কারো প্রতি বদ দুআ বা অভিশাপ দেয়া অন্যায়
, ২১ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৭ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوْا فَقَدِ احْتَمَلُوْا بُهْتَانًا وَّإِثْمًا مُّبِيْنًا
অর্থ: যারা বিনা অপরাধে ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার মহিলাদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্যে পাপের বোঝা বহন করে। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন ব্যক্তি অপর কাউকে ফাসিক বলবে না এবং কুফরীর অপবাদও দিবে না। কেননা সেই ব্যক্তি সেরূপ না হলে তবে তার অপবাদ নিজের উপরই বর্তাবে। (বুখারী শরীফ)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি কাউকে কাফির বলে ডাকে অথবা মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন বলে অথচ যাকে বলা হয়েছে সে তা নয় তখন উক্ত বাক্যটি তার নিজের উপরই প্রত্যাবর্তন করবে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, মুসলমান লা’নত তথা অভিশাপ দেয় না।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কতিপয় ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরসহ সফরে ছিলেন। এমন সময় জনৈকা মহিলা দলের একটি উটকে অভিসম্পাত করল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই অভিশপ্ত উটটিকে দল থেকে বের করে দিতে আদেশ মুবারক করলেন। উনার আদেশ মুবারক অনুযায়ী উটটিকে ছেড়ে দেয়া হলো, উটটি স্বেচ্ছায় বহুদিন এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াল। কিন্তু অভিশপ্ত বলে কেউই তার নিকটবর্তী হল না।
হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, ভূমি বা কোন পদার্থকে লা’নত করলে তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট বলতে থাকে, আমাদের মধ্যে যে অধিক পাপী, তার উপর লা’নত বর্ষিত হোক। বস্তুত ভূমি কিংবা কোন পদার্থ পাপী হয় না বরং মানুষ পাপী হয়ে থাকে।
বর্ণিত রয়েছে, খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি একবার কোন পদার্থকে লা’নত করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা শুনে বললেন, হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম! ছিদ্দীক্ব হয়েও আপনি লা’নত করলেন? এটা আপনার জন্য সঙ্গত হয়নি। কা’বা শরীফ উনার কসম! আপনি ছিদ্দীক্ব। লা’নত করা আপনার পক্ষে সমীচীন নয়। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি তৎক্ষনাত তওবা করলেন এবং কাফফারা স্বরূপ একটি গোলামকে আযাদ করে দিলেন। (কিমিয়ায়ে সাআদাত)
কোন মানুষের প্রতিই লা’নত করা উচিত নয়। তবে আমভাবে পাপীদের প্রতি লা’নত করা যেতে পারে। যেমন যালিম, কাফির, ফাসিক ও বিদ্আতীর প্রতি লা’নত। যে সকল সম্প্রদায় সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালায় অভিশপ্ত তাদের অভিশাপ দেয়া যেতে পারে। এছাড়া যারা কাফির অবস্থায় পরলোক গমন করেছে বলে সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, তাদেরকেও লা’নত করা যেতে পারে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অল্প সংখ্যক কাফিরদেরকে নাম নিয়ে লা’নত করেছিলেন। তিনি জানতেন যে, তারা মুসলমান হবে না। বরং কাফির অবস্থায় মারা যাবে।
হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণনায় এসেছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন বান্দা কোন বস্তুকে বা কাউকে অভিসম্পাত করে তখন সে অভিসম্পাত আসমানের দিকে উঠতে থাকে, তখন আসমানের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় অতঃপর উক্ত অভিসম্পাত যমীনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে তখন যমীনের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তা ডান দিকে ও বাম দিকে যায় এবং সেখানেও যখন কোন রাস্তা না পায়, শেষ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে যার প্রতি অভিসম্পাত করা হয়েছে। যদি সে অভিসম্পাতের উপযুক্ত হয় তবে তার উপর আপতিত হয়। অন্যথায় যে অভিসম্পাত দিয়েছে তার প্রতিই প্রত্যাবর্তিত হয়। (আবূ দাউদ শরীফ)
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, কেউ সারা জীবন অভিশপ্ত ইবলীস শয়তানকে একবার লা’নত না করলেও কিয়ামতের দিন তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে না যে, শয়তানকে কেন লা’নত করা হয়নি। কিন্তু কেউ অপর কাউকে লা’নত করলে প্রবল আশঙ্কা রয়েছে যে, কিয়ামতের দিন এজন্য তাকে জাওয়াবদিহি করতে হবে।
একদা এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপদেশ প্রার্থনা করলে তিনি বললেন, কাউকে লা’নত দিবেন না। বুযুর্গ ব্যক্তিগণ বলেছেন, কোন মুসলমানকে লা’নত করা তাকে বধ করার মতো। নাউযুবিল্লাহ!
অতএব, কারো প্রতি লা’নত করা হতে বিরত থাকা অপরিহার্য কর্তব্য।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












