হক্কানী উলামায়ে কিরাম তথাকথিত আহলে হাদীছদের বিরোধিতা করেন কেন:



পৌত্তলিকতার অন্ধকারে নিমজ্জিত এ উপমহাদেশে যেদিন থেকে একমাত্র মুক্তির পথ সম্মানিত ইসলাম উনার আলো ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই দ্বীনী মাসায়েলে একতার প্লাটফর্মে ছিল উপমহাদেশের সমস্ত মুসলমান। মসজিদে, ঈদগাহে, জানাযা ও তারাবীহ জামাতে কোন বিবাদ ছিল না। ছিল না মসজিদের মত পবিত্র স্থানে কোন বিভক্তির নোংরা আঁচড়। ধনী দরিদ্র সবাই মিলে একত্রিত হয়ে আদায় করতো নামায।

কিন্তু ইংরেজরা সেই একতা সইতে পারেনি। তাদের পুরনো থিউরী “ডিবাইট এন্ড রোলস” বাস্তবায়ন করতে শুরু করে কার্যক্রম। রাজনৈতিক সকল মতাদর্শী যেখানে এক কাতারে একতাবদ্ধ হতো সেই মসজিদের একতার কাতারে ফিতনা বিভক্তি ঢুকানোর জন্য শুরু হলো ষড়যন্ত্র। সৃষ্টি করলো “আহলে হাদীছ” নামক একটি সুন্দর নামের আড়ালে বিষধর এক সর্প। যাদের ছোবলে আজ মুসলিম ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে মসজিদে। ছড়িয়ে পড়ছে দ্বন্দ্ব। বছরের দু’টি আনন্দের স্থান ঈদগাহ থেকে নিয়ে জীবনের সবচেয়ে’ শোকাতুর সময়ের জানাযা নামায পর্যন্ত।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে সূত্র পরম্পরায় সম্মানিত ইসলাম আসার পর থেকে এ উপমহাদেশে যে আমল চলে আসছে সেই আমল ও আক্বীদার বিপরীত যেসব ভ্রান্ত আক্বীদার বীজ বপন করে মুসলমানদের একতাকে বিনষ্ট করে ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ সৃষ্টি করছে এসব নামধারী আহলে হাদীছ/লা-মাযহাবী/শব্দধারী মুসলিম জামাতের লোকেরা তার একটি ঝলক তাদের কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে নিচে উপস্থাপন করা হলো। আশা করা যায়, এর দ্বারা সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে এ ফিরক্বার মানসিকতা কতটা জঘন্য ও ঈমান বিধ্বংসী।

কথিত আহলে হাদীছ নামধারীদের প্রকাশিত বই থেকেই তাদের উম্মতের বিভক্তকারী আক্বীদা ও আমল ও বিদ্বেষমাখা কথাগুলো হুবহু উদ্ধৃত করা হচ্ছে-

(১) সারা পৃথিবীর মানুষ কালিমার মধ্যে আল্লাহ ও মুহম্মদকে এক করে আল্লাহ ও মুহম্মদকে দুই ভাই বানিয়ে ফেলেছে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!! [তথ্যসূত্র: ইসলামের মূলমন্ত্র কালিমা তয়্যেবাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ৯ পৃষ্ঠা, লেখক- আব্দুল্লাহ ফারুক বিন আব্দুর রহমান]

(২) লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ এটা কোন পবিত্র বাক্য নয়। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!! [কালিমার মর্মকথা, ৩১৮ পৃষ্ঠা, লেখক- আকরামুজ্জান বিন আব্দুস সালাম]

(৩) হানাফী ইহুদীদের অভ্যাস হলো তারা কুরআনের মাঝে কম-বেশি করে কুরআনের হুকুম অস্বীকার করে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!! {মাসায়েলে গাইরে মুকল্লিদীন, ৪৭ পৃষ্ঠা, লেখক- মাওলানা আবু বকর গাজিপুরী]

(৪) কোন নবী বা অন্য কোন সৎ আমলকারীর কবর জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ নেই। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!! {দ্বীন ইসলামের জানা অজানা, ১১৯ পৃষ্ঠা, লেখক- ড. ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ]

(৫) “ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কথা দলীলস্বরূপ পেশ করা যাবে না। ” নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!! [আর রওজাতুল নাদীয়া, ১/১৪১ পৃষ্ঠা] এবং উনাদের বুঝ নির্ভরযোগ্য নয়। আর রওজাতুল নাদীয়া, ১/১৫৪ পৃষ্ঠা, লেখক- নবাব সিদ্দীক হাসান খান]

(৬) “সাহাবীদের কথা প্রমাণযোগ্য নয়”। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!! {ফতওয়ায়ে নজীরিয়া, ১/৩৪০ পৃষ্ঠা, লেখক- মিয়া নজীর হুসাইন দেহলবী]

(৭) “সাহাবাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক ফাসেকও ছিলেন, যেমন-ওয়ালিদ, তেমনিভাবে মুয়াবিয়া, উমর, মুগীরা ও সামুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমুখ সম্বন্ধেও অনুরূপ বলা যেতে পারে”। (!) নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!! [নুযুলুল আবরার, ২/৯৪ পৃষ্ঠা, লেখক- নবাব ওহীদুজ্জামান খান]

(৮) “তাক্বলীদ হচ্ছে ঈমানদারদের জন্য শয়তানের সৃষ্ট বিভ্রান্তি। ” নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!! [কাটহুজ্জাতীর জওয়াব, ৮৩ পৃষ্ঠা, লেখক- আবু তাহের বর্ধমানী]

(৯) “মুক্বাল্লিদগণকে মুসলমান মনে করা উচিত নয়। ” নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!! [তাওহীদী এটম বোম, ১৫ পৃষ্ঠা, লেখক- মাওলানা আব্দুল মান্নান সিরাজনগরী (বগুড়া)]

(১০) “মাযহাবীগণ ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত, তাদের মধ্যে ইসলামের কোন অংশ নেই। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!! [তাম্বিহুল গাফেলীন, আব্দুল কাদির রচিত ৭ পৃষ্ঠা]

(১১) ”চার ইমামের মুক্বাল্লেদ এবং চার তরীক্বার অনুসারীগণ মুশরিক ও কাফির। ” নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!! [ইতেছামুস সুন্নাহ ৭-৮ পৃষ্ঠা, লেখক- আব্দুল্লাহ মুহাম্মদী]

(১২) পাঞ্জাবী, টুপি এগুলো সুন্নতী পোশাক নয় বরং ভিক্ষা বৃত্তির পোশাক। ইসলামে সুন্নতী পোশাক বলতে কোন পোশাক নেই। বরং প্রত্যেক দেশের প্রচলিত পোশাকই সুন্নতী পোশাক এবং যে পোশাক যার কাছে ভাল লাগে তাই সুন্নতী পোশাক তবে শর্ত হলো উক্ত পোশাক দেখতে সুন্দর হতে হবে। টুপি পাগড়ী পড়লে সুন্দর লাগে এতটুকুই কিন্তু এগুলোকে সুন্নতী পোশাক বলা যাবে না। কেননা, পাগড়ি হলো সুদান, আফগানিস্তান, ইরান আর ভারতের শিখদের পোশাক। এটা কোন সুন্নতী পোশাক নয়। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!! {দ্বীন ইসলামের জানা অজানা, ২১২-২১৩ পৃষ্ঠা, লেখক- ড. ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ]

(১৩) হানাফীরা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরীকা অনুযায়ী নামায আদায় করে না, কেননা তাদের ধর্ম ইসলাম নয় বরং হানাফী, তাদের প্রভু আল্লাহ নয় বরং আবূ হানীফা, তাদের নবী মুহাম্মদ নয় বরং উলামায়ে আহনাফ। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!! {মাসায়েলে গাইরে মুকাল্লিদীন, ৪৯ পৃষ্ঠা, লেখক- মাওলানা আবু বকর গাজিপুরী]

(১৪) হানাফীরা যদিও যাহেরীভাবে কালেমা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ” বলে কিন্তু তাদের আসল কালিমা হলো- “লা ইলাহা ইল্লা আবু হানীফা ওয়া উলামাউল আহনাফ আরবাবুন মিন দুনিল্লাহ”। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!! {মাসায়েলে গাইরে মুকাল্লিদীন, ৪৯ পৃষ্ঠা, লেখক- মাওলানা আবু বকর গাজিপুরী] (চলবে)

-০-