একমাত্র হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের অনুসরণে ‘খিলাফত’ ব্যবস্থা জারী করার মাধ্যমেই এদেশবাসী প্রকৃত সুখ-শান্তি ও ইনছাফ লাভ করতে পারবে (১)
, ১০ ই জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৬ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৮ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
‘খিলাফত’ হচ্ছে মুসলমানদের একমাত্র শাসন ব্যবস্থা। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করে হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা যেভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন, সেটাই হচ্ছে খিলাফত। খিলাফতের অপর নাম শান্তি ও ইনছাফ। খিলাফত ক্বায়িম হওয়ার অর্থ হলো দুনিয়ার যমীনটা জান্নাতে পরিণত হয়ে যাওয়া। যা পৃথিবীবাসী হাক্বীক্বীভাবে উপলব্ধি করেছিলো হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের খিলাফতকালে। বর্তমানে যদি উনাদের অনুসরণে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে জনগণ অনুরূপ সুখ-শান্তি ও ইনছাফ লাভ করতে পারবে। সুবহানাল্লাহ!
মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “আমার খিলাফতকালে সুদূর ফুরাতের তীরে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায়, তাহলে এজন্য আমাকে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট জবাবদিহি করতে হবে। ” সুবহানাল্লাহ!
এর মানে বুঝা গেলো যে, উনার খিলাফতকালে জিন-ইনসান তো পূর্ণ নিরাপত্তা, পূর্ণ শান্তি, পূর্ণ ইতমিনান পেয়েছিলোই; শুধু তাই নয়, এমনকি পশু-পাখিরাও পেয়েছে পূর্ণ নিরাপত্তা, পূর্ণ শান্তি, পূর্ণ ইতমিনান। উনার খিলাফতকালে মানুষ তো দূরের কথা কোনো পশু-পাখিও না খেয়ে মারা যায়নি। সুবহানাল্লাহ!
দ্বিতীয় খলীফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে বাঘ ও মহিষ একই ঘাটে এক সাথে পানি পান করতো। তাদের মাঝে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো না। বাঘ মহিষকে আক্রমণও করতো না। সুবহানাল্লাহ!
এরূপ অবস্থা ৮ম খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়ও ছিলো। হযরত মূসা ইবনে আয়মন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
كانت الأسد والغنم وَالْوَحْشُ تَرْعَى فِي خِلَافَةِ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ العزيز رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ في موضع واحد فعرض ذات يوم لِشَاةٍ مِنْهَا ذِئْبٌ فَقُلْتُ إِنَّا لِلَّهِ مَا أَرَى الرَّجُلَ الصَّالِحَ إِلَّا قَدْ هَلَكَ قَالَ فَحَسَبْنَاهُ فَوَجَدْنَاهُ قَدْ هَلَكَ فِي تِلْكَ اللَّيْلَةِ
অর্থ: “হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিলাফতকালে সিংহ, ছাগল, ভেড়া, মেষ এবং অন্যান্য হিং¯্রপ্রাণী একই চারণভূমিতে অবস্থান করতো। সুবহানাল্লাহ! একদিন একটি বাঘ একটি মেষের পিছু নিলো। তখন আমি ‘ইন্না লিল্লাহ্’ পড়ে ভাবলাম, আমার তো মনে হয়- মহান আল্লাহ পাক উনার সেই নেক বান্দা অর্থাৎ হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্মানিত বিছাল শরীফ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা দিন গণনা করে হিসাব করে দেখলাম, হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেই রাতেই সম্মানিত বিছাল শরীফ গ্রহণ করেছেন। ” (মুখতাছারু তারীখে দিমাশক্ব ৬/৮২, আল বিদায়াহ্ ওয়ান নিহায়াহ্ ৯/২২৮)
যদি বনের প্রাণীদের মাঝে এরূপ সুখ-শান্তি, ইতমিনান ও ইনছাফ বিরাজ করে, তাহলে মানুষের মাঝে কতটুকু সুখ-শান্তি, ইতমিনান, সুশৃঙ্খলতা ও ইনছাফ প্রতিষ্ঠিত ছিলো, সেটা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। সুবহানাল্লাহ!
তাহলে খিলাফত মানব জাতির জন্য, গোটা কায়িনাতবাসী সকলের জন্য কতটুকু সুখ, শান্তি ও ইতমিনানের কারণ, তা অতি সহজেই অনুমেয়। সুবহানাল্লাহ!
বিশেষ করে তৃতীয় খলীফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে সম্মানিত মুসলমান উনারা এতোই অধিক সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ, স্বচ্ছলতা ও প্রাচুর্যতার মধ্যে ছিলেন যে, তখন পবিত্র যাকাত গ্রহণ করার মত কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যেতো না। অর্থাৎ সবাই এতো অধিক ধনী ছিলেন যে, সবাই পবিত্র যাকাত প্রদান করতেন। পবিত্র যাকাত গ্রহণ করার মতো কেউ ছিলেন না। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, “তখন সম্মানিত মুসলমান উনাদের এতো অধিক স্বচ্ছলতা ছিলো যে, উনারা পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কাপড়, কাত্তানের কাপড় দিয়ে নাক মুবারক পরিষ্কার করতেন। ” সুবহানাল্লাহ!
এতো দামি কাপড় দিয়ে যদি নাক মুবারক পরিষ্কার করা হয়, তাহলে সম্মানিত মুসলমান উনারা কত অধিক স্বচ্ছলতা ও সুখ-শান্তির মধ্যে ছিলেন, তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। সুবহানাল্লাহ!
তখন হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনিসহ আরো অনেক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা কান্নাকাটি করতেন যে, এতো অধিক সুখ-শান্তি! উনাদের সমস্ত বদলা কি দুনিয়াতেই দেয়া হয়ে গেলো? সুবহানাল্লাহ!
ঠিক একই অবস্থা ৮ম খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময় ছিলো। সুবহানাল্লাহ! এই প্রসঙ্গে হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনে সা‘ঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমাকে হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আফ্রিকায় পবিত্র যাকাত আদায়ের দায়িত্বে নিযুক্ত করেন। আমি পবিত্র যাকাত আদায় করে ফক্বীর-ফুক্বারা, গরীব-অস্বচ্ছল লোকদের সন্ধানে বের হলাম যাদের মধ্যে পবিত্র যাকাত উনার এই অর্থ বিতরণ করতে পারি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় একজন ফক্বীর বা গরীব লোকও পেলাম না এবং এমন একজন লোকেরও সাক্ষাৎ পেলাম না যিনি আমার থেকে পবিত্র যাকাত গ্রহণ করবেন।
قَدْ اَغْنٰـى حَضْرَتْ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيْزِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَلنَّاسَ فَاشْتَرَيْتُ بِـهَا رِقَابًا فَاَعْتَقْتُهُمْ
‘হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সবাইকে ধনী বানিয়ে দিয়েছিলেন। অতঃপর পবিত্র যাকাত উনার অর্থ দ্বারা আমি কিছু গোলাম ক্রয় করে তাদেরকে মুক্ত করে দেই’। ” সুবহানাল্লাহ!
তাহলে তখন সম্মানিত মুসলমান উনারা কত অধিক সুখ-শান্তিতে ছিলেন, তা ফিকিরের বিষয়। মূলত তখন দুনিয়াটা হয়েছিলো সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার একখানা অংশ। সুবহানাল্লাহ!
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৬)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানিকারীর একমাত্র শরঈ শাস্তি হচ্ছে ‘মৃত্যুদন্ড’ (২)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৫)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানিকারীর একমাত্র শরঈ শাস্তি হচ্ছে ‘মৃত্যুদন্ড’ (১)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৪)
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৯)
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৩)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৮)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












