কাফেরদের দীর্ঘমেয়াদী চক্রান্তে পানির সমস্যায় ভুগছে লিবিয়ার মুসলমানরা আর কত কাল গেলে কাফেরদের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মুসলমানরা সচেতন হবে???
, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মরুভূমির দেশ লিবিয়ায় তেলের অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে আবিষ্কৃত হয় বিশাল পানিধার, কিন্তু তা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হয়নি
উত্তর আফ্রিকায় অবস্থিত একটি দেশ লিবিয়া। দেশটির বেশির ভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে রুক্ষ ও শুষ্ক সাহারা মরুভূমি। এর উত্তরে ভূমধ্যসাগর, পূর্বে মিশর, দক্ষিণ-পূর্বে সুদান, দক্ষিণে চাদ ও নাইজার এবং পশ্চিমে আলজেরিয়া ও তিউনিশিয়া।
আনুমানিক ৯০ শতাংশ মরুভূমি দিয়ে ঘেরা লিবিয়া এতটাই শুষ্ক যে, এর সীমানা দিয়ে কোনও স্থায়ী নদী প্রবাহিত হয় না। সামান্য বৃষ্টির পানি দিয়ে সারা বছরের পানির চাহিদা পরিপূর্ণ করা অসম্ভব। সেচের কাজও দূরস্থান। বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে গোটা দেশে সবুজের ছোঁয়া নেই বললেই চলে। দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা এবং কম বৃষ্টিপাতের কারণে পানি সরবরাহের তীব্র সঙ্কটে ভুগছিলো মরুদেশটি। বিশেষত পাহাড়ি অঞ্চলে পানি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে প্রবল বাধার সম্মুখীন হতেন সে দেশের বাসিন্দারা।
লিবিয়ার বেশির ভাগ পানি সরবরাহের উৎস ছিলো উপকূলে অবস্থিত ব্যয়বহুল ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট। যে সামান্য জমিতে চাষের কাজ হতো, সেখানে সেচের জন্য খুব কম পরিমাণ পানিই অবশিষ্ট থাকত।
এই সেচের পানি ছিলো মরুভূমির দেশের কৃষি কাজের একমাত্র বিকল্প। উপকূলের কাছাকাছি বৃষ্টি-নির্ভর পানিধারের উপর ভরসা করেই চলতো চাষ-বাসের কাজ। সমস্যা আরও বাড়ে, যখন দেশের অন্যতম বড় শহর ত্রিপোলিতে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহৃত উপকূলীয় পানিধারগুলি ক্রমে দূষিত হয়ে ওঠে এবং এর লবণাক্ত ভাব ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলো সে দেশের সরকার।
আর ঠিক সেই সময়ে হয় এক আশ্চর্য্য আবিষ্কার। তেলের অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানীয় আবিষ্কার হয় দেশটিতে। খনিজ তেলের সন্ধান না পাওয়া গেলেও পানির যে বিশাল ভান্ডার আবিষ্কৃত হয় তাতে পাল্টে যায় লিবিয়ার ইতিহাস। হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো অবস্থা হয় দেশবাসীর। মরুদেশের ভূগর্ভের নীচে যে পরিমাণ পানির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিলো, তা দিয়ে নাকি গোটা পৃথিবীর ৪০ বছরের পানির প্রয়োজন মেটানো সম্ভব!!!
পরবর্তী বিশ্লেষণে দেখা যায়, এটি ‘নুবিয়ান স্যান্ডস্টোন অ্যাকুইফার’ নামের জীবাশ্ম পানির একটি বিশাল আধারের অংশ। এই জমা পানির সমুদ্র দিয়ে মরুভূমির দেশে সাপ্লাই সহজলভ্য করার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম সেচ প্রকল্পের সূচনা করেন তৎকালীন শাসক। যুগান্তকারী এই প্রকল্প ‘গ্রেট ম্যান-মেড রিভার প্রকল্প’ নামে পরিচিত। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে এর মাধ্যমে গোটা দেশের পানির ঘাটতির সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালায় সেই দেশের সরকার।
তবে এই কাজটি কিন্তু মোটেই সহজ ছিলো না। কারণ পানিভান্ডারটি আবিষ্কৃত হয়েছিলো লিবিয়ার দক্ষিণ অংশে। অথচ এই দেশের সিংহভাগ জনসংখ্যা ও শহর ছিল উত্তর লিবিয়ায়। রাজধানী ত্রিপোলি, বেনগাজী, ডারনার মতো ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় পানি সরবরাহ করায় বিস্তর বাধা ছিলো। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে লিবিয়ায় পানি দ্রুত শুকিয়ে যায়। তাই মাটির উপর দিয়ে খাল কেটে বা কৃত্রিম নদী তৈরি করে সেই পানি পরিবহণ করা সম্ভব ছিলো না।
এ ক্ষেত্রে একটাই পন্থা, মাটির নীচে পাইপ দিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তরাংশে পানি পরিবহণ। হিসাব করে দেখা যায়, দেশের প্রতিটি শহরে এই নদীর মিষ্টি পানীয় পৌঁছে দিতে ২৮২০ কিলোমিটার পাইপ বসাতে হবে। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা শুরু করে গদ্দাফি সরকার। ১৯৮৩ সালে প্রকল্পটি পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় ‘গ্রেট ম্যান-মেড রিভার অথরিটি’।
১৯৮৪ সালের আগস্ট মাসে সূচনা হয় ‘গ্রেট ম্যান-মেড রিভার’ প্রকল্পের। ১৬০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে লিবিয়ায় ব্যবহৃত সমস্ত মিঠে পানির চাহিদার ৭০ শতাংশ মেটানো হয়েছিলো এই পানি দিয়েই। নদীর পানি বয়ে আনার জন্য বিশালাকার পাইপের প্রয়োজন হয়। সেগুলি এক একটি চওড়ায় ১৩ ফুট ও ৮০ টন ওজনের ছিলো। প্রকল্পটি শেষ করতে কংক্রিট ও ইস্পাত দিয়ে বানানো মোট ৫ লাখ পাইপ ব্যবহার করা হয়। তাজিরবু এবং সারিরেতে খনন করা হয় ১৩০০ কুয়ো। কুয়োগুলি ছিলো ৫০০ মিটারের বেশি গভীর।
গোটা প্রকল্পটি শেষ করতে ২৫০০ কোটি ডলার খরচ হয়েছিলো। এই প্রকল্পের পানি দিয়ে ৬০ লক্ষ মানুষের দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছিলো। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পর লিবিয়ার শাসক গদ্দাফি একে পৃথিবীর ‘অষ্টম আশ্চর্য’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের সফল রূপায়ণের পর আরও তিনটি ধাপের কাজ চলতে থাকে।
২০১১ সালে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে দেশবাসী। পতন হয় সরকারের। নেপথ্যে ছিলো ন্যাটো বাহিনী। ন্যাটোর বিমান বাহিনীর হামলায় প্রকল্পের জন্য পাইপ তৈরির দু’টি কারখানার মধ্যে একটি ধ্বংস হয়ে যায়। ২০১১ থেকে টানা গৃহযুদ্ধের ফলে পানি প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিকাঠামোর অবনতি ঘটে। ১০ এপ্রিল ২০২০ তারিখে ত্রিপোলি এবং পার্শ্ববর্তী শহরগুলিতে পানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণকারী একটি স্টেশন সশস্ত্র গোষ্ঠী দখল করে নেয়। ফলে ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষের কাছে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
-মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












