ইলমুত তাযকিয়্যাহ:
গোপন শিরক বা রিয়া নামক বদ খাছলতটির ভয়ানক পরিণতি
, ২রা রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৮ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৭ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ১২ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
রিয়া অর্থ লৌকিকতা বা লোক দেখানো কাজ। যারা রিয়ার পর্যায়ে কোন প্রকারের ইবাদত করে তাদের সেই ইবাদতের পরিণাম খুবই ভয়ানক। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে রিয়াকারীদের সম্পর্কে বহু আয়াত শরীফ উল্লেখ রয়েছে এবং একইভাবে অনেক হাদীছ শরীফও উল্লেখ রয়েছে। রিয়া এটি মুনাফিকদের স্বভাব-বৈশিষ্ট্যও বটে। এছাড়া এটি ইখলাছ বা একনিষ্ঠতার পরিপন্থী। অতএব, রিয়া নামক বদ খাছলত বা বদ স্বভাবটি নিজেদের দেহ মন থেকে দূরীভূত করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীদের জন্য ফরযের অন্তর্ভুক্ত।
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِـحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ اَحَدًا
অর্থ : যে ব্যক্তি তার রব তায়ালা উনার সাক্ষাতের আশা রাখে সে যেনো নেক কাজ করে এবং তার রব তায়ালা উনার ইবাদতের মধ্যে কাউকে শরীক না করে। (পবিত্র সূরা কাহফ : আয়াত শরীফ ১১০)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ◌ الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِـهِمْ سَاهُوْنَ ◌ الَّذِيْنَ هُمْ يُرَاءُوْنَ ◌
অর্থ : ওই সকল নামাযীদের জন্য ধ্বংস! যারা তাদের নামাযে অন্যমনস্ক থাকে। যারা অন্যকে দেখানোর জন্য নামায পড়ে। (পবিত্র সূরা মাঊন : আয়াত শরীফ ৪-৬)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমি শরীককারীদের শরীক থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন আমলে (ইবাদতে) আমার সাথে অন্যকে শরীক করে, আমি তাকে তার শরীকসহ বর্জন করি। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। (মুসলিম শরীফ)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নামায পড়লো, সে শিরক করলো এবং যে দেখানোর নিয়তে রোযা রাখলো, সেও শিরক করলো। আর যে দেখানোর জন্য ছদক্বা-খয়রাত করলো সেও শিরক করলো। (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আমার উম্মতের উপর গোপন শিরকের ভয় করছি। বর্ণনাকারী হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার পরে আপনার উম্মত কি শিরকে লিপ্ত হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, লিপ্ত হবে। অবশ্য তারা সূর্য, চন্দ্র, পাথর ও মূর্তির উপাসনা করবে না; কিন্তু নিজেদের আমলসমূহ মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে করবে। (আহমদ, বায়হাক্বী, মিশকাত)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে অবহিত করবো না, যা আমার নিকট তোমাদের জন্য মসীহ দাজ্জাল অপেক্ষা অধিক আশঙ্কাজনক? তা হলো শিরকে খফী বা গোপন শিরক। (ইবনে মাজাহ শরীফ)
ছহীহ মুসলিম শরীফ উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্র্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় শহীদ, ধন-সম্পদে দানবীর এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম কুরআন শরীফ উনার আলিম ও ক্বারী। এই তিন ব্যক্তিকে তাদের কার্য সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করবেন এবং তারা উত্তর দিলে তিনি শহীদকে বলবেন, তুমি মিথ্যা কথা বলেছ; বরং তোমার উদ্দেশ্য ছিল যে, লোকে তোমাকে বাহাদুর এবং বড় যোদ্ধা বলবে। তারপর তিনি আলিম ও ক্বারীকে বলবেন, তুমিও মিথ্যা কথা বলেছ; বরং তোমার উদ্দেশ্য ছিল যে, লোকে তোমাকে বড় আলিম ও বড় ক্বারী বলবে। তারপর তিনি দানবীরকে বলবেন, তুমিও মিথ্যা কথা বলেছ; বরং তোমার উদ্দেশ্য ছিল যে, লোকে তোমাকে মহাদাতা বলবে। নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন যে, তাদের কোন নেকীই হয়নি বরং তাদের রিয়া তাদের সমস্ত ইবাদতকে বিনষ্ট করে দিয়েছে।
অপর এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্র্ণিত হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বলবেন, এসব ব্যক্তিরা আমার উদ্দেশ্যে তাদের ইবাদত করেনি; কাজেই এদেরকে চুলে ধরে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে দাও। অতঃপর তাদেরকে সেভাবেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। নাঊযুবিল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্র্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক সাত আসমান তৈরি করার পূর্বে সাতজন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে গৃষ্টি করেন অতঃপর উনাদের সেই সাতজনকে সাত আসমানের দায়িত্ব দিলেন যে, বান্দাদের আমলগুলো উনাদের সামনে দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট যখন পৌঁছানো হবে তখন উনারা সেই আমলগুলো যাচাই-বাছাই করবেন যেনো কোনো রকম ত্রুটি-বিচ্যুতিযুক্ত কোন আমল উপরে যেতে না পারে। অতঃপর আমল বহনকারী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ যখন এক এক করে সপ্তম আকাশে গিয়ে পৌঁছবেন তখন সপ্তম আকাশের দায়িত্বশীল ফেরেশতা আলাইহিস সালাম বলবেন, যাদের আমলের মধ্যে রিয়া আছে তাদের আমলগুলো এ আকাশ দিয়ে অতিক্রম করতে পারবে না।
কাজেই, রিয়াসহ যাবতীয় বদস্বভাব দূর করতে হলে বান্দাকে অন্তর পরিশুদ্ধ করতে হবে। আর অন্তর পরিশুদ্ধ করার মাধ্যম হচ্ছে পীরানে তরীক্বত উনাদের নিকট বাইয়াত হয়ে তরীক্বার সবক অনুযায়ী ক্বলবী যিকির করা।
(সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












