ইলমুত তাযকিয়্যাহ:
খোদপছন্দী বা আত্মগৌরব ও তার অপকারিতা
, ০৭ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০১ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ১৪ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
খোদপছন্দী অর্থাৎ নিজের ইলিম ও ইবাদতকে স্বীয় কৃতিত্ব ভেবে মনে মনে গর্বিত ও আনন্দিত হওয়া মনের একটি জঘন্য ব্যাধি। নিছক মূর্খতাই এই ব্যাধি উৎপত্তির একমাত্র কারণ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا تَـمْشِ فِي الْاَرْضِ مَرَحًا ۖ اِنَّ اللهَ لَا يُـحِبُّ كُلَّ مُـخْتَالٍ فَخُوْرٍ ◌
অর্থ : যমীনে গর্বভরে পদচারণ করোনা। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কোন আত্মগর্বী অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না। (পবিত্র সূরা লুক্বমান : আয়াত শরীফ ১৮)
মহান আল্লাহ পাক তিনি যমীনকে যাবতীয় বস্তু হতে নত ও নীচু করে সৃৃষ্টি করেছেন। আর মানুষ সৃষ্টির অন্যতম উপাদানও হচ্ছে মাটি। কাজেই আত্মাভিমানী হয়ে অহঙ্কার ভরে যমীনে চলাফেরা করা অনুচিত।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তিনটি প্রবৃত্তি মানুষের দ্বীনদারী জীবনকে সর্বনাশ করে দেয়। ১. কৃপণতা ২. লোভ ৩. আত্মগৌরব।
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা পাপ না করলেও আমি তোমাদের ব্যাপারে এমন একটি জঘন্য বিষয়ের আশঙ্কা করি যা পাপের চেয়েও বেশি মারাত্মক। তাহলো আত্মম্ভরিতা অর্থাৎ নিজের কাজ ও গুণাবলীকে সরবোত্তম বলে মনে করা।
বর্র্ণিত রয়েছে, একবার সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনাকে লোকজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, মানুষ কখন পাপ কাজে প্রবৃত্ত হয়? জাওয়াবে তিনি বলেছিলেন, যখন মানুষ নিজেকে পুণ্যবান ও নেক আমলকারী বলে ভাবতে শুরু করে।
ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, দুটি বস্তু দ্বারা মানুষের সর্বনাশ হয়ে থাকে। একটি হলো আত্মম্ভরিতা এবং অপরটি হলো মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়া।
হযরত বশীর ইবনে মনছূর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদা দীর্ঘ সময় ধরে নামায আদায় করছিলেন। তা দেখে এক ব্যক্তি মনে মনে খুবই আশ্চর্য বোধ করছিল। নামায শেষ করে হযরত বশীর ইবনে মনছূর রহমাতুল্লাহি আলাইহি লোকটিকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ব্যক্তি! আশ্চর্যান্বিত হয়ো না। ইবলীসও দীর্ঘকাল ধরে ইবাদতে লিপ্ত ছিল; কিন্তু তার শেষ পরিণতি তো অবশ্যই জানো।
স্মরণীয় যে, খোদপছন্দী বা আত্মাভিমান থেকে নানাবিধ অনিষ্ট সংঘটিত হয়। যেমন-
১. নিজের দোষত্রুটি ধরা পড়ে না।
২. কৃত পাপের কথা স্মরণ হয় না।
৩. পাপের ক্ষতিপূরণের জন্য প্রবৃত্ত হয় না।
৪. পাপ মার্জিত হয়েছে বলে মনে করতে থাকে।
৫. ইবাদতের তাওফীক্ব লাভ করেছে বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
৬. কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না।
৭. কি কি কারণে ইবাদত নষ্ট হতে পারে, সে জ্ঞান অর্জন করে না।
৮. দ্বীনদারীর পথে নিজেকে সব রকম আপদ থেকে মুক্ত মনে করে।
৯. অন্তর থেকে সবরকম ভয়ভীতি দূর হয়ে যায়।
১০. মহান আল্লাহ পাক উনার সূক্ষ্ম দৃষ্টি ও প্রতিফলন প্রদানকে ভয় করে না।
১১. ইবাদত করে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট স্বীয় প্রাপ্য দাবি করে।
১২. আত্মপ্রশংসায় লিপ্ত হয়ে পড়ে।
১৩. নিজেকে পাপমুক্ত ও পবিত্র বলে ভাবতে থাকে।
১৪. জ্ঞান-গরিমায় নিজেকে পরিপূর্ণ মনে করে, অপরের নিকট কিছু জিজ্ঞেস করে না।
১৫. তার মতের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে তা গ্রাহ্যই করে না।
১৬. অন্যের উপদেশ তা যতই মূল্যবান হোক না কেন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে না।
এরূপ আরো বহু অকল্যাণ এসে তার উন্নতির পথ রুদ্ধ করে দেয়।
উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক তিনি অনুগ্রহ করে দ্বীনী ইলিম অর্জন ও ইবাদত করার সামর্থ দিয়েছেন এ নিয়ামতকে গণিমত মনে করে যে ব্যক্তি তা সর্বদা সযতেœ নিরাপদ রাখার চেষ্টা করে। এই চেষ্টা ও উপলব্ধিকে খোদপছন্দী বলা যাবে না। এছাড়া যদি ওই নিয়ামত নষ্ট হওয়ার ভয় নাও থাকে কিন্তু তাকে নিজের যোগ্যতা ও গুণ মনে করে শুধু মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও নিয়ামত মনে করত: খুশি ও কৃতজ্ঞ থাকে তাহলেও এই উপলব্ধিকে খোদপছন্দী বলা যায় না। কিন্তু যদি ইলিম ও ইবাদতকে নিজের কৃতিত্ব মনে করে আনন্দিত হয় মহান আল্লাহ পাক উনার দখলকে স্বীকার না করে তবে এই আনন্দভাব ও উপলব্ধি খোদপছন্দী রূপে গণ্য হবে।
অতএব, মানুষের ইলিম অর্জন কিংবা ইবাদত সবকিছুই মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত নিয়ামত। এতে মানুষের কোন কৃতিত্ব নেই। সুতরাং এ ব্যাপারে গর্বিত ও আনন্দিত হওয়া মূর্খতারই নামান্তর। ইলমে তাছাওউফ অর্জনই হচ্ছে এর প্রকৃত ঔষধ। অর্থাৎ ইলমে তাছাওউফ অর্জনের দ্বারা আত্মগৌরব দূরীভূত হয় এবং বিনয়-ন¤্রতার গুণ অর্জিত হয়।
(সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












