাগার। যার একটি পাঠাগারে ছিলো পাঁচ লক্ষাধিক বই। মুসলমান স্পেন যখন সামাজিক জীবনে এসব অগ্রগতি অর্জন করেছে, তখন লন্ডন ছিলো ২০ হাজার মূর্খ মানুষের বসতি। লন্ডন ও প্যারিসে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সড়ক বাতি ও পাকা রাস্তা দেখা যায়নি। তখন ক্যাথলিক চার্চ অর্থ ঋণ দেওয়া নিষিদ্ধ করেছিলো, যা অর্থনৈতিক উন্নতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিলো। মধ্যযুগের ইউরোপ ছিলো এমন এক দুর্ভাগ্যজনক জায়গা, যা কুৎসা, বর্বরতা, অশিক্ষা ও রহস্যবাদে পরিপূর্ণ। কিন্তু মুসলমানরা সে সময় ছিলেন সর্বোন্নত।
সম্পাদনায়: মুহম্মদ শাহজালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক খেমকারান যুদ্ধ: যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৬)
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












