ইলমুত তাযকিয়্যাহ:
গদ্বব বা রাগের কুফল ও তার প্রতিকার
, ০৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৫ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ১৯ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
غضب ‘গদ্বাবুন’ অর্থ রাগ বা গোসসা। মানুষ যেই চারটি উপাদান দ্বারা সৃৃষ্ট- আগুন তার মধ্যে একটি। সুতরাং কেউ যখন গোসসায় অভিভূত হয়ে পড়ে তখন তার আপাদমস্তক এমনকি শিরা-উপশিরায় এমন এক তাপ সৃৃষ্টি হয়, যেনো তা একটি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা। তখন তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না এবং সে তখন ন্যায়-নীতির সীমালঙ্ঘন করে ফেলে। এ কারণে রাগকে একটি মন্দ স্বভাব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِدْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
অর্থ : মন্দকে ভাল দ্বারা দমন করো। (পবিত্র সূরা হা-মীম শরীফ: ৩৪)
রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, উক্ত আয়াত শরীফ উনার মর্ম হলো-
اَلصَّبْرُ عِنْدَ الْغَضَبِ وَالْعَفْوُ عِنْدَ الإِسَاءَةِ
অর্থাৎ রাগের সময় ধৈর্যধারণ করা এবং মন্দ ব্যবহার ক্ষমা করা। (বুখারী শরীফ)
মানুষ যখন এই নীতির অবলম্বন করবে তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে বিপদাপদ হতে রক্ষা করবেন এবং শত্রুদেরকে এমনভাবে অনুগত করে দিবেন যেনো তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষের নফসের মধ্যে রাগকে এইজন্য পয়দা করেছেন যে, তা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। মানুষের ক্ষতিকর কোন বস্তু সামনে আসলে রাগভরে তা দূর করবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি লোভকে পয়দা করেছেন এজন্য যে, মানুষের জন্য যা কল্যাণকর তা নিজের দিকে টেনে আনবে, আর যা অপকারী বা অপ্রিয় তা রাগভরে দূরে সরিয়ে দিবে। রাগ ও লোভের অভাব হলে জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এ দু’টি যখন সম্মানিত শরীয়ত উনার সীমা অতিক্রম করে তখন এ দুয়ের পরিণাম বা কুফল অত্যন্ত ভীষণ ও মারাত্মক হয়ে যায়।
সম্মানিত শরীয়ত উনার সীমা অতিক্রমকারী রাগ অধিক মাত্রায় বেড়ে গেলে অন্তরে তা আগুনের মত জ্বলে উঠে এবং এর গরম মস্তিষ্কে প্রবেশ করে মস্তিষ্ককে অন্ধকারময় করে ফেলে। তখন সে ব্যক্তি বিচার-বিবেচনা শক্তি হারিয়ে বসে এবং তার বিষাক্ত উত্তেজনা উক্ত রাগান্বিত ব্যক্তির শিরায় শিরায় প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়। সে ব্যক্তি তখন শয়তানের মুখে কথা বলে, শয়তানের চোখে দর্শন করে, শয়তানের কানে শ্রবণ করে এবং শয়তানের নির্দেশ অনুযায়ী তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করে। ফলে তখন সে ব্যক্তির সর্বপ্রকার কাজর্কম শয়তানের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। রাগকে দমন করতে না পারলে মানুষ যে দ্বীন ও দুনিয়ার ক্ষেত্রে কি পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা বলে শেষ করার মতো নয়।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন প্রকার অন্যায় বা গুনাহর কাজের বিরুদ্ধে ক্রোধ (রাগ) প্রদর্শন করা একান্ত আবশ্যক।
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি দেরীতে রাগান্বিত হয় এবং অতিশীঘ্র রাগ সংবরণ করে, সে ব্যক্তি অতি উত্তম। আর যে ব্যক্তি অতিশীঘ্র রাগান্বিত হয় এবং দেরীতে রাগ সংবরণ করে সে ব্যক্তি অত্যন্ত মন্দ।
মিশকাত শরীফ উনার মধ্যে বর্র্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে উপদেশ দান করুন। তিনি ইরশাদ করলেন, রাগ করিও না। উক্ত ব্যক্তি একই কথা কয়েকবার আবৃত্তি করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও একই উত্তর দিলেন, রাগ করিওনা।
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি কুস্তিগিরীতে (মল্লযুদ্ধে) ক্ষমতাবান, সে বীরপুরুষ নয়। বরং যে ব্যক্তি রাগের সময় নিজকে সামলে নিতে পারে, সে ব্যক্তিই বীরপুরুষ।
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি রাগ সংবরণ করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি কিয়ামতের দিন তাকে আযাব থেকে দূরে রাখবেন।
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, রাগ শয়তানের প্ররোচনা থেকে এবং শয়তান আগুন থেকে সৃষ্ট হয়েছে। আগুন পানি দ্বারা নির্বাপিত হয়। কাজেই যখন তোমাদের মধ্যে কেউ রাগান্বিত হয় তখন তার কর্তব্য হলো ওযূ করে নেয়া।
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের মধ্যে কেউ দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হলে, তার বসে যাওয়া কর্তব্য। যদি তাতে রাগ দমন হয় তবে ভাল, অন্যথায় তার শুয়ে পড়া কর্তব্য।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আরয করলেন, ইয়া বারে ইলাহী! আপনার বান্দাগণের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় বান্দা কে? মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, যে ব্যক্তি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বে (অপরের দোষ) ক্ষমা করে দেয়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, তিনটি কাজ মুক্তি দান করে- প্রকাশ্যে ও গোপনে পরহিযগারী অবলম্বন করা, শান্ত ও রাগ উভয় সময়ে হক্ব কথা বলা। ধনী ও দরিদ্র উভয় অবস্থায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা।
(সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












