গার্মেন্টসের মতোই বিপুল আয়ের উৎস হতে পারে দেশের অটোমোবাইল শিল্প মেইড ইন বাংলাদেশ গাড়ী ছাড়াও ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারেও আধিপত্য করতে পারে বাংলাদেশ। এজন্য চাই সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও যথাযথ প্রনোদনা।
এডমিন, ২৫ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে ছোট-বড় বহু শিল্প রয়েছে যা যুগ যুগ ধরে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের মূল উপজীব্য হিসেবে কাজ করছে। তবে এমন অনেক শিল্প রয়েছে যাতে বহুল সম্ভাবনা থাকলেও পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তার প্রকৃত সুফল দেশবাসী পাচ্ছে না। যার মধ্যে অটোমোবাইল শিল্প অন্যতম।
অটোমোবাইল শিল্প বাংলাদেশের একটি ক্রমবর্ধমান খাত। গত দশকের তুলনায় দেশের মধ্য ও উচ্চ মধ্যবিত্তের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং ক্রয়ক্ষমতার কারণে অটোমোবাইল শিল্পের প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিআরটিএ’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-২২ সালের মধ্যে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ জ্যামিতিক হারে যাত্রীবাহী গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। তবে এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এখনও যাত্রীবাহী গাড়ির অনুপ্রবেশ খুবই কম। প্রতি এক হাজার জনসংখ্যায় মাত্র ২ দশমিক ৫ জন গাড়ির মালিক; ভারতে ২০২০ সালের শেষে এক হাজার জনের মধ্যে ৩০ জনের একটি গাড়ি ছিল; মিয়ানমারে এক হাজার জনের মধ্যে প্রায় ১২ জনের একটি গাড়ি রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মধ্যবিত্ত মানুষ একটি গাড়ির মালিক হওয়ার মতো যথেষ্ট উপার্জন করছে এবং একটি গাড়ি রাখতে ইচ্ছুক। এই জনসংখ্যা শ্রেণির বৃদ্ধির হারও প্রতি বছর ১০ শতাংশ। বাংলাদেশে এখনও গাড়ি তৈরি না হলেও সরকারি-বেসরকারি অনেক কোম্পানিই গাড়ির সংযোজন করছে। প্রথম অটোমোবাইল সংযোজন শুরু করেছিল প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ১৯৬৬ সালে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার ‘প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজকে জাতীয়করণ করে। এই কারখানা মূলত সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের এসইউভি সংযোজন করে। বাংলাদেশ সরকার জাপানের মিতসুবিশি কোম্পানির সহায়তায় এখানে ‘মুজিব বারশো’তে স্থানীয় ব্র্যান্ডের গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করছে। এছাড়া কিছু স্থানীয় প্রাইভেট অটোমোবাইল অ্যাসেম্বলিং কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করছে, যার মধ্যে রয়েছে ইফাদ, আফতাব, ফেয়ার টেকনোলজি, বাংলাদেশ অটো, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, বাংলা কার, নিলয় হিরো মোটারস, পিএইচপি, রানার ও উত্তরা মোটরস। কিন্তু স্থানীয়ভাবে সংযোজন করা গাড়িগুলো এখন পর্যন্ত বাজার ধরতে পারেনি। ২০২০ সালে নতুন নিবন্ধিত গাড়ির মধ্যে ৮২ শতাংশ রিকনডিশন্ড বা গ্রে মার্কেট আমদানি করা, ১৬ শতাংশ একেবারে নতুন আমদানি করা এবং মাত্র দুই শতাংশ স্থানীয়ভাবে সংযোজিত গাড়ি।
আমদানিকৃত যানবাহনের ওপর উচ্চ শুল্ককাঠামোর কারণে স্থানীয় অটোমোবাইল শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয় নতুন ‘অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতি, ২০২২’ স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থানীয়ভাবে গাড়ি সংযোজন কারখানা স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। নীতিটি স্থানীয় সমাবেশের সুবিধার্থে সেমি নকড ডাউন (এসকেডি) এবং সম্পূর্ণভাবে নকড ডাউন (সিকেডি) যন্ত্রাংশ আমদানিতে কর কমানোর পাশাপাশি অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করে। লাইটক্যাসলের গবেষণা অনুসারে, অটোমোবাইল শিল্পে স্থানীয় ও বিদেশি কোম্পানিগুলো ‘সম্পূর্ণ উৎপাদন’ করতে যাবে না। কারণ সম্পূর্ণ উৎপাদন তখনই কার্যকর হবে যখন যাত্রীবাহী যান, বাণিজ্যিক যান এবং পিক আপ বা পরিবহন ট্রাকসহ মোট মোটরগাড়ি শিল্পের স্থানীয় চাহিদা এক লাখ ইউনিটে পৌঁছাবে। এই কারণেই ২০২৫ সালের মধ্যে বেশিরভাগ অটোমোবাইল বিনিয়োগ এসকেডি এবং বেসিক সিকেডি অ্যাসেম্বলিংয়ের জন্য অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্টের দিকে যাবে।
গবেষণা অনুসারে, যানবাহনের স্থানীয় সমাবেশ ২০২৫ সালের মধ্যে অটোমোবাইল শিল্পের সামগ্রিক মূল্য ১৫-৪০ শতাংশ কমাতে পারে। যদি দাম কমানো হয়, মধ্যবিত্ত থেকে নি¤œ-মধ্যবিত্তের একটি বিশাল জনসংখ্যা পরিবার এবং ব্যক্তিগত গাড়ি কিনবে। বিশ্লেষণ আরও দেখায় যে ব্যক্তিগত গাড়ির বার্ষিক বিক্রি দ্বিগুণ হবে এবং সেই বিক্রির ৬০ শতাংশ, ২০২৫ সালের মধ্যে একেবারে নতুন গাড়ির দ্বারা কভার করা হবে সুযোগটি ঘেরাও করার জন্য, বেশ কয়েকটি কোম্পানি এরই মধ্যে সংযোজন কারখানা স্থাপন করেছে এবং কয়েকটি তা করার পরিকল্পনা করছে। প্রথম বেসরকারি খাতের পিএইচপি ২০১৫ সালে গাড়ি সংযোজন কারখানা স্থাপন করে। তারা বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার ‘প্রোটন’ ব্র্যান্ডের গাড়ি সংযোজন করছে। ফেয়ার টেকনোলজিস গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত কারখানায় হুন্ডাই সেডান, এসইউভি ও এমভিপি সংযোজন করছে। সরকারেরও লক্ষ্য রয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে সব নিবন্ধিত যানের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ ‘পরিবেশবান্ধব বিদ্যুতে’ চালিত হবে। এভাবে স্থানীয় কোম্পানিগুলোও বৈদ্যুতিক যান (ইভি) তৈরিতে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি বঙ্গবন্ধু শিল্প পার্কে একটি ব্যাটারি ইলেকট্রিক ভেহিকল (বিইভি) কারাখানা নির্মাণ করছে।
বাংলাদেশের অটোমোবাইল শিল্প আগের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত হলেও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ সফলতা লাভের সুযোগ পায়নি। হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক গাড়ি বিবেচনা করে আমদানি শুল্ক নীতি ভবিষ্যতে টেকসই প্রবৃদ্ধি আনবে। সরকার যদি অটোমোবাইল অ্যাসেম্বলি এবং ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে জোর দেয়, তাহলে একদিন আমরা দেখতে পাব ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ গাড়ি এদেশের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও রফতানী করছে।
শুধু তাই নয়,বর্তমানে বিশ্বে অটোমোবাইলে প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার রয়েছে। স্পেয়ার পার্টসের বাজার প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এসব বাজারে আমাদের যেখানে গার্মেন্টস খাতের মতো প্রসার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য সরকারি সহায়তা প্রয়োজন রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বন্ডেড ওয়্যার হাউস ও রপ্তানি প্রণোদনার মতো সুবিধা।
পাশাপাশি রপ্তানি প্রণোদনা। তার জন্য সরকারের বেশি খরচ হবে না। প্রথম দুই বছরে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। তবে অটোমোবাইল শিল্প সংশ্লিষ্টরা অল্প দামে বিশ্ব মার্কেটে প্রবেশ করতে পারবো এবং কম করে হলে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্র্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)