ঘটনা থেকে শিক্ষা:
এক দুনিয়াত্যাগী আল্লাহওয়ালী রাজকন্যা
, ২৫ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৩ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ৩১ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ১৬ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বনী ইসরাঈলের এক রাজকন্যা ছিলেন বড় আবেদা ও আল্লাহওয়ালী। উনার দ্বীনদারী ও পরহেজগারী দেশময় প্রসিদ্ধ ছিল। একবার এক রাজপুত্র উনাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলে তিনি কোন প্রকার ভূমিকা ছাড়াই ঐ প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেন। পরে তিনি উনার বাঁদীকে বললেন, আমার জন্য একজন ফকীর কিসিমের আবেদ-যাহেদ ও নেকপাত্র সন্ধান করো। বাঁদী বহু সন্ধান করে একজন গরীব নেককার পাত্র এনে হাজির করলো। রাজকন্যা যুবককে সরাসরি বললেন, আপনি যদি আমাকে বিবাহ করতে সম্মত হন, তবে এখনি কাজীর নিকট চলুন; সেখানে আমাদের বিবাহ হবে। রাজকন্যার প্রস্তাবে যুবক সম্মত হলেন এবং যথাসময় উনাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়ে গেল।
বিবাহের পর যুবক উনার আহলিয়া (স্ত্রীকে) বললেন, আপনাদের বাড়ীতে চলুন। জবাবে রাজকন্যা নিজের পরিধেয় কম্বলটি দেখিয়ে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ! এই কম্বলটি ব্যতীত আমার সম্পদ বলতে আর কিছুই নাই। দিনের বেলা ইহা পরিধান করি এবং রাতেও ইহাই গায়ে জড়িয়ে শয়ন করি। নব পরিণীতা রাজকন্যার মুখে এই কথা শুনে যুবক কিছুমাত্র বিচলিত না হয়ে বললেন, আমি আপনার এই অবস্থার উপরই সন্তুষ্ট আছি।
গরীব যুবক রাজকন্যাকে বিবাহ করে উনার জীর্ণ কুটিরে এনে উঠালেন। তিনি দিনভর মেহনত করে সন্ধ্যায় আহলিয়ার জন্য সামান্য আহার নিয়ে ঘরে ফিরতেন। আহলিয়া প্রতিদিন উহা দ্বারাই ইফতার করে মহান আল্লাহ পাক উনার শোকরিয়া আদায় করতেন।
ঘটনাক্রমে একদিন যুবক উনার আহলিয়ার জন্য কিছুই সংগ্রহ করতে পারলেন না। দিন শেষে পেরেশান হয়ে তিনি ভাবতে লাগলেন, আহলিয়া নিশ্চয়ই এখন আমার পথপানে তাকিয়ে অপেক্ষা করতেছেন। আমি ঘরে গেলে তিনি ইফতার করবেন। অথচ আজ উনার জন্য কিছুই সংগ্রহ করতে পারি নাই। মনে মনে তিনি এই সকল কথা ফিকির করে পেরেশান হলেন বটে, কিন্তু আহলিয়ার ইফতারের কোন ব্যবস্থা করতে পারলেন না। অবশেষে তিনি ওযূ করে দু’ রাকায়াত নামায আদায়ের পর মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে আরজ করলেন-
“আয় দ্বীন-দুনিয়ার মালিক মহান আল্লাহ পাক! আপনি তো ভাল করেই জানেন যে, আমি কখনো আপনার নিকট দুনিয়ার কোন বস্তু প্রার্থনা করি নাই। কিন্তু আজ আমার অভুক্ত আহলিয়ার জন্য আপনার দরবারে হাত তুলেছি। আমার নব বিবাহিতা আহলিয়া দিনভর রোযা রেখে ইফতারের এই পূর্বমুহূর্তে আমার জন্য অপেক্ষা করতেছেন। অথচ আজ আমি উনার জন্য কিছুই সংগ্রহ করতে পারি নাই।
আয় বিশ্বজাহানের মহান মালিক! আপনার ধনভান্ডরে তো কোন কিছুরই অভাব নাই। আমি আপনার নিকট রিযিক প্রার্থনা করতেছি। আপনিই সকলকে রিযিক দান করে থাকেন। ”
যুবকের এই মোনাজাত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ হতে একটি মুক্তা এসে উনার সম্মুখে পতিত হলো। মুক্তাটি কুড়িয়ে নিয়ে ঘরে এনে তিনি উহা আহলিয়ার হাতে দিলেন। আহলিয়া ঐ মুক্তা দেখামাত্র আহালকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি ইহা কোথায় পেয়েছেন? এমন মূল্যবান মুক্তা তো আমাদের রাজমহলেও দেখি নাই।
জবাবে উনার আহাল (স্বামী) ঘটনার বিবরণ দিয়ে বললেন, আজ সারা দিন পথে পথে ঘুরেও আপনার আহারের ব্যবস্থা করতে পারি নাই। অথচ আপনি ইফতারের জন্য আমার অপেক্ষায় বসে আছেন। আমারও খালি হাতে ফিরে আসতে লজ্জাবোধ হচ্ছিল। পরে আমি আমার সকল দুঃখের কথা জানিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করলাম। দোয়া করার সঙ্গে সঙ্গে আসমান হতে এই মুক্তাটি আমার সম্মুখে পতিত হয়। ঘটনার বিবরণ শুনে আহলিয়া বললেন, আপনি এখনি এই মুক্তা নিয়ে সেখানে চলে যান এবং কান্নাকাটি করে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এইরূপ দোয়া করুন-
“আয় মহান আল্লাহ পাক! এই মুক্তা যদি আমাকে দুনিয়ার রিযিক হিসেবে দিয়ে থাকেন, তবে এতে আমাকে বরকত দান করুন। আর যদি আমাদের আখেরাতের অংশ হতে দিয়ে থাকেন, তাহলে এখুনি ইহা উঠিয়ে নিন। ” যুবক আহলিয়ার কথামত সেই স্থানে গিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে মোনাজাত করলেন। উনার মোনাজাত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মহান আল্লাহ পাক তিনি ঐ মুক্তা আকাশে উঠিয়ে নিলেন। অতঃপর তিনি ঘরে ফিরে আসলেন। ঘটনার বিবরণ শুনে আহলিয়া বললেন, ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার শোকর যিনি আমাদেরকে এমন বস্তু দেখিয়েছেন যা আমাদের জন্য পরকালে সঞ্চিত রাখা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
-আল্লামা সাইয়্যিদ আহমদ শুয়াইব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












