কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফের সঠিক ও বিশুদ্ধ অর্থ প্রকাশ করে থাকে রাজারবাগ শরীফ, বিপরীতে অর্থ পরিবর্তন ও বিকৃতি করে ধর্মব্যবসায়ী-উলামায়ে ছূ’রা (১)
, ০৩ রা শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৬ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২০ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
অর্থ: “আমি জ্বীন এবং ইনসানকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। ” এই আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় তাফসীরে বলা হয়েছে, মানুষ সৃষ্টি হয়েছে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত, মা’রিফাত লাভের জন্য। لِيَعْبُدُونِ “লি-ইয়া’বুুদূন” শব্দের ব্যাখ্যায় তাই لِيَعْرِفُونِ “লি-ইয়া’রিফূন” বর্ণনা করা হয়েছে। মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ তাফসীর মুবারক করেছেন লি’ইউছল্লুন। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ করা যেতে পারে- ইবাদত-বন্দেগী ইবলিসও করেছিল। একাধারে ছয় লক্ষ বছর। এত লক্ষ লক্ষ বছরের ইবাদতের সমষ্টি তাকে মালিকে মাওলার সাথে মিলিত রাখতে পারেনি। লক্ষ লক্ষ বছরের ইবাদতের সংযোজন হলেও মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাতের ঘাটতিই তাকে বিপথগামী করেছিল। হাক্বীক্বী মুহব্বত, মা’রিফাত আলাদা জিনিস। কেবল কাশ্ফ আর কারামতের শক্তিতেই হাক্বীক্বী মা’রিফাত এর প্রকাশ পায় না। বালয়াম বিন বাউরা-এর কাশফেরও খ্যাতি ছিল। উপরে তাকালে সে সাত আসমানের উপরে দেখতে পেত এবং নীচে তাকালে সে সাত যমীনের নীচে দেখতে পেত। কিন্তু তারপরেও সে টিকে থাকতে পারেনি। লোভ তাকে পরাভূত করেছিল। অতঃপর সে লা’নত প্রাপ্ত হয়েছে।
কথা একটাই যে, তার মাঝে হাক্বীক্বী মুহব্বত-মা’রিফাত ছিল না। উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত-মা’রিফাতের হাছিলের সহজ কথা মহান আল্লাহ পাক উনার জাত পাক উনার পরিচয় তথা ছিফত মুবারক সমূহের ছহীহ্ উপলব্ধি।
স্মরণ রাখতে হবে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার জাত আলাদা, ছিফত মুবারক আলাদা। ছিফতকে যারা জাতের সাথে সম্পৃক্ত করে তারা মূলতঃ অজ্ঞ। আর যামানার নিশান বরদার ওলীআল্লাহ ব্যতীত অধিকাংশ আলেমদেরই এ ধরনের অজ্ঞতায় আক্রান্ত থাকা স্বাভাবিক। ফলতঃ স্বাভাবিকভাবেই তখন যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ তিনি প্রকৃত সত্য তুলে ধরার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যা অবশ্য উনাদের আলাদা মর্যাদার বিষয়।
হাম্বলী মাযহাবের ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনীতে এর নজির বিদ্যমান।
খলীফা মামুনকে কেন্দ্র করে তখন বাগদাদে অনেক কথিত বিশ্বখ্যাত আলেমের ভীড়। তাদের সবারই ফতওয়া হলো-“কুরআন শরীফ মাখলুকের অন্তর্ভুক্ত। ” কিন্তু একমাত্র ইমামুল আইম্মাহ, হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অমিততেজা উচ্চারণ, “কুরআন শরীফ মাখলুক নয়। ” অনেক জুলুম নিপীড়ন সহ্য করে অবশেষে তিনি এ বিষয়ে খলিফার সামনে মুখ খোলার সুযোগ পেলেন, বললেন, “আচ্ছা বলুনতো এমন কোন সময় ছিল কি, যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ছিলেন কিন্তু ইলিম ছিল না? অনিবার্যভাবে উত্তর এলো, “না”। যদি তাই হয় তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব যে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি ছিলেন কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম ছিল না? কারণ কালাম বা কুরআন শরীফ তো মহান আল্লাহ পাক উনার ইলিম মুবারকেরই অংশ। ” হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জোরালোভাবে বললেন। তিনি ব্যাখ্যা দিলেন, “সময় এবং ইলিম মহান আল্লাহ পাক উনার জাত মুবারকের সাথে সম্পৃক্ত। ”
উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনার জাত এবং ছিফতের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। জাতি ছিফাত হিসেবে বর্ণিত আছে মোট আটটি। পক্ষান্তরে এমনি ছিফত অনেক।
হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি জাত ও ছিফতের আলাদা জ্ঞানে সমৃদ্ধ ছিলেন বলেই একক ভূমিকায় খলকে কুরআনের সে বিরাট ফিৎনাকে প্রতিহত করতে পেরেছেন। একইপ্রেক্ষিতে বলতে হয়- যে সমস্ত উলামায়ে ছূ’ ধর্মব্যবসায়ী মালানা যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে নূর এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জাতি নূর বলে অভিহিত করে তারা মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাত তথা জাত ও ছিফত মুবারকের পরিচয় সম্পর্কে নিতান্তই অজ্ঞ।
কারণ মাখলুকের পার্থক্যই তারা বুঝে না। মহান আল্লাহ পাক উনার জাত আর ছিফাতই তারা উপলব্ধি করতে পারে না। মহান আল্লাহ পাক উনার জাত সম্পর্কে যার মারিফাত হাছিল হয়েছে তিনি জানেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি অনবদ্য সত্ত্বা। উনাকে কেবল নূর বলে আখ্যা দেয়া যায় না।
ঠিক তেমনিভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও মহান আল্লাহ পাক তিনি নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন সত্য কথা, তবে তা জাতি নূর নয় বরং ছিফতি নূর (সৃষ্টি নূর)। কিন্তু এ ইলিম ও মা’রিফাত থেকে বঞ্চিত থাকার ফলে উলামায়ে ছূ’রা মহান আল্লাহ পাক উনাকে নূর এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জাতি নূরের সৃষ্টি বলে বিভ্রান্তি বিস্তার করেছে। এবং এ বিভ্রান্তি দূরীকরণে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফে সে সময় বিস্তারিত অনেক আলোচনা হয়েছিল।
যার কারণে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফে এই বিষয়ে শক্ত ভূমিকা পালন করার কারণে সে সময়ে ধর্মব্যবসায়ী ওলামায়ে ছূ ‘আব্দুল জলিল’ মন্তব্য করেছে, “আল বাইয়্যিনাত শরীফ হাদীছের অর্থ পরিবর্তন ও বিকৃতি সাধনে খুবই সিদ্ধ হস্ত। তাই সকল সুন্নী মুসলমানকে আল বাইয়্যিনাত শরীফ সম্পর্কে সতর্ক করা হলো এবং তার প্রতারণা সম্পর্কে অন্যদের রক্ষা করতে বলা হলো। ” নাঊযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য, প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে সরাসরি অর্থ গ্রহণ বাদ দিলে যদি বিকৃতি সাধন হয় তবে বলতে হবে সকল ইমাম-মুজতাহিদগণ এরূপ বিকৃতি সাধন করেছেন এবং (তাদের মতানুযায়ী) আরো বলতে হয় যে, হাদীছ শরীফে কুরআন শরীফের বিপরীত কুফরী কথা রয়েছে। যেমন হাদীছে কুদসীতে বলা হয়েছে যে, “বান্দা নফল ইবাদত করতে করতে আমার এতটুকু নৈকট্য হাছিল করে যে, আমি তার হাত হয়ে যাই, সে আমার হাত দ্বারা ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, সে আমার পা দ্বারা চলে। আমি তার কান হয়ে যাই, সে আমার কান দ্বারা শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, সে আমার চোখ দ্বারা দেখে। ”
উল্লেখ্য, সূরা ইখলাছ শরীফসহ কুরআন শরীফের বিভিন্ন স্থানে মহান আল্লাহ পাক উনার যে পরিচয় আছে তাতে এ কথাই দ্ব্যর্থহীনভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি নিরাকার। ” মহান আল্লাহ পাক উনার হাত, পা নেই। সুতরাং এ হাদীছ শরীফের সরাসরি অর্থ গ্রহণ করলে তা কুফরী হবে।
-মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ থেকে সংকলিত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে রোযা অবস্থায়- ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ও টিকা নেয়া অবশ্যই রোযা ভঙ্গের কারণ (১৩)
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (১৭)
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ফিক্বাহ বা ফতওয়ার সকল কিতাবেই গান-বাজনা, বাদ্য-যন্ত্র ইত্যাদিকে হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সঠিক তারতীবে যাকাত উসূল বা সংগ্রহ করা ফরয-ওয়াজিব
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাতবাসীর সমস্ত নিয়ামত মুবারক বণ্টনকারী
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে এক দিনে ঈদ পালন সম্ভব কি? একটি দলীলভিত্তিক বিশ্লেষণ.... (৪)
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে রোযা অবস্থায়- ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ও টিকা নেয়া অবশ্যই রোযা ভঙ্গের কারণ (১২)
১৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)