জীবনী মুবারক
খাদিমু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
বিলাদত শরীফ: হিজরতপূর্ব ১০ সন বিছাল শরীফ: ৯৩ হিজরী বয়স মুবারক: ১০৩ বছর
, ০৪ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পরবর্তী সম্মানিত খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের আমলে যেসব নতুন বিষয় মাথা চাড়া দিয়ে উঠে তিনি অতি সতর্কতার সাথে এসব আন্দোলন থেকে নিজকে দূরে রাখেন। অন্যান্য অনেক বিশিষ্ট ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মত তিনি নির্জনতা অবলম্বন করেন। এজন্য সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত আমলে উটের যুদ্ধ ও অন্যান্য যুদ্ধে উনাকে কোন ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না। এসব ঘটনায় তিনি স¤পূর্ণ নিরপেক্ষ ছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতের পরেও হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বহুদিন জীবিত ছিলেন। এই দীর্ঘ সময় তিনি নির্জনতা অবলম্বন করেন। তা সত্বেও স্বৈরাচারী উমাইয়া শাসকদের নির্যাতন থেকে তিনি বাঁচতে পারেননি। উমাইয়া প্রশাসনের প্রতিনিধি ইরাকের গভর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ একবার বছরায় এসে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শাসায় এবং জনগণের মধ্যে উনাকে হেয় করার জন্য উনার ঘাড়ে সীল মেরে দেয়। ইসহাক ইবনে ইয়াযীদ বলেন, আমি এই ছাপ মারা অবস্থায় হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখেছি। হাজ্জাজ উনাকে আরো বলেছিল, ওহে খবীছ! আপনি মুখতারের সাথেও থাকেন, আবার ইবনুল আশআসের সাথেও থাকেন। নাঊযুবিল্লাহ! আমি আপনাদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি। নাঊযুবিল্লাহ! এমন কঠিন মুহূর্তেও হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজেকে আয়ত্বে রাখেন। শান্তভাবে তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক আমীরকে সাহায্য করুন। আপনার শাস্তি কার জন্য?
হাজ্জাজ বলল, আপনার জন্য। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চুপ থেকে বাড়ী ফিরে আসলেন এবং উমাইয়া শাসক আবদুল মালিকের নিকট হাজ্জাজের আচরণের বিবরণ দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়ে দিলেন। চিঠি পড়ে শাসক আবদুল মালিক রাগে ফেটে পড়লো। সাথে সাথে সে হাজ্জাজকে লিখলো, তুমি খুব তাড়াতাড়ি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়ী গিয়ে ক্ষমা চাও, নতুবা তোমার সাথে খুব খারাপ আচরণ করা হবে। শাসকের চিঠি পেয়ে হাজ্জাজ তার পরিষদবর্গসহ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিদমতে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে। সে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট আরো আবেদন জানায়, তিনি যে হাজ্জাজকে ক্ষমা করেছেন, সেই কথা যেন শাসককে জানিয়ে দেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার আবেদন মঞ্জুর করেন এবং সেই মর্মে একটি চিঠি দামেশকে পাঠিয়ে দেন। মূলত: ফিতনা ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এমন কঠিন ধৈর্য অবলম্বন করেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, হায়াতুছ ছাহাবা)
পবিত্র বিছাল শরীফ:
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছাল শরীফ অর্থাৎ ওফাত শরীফের তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মতে হিজরী ৯৩ সনে তিনি ইন্তিকাল করেন এবং তখন উনার বয়স মুবারক হয়েছিল ১০৩ বছর। (ইছাবা)
কারণ হিজরতের পূর্বে উনার বয়স মুবারক ছিল ১০ বছর। (উসুদুল গাবা, সিয়ারু আলামিন নুবালা)
বিছাল শরীফের পূর্বে তিনি কয়েক মাস অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী ছিলেন। উনাকে দেখার জন্য উনার মুহব্বতকারী, ভক্ত-অনুরক্তদের ভীড় লেগেই থাকত। দূর দূরান্তর থেকে দলে দলে লোকজন উনাকে এক নজর দেখার জন্য আসত। বিছাল শরীফের সময় ঘনিয়ে আসলে তিনি উনার ছাত্র হযরত ছাবিত বনানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন, আমার জিহ্বার নীচে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একখানা নূরুল ফাতাহ মুবারক বা পবিত্র চুল মুবারক রেখে দাও। নূরুল ফাতাহ মুবারক বা পবিত্র চুল মুবারক রাখা হলো। এই অবস্থায় তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন এবং সেই অবস্থায় দাফন করা হয়। (ইছাবা)
উনার নিকট নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি লাঠি মুবারক ছিল। বিছাল শরীফের পূর্বে তিনি ওছীয়ত করে যান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লাঠি মুবারকও যেন উনার সঙ্গে মাজার শরীফে দাফন করা হয় এবং তদ্রƒপ করা হয়েছিল। (উসুদুল গাবা)
বছরা শহর থেকে দুই ফারছাখ দূরে ‘ত্বাফ’ নামক মহল্লায় উনার একটি বাড়ী ছিল। সেখানেই তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন এবং উনার মাজার শরীফও সেখানেই অবস্থিত। (উসুদুল গাবা)
বছরায় যেসব ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ইন্তিকাল করেন হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন উনাদের মধ্যে সর্বশেষ। (উসুদুল গাবা)
ফযীলত ও মর্যাদা:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য দোয়া করেছিলেন যেন উনার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি পায় এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। (ইছাবা)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলতেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে তিনটি জিনিষের জন্য দোয়া করেছিলেন, তার দু’টি আমি পেয়ে গেছি এবং বাকী একটির (জান্নাত) অপেক্ষায় আছি। (ইছাবা)
তিনি আরো বলতেন, আজ আনছার উনাদের মধ্যে আমার চেয়ে বেশী সম্পদশালী ব্যক্তি আর কেউ নেই। ঐতিহাসিকরা বলেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দোআ মুবারকের পূর্বে একটি মাত্র আংটি ছাড়া তিনি কোন স্বর্ণ বা রূপার মালিক ছিলেন না। উনার একটি বাগান ছিল। যা বছরে দু’বার ফল দিত এবং ফলের মধ্যে মেশ্কের সুগন্ধ ছিল। (ইছাবা) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












