ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিকদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (৩)
, ২২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সীরাতগ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে যে-
وَتُـعْرَفُ بِالْفَاضِحَةِ لِاِفْـتِضَاحِ الْمُنَافِقِـيْـنَ فِـيْـهَا
অর্থ: “তাবুকের সম্মানিত জিহাদে মুনাফিকদের নিফাক্বীর মুখোশ উন্মোচিত হয়েছিলো বিধায়, এই সম্মানিত জিহাদ اَلْفَاضِحَةُ (আল ফাদ্বিহাহ্) নামে প্রসিদ্ধ।” (আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ্ ১/৪১৮, শারহুয যারক্বানী ২/৪০৪, ইমতা‘উল আসমা ৮/৩৯১, তারীখুল খমীস ২/১২২)
যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে মহাসম্মানিত ওহী মুবারক প্রাপ্ত হয়ে সম্মানিত তাবুক জিহাদ মুবারকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন মুনাফিকদের লুকানো শত্রুতা, কপটতা ও প্রতারণা একে একে প্রকাশ পেতে শুরু করে। তাদের অন্তরে লালিত হচ্ছিলো এক কুটিল, নিকৃষ্ট ও ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্র। যার লক্ষ্য ছিলো- যাতে মুসলিম বাহিনী পবিত্র মদীনা শরীফ ত্যাগ না করেন এবং রোম বাহিনীর আক্রমণের পথ সুগম হয়। নাঊযুবিল্লাহ! এই মুনাফিক চক্রের ষড়যন্ত্র এতটাই জঘন্য ও গুরুতর ছিলো যে, এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা তওবা শরীফ উনার (৩৮-১১০ উনাদের মধ্যে) অনেকগুলো পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি মু’মিনগণ উনাদের ঈমান আরো শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করেন এবং মুনাফিকদের ধোঁকাবাজি, ষড়যন্ত্র ও নিফাক্বীর মুখোশ পরিপূর্ণভাবে উন্মোচন করে দেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, এই দৃষ্টিকোণ থেকে মুনাফিকদের ধোঁকাবাজি, ষড়যন্ত্র ও নিফাক্বীর মুখোশ উন্মোচন করাও একখানা বিশেষ সুন্নত মুবারক এবং মু’মিনগণ উনাদের ঈমান হিফাযত, শক্তিশালী ও সুদৃঢ় হওয়ার মাধ্যম। তাই, বর্তমান যুগের মুখোশধারী মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচন করার লক্ষ্যে সেই বিষয়ে কিছু আলোচনা করা হলো-
নেক কাজে বাধা দেয়া ও ফিতনা ছড়ানো মুনাফিকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য:
মুনাফিক সর্দার উবাই ইবনে সুলুলের নেতৃত্বে মুনাফিকদের একটি বিরাট দল নানাবিধ মিথ্যা অজুহাত ও ছলচাতুরীর মাধ্যমে তাবুক জিহাদ মুবারকে শরীক হওয়া থেকে পিছিয়ে থাকে। তারা শুধু নিজেরাই পিছিয়ে ছিলো না; বরং গোপনে মু’মিনগণ উনাদের অন্তরে সন্দেহ, দুর্বলতা ও হতাশা সৃষ্টি করে উনাদেরকে এই মুবারক জিহাদ থেকে বিরত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে।
তারা বলতে শুরু করে- “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা কেউ আর পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ফিরতে পারবেন না। রোম শাসক উনাদেরকে বন্দী করে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিবে।” নাঊযুবিল্লাহ!
মুনাফিক সর্দার উবাই ইবনে সুলুল বলে-
يَـغْـزُوْ) سَيِّدُنَا مَوْلَانَا (مُحَمَّدٌ) صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (بَـنِـى الْاَصْفَرِ مَعَ جَهْدِ الْـحَالِ وَالْـحَـرِّ وَالْـبَـلَدِ الْـبَعِـيْدِ اِلـٰى مَا لَا طَاقَةَ لَهٗ بِـهٖ يَـحْسَبُ) سَيِّدُنَا مَوْلَانَا (مُحَمَّدٌ) صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (اَنَّ قِـتَالَ بَـنِـى الْاَصْفَرِ مَعَهُ اللَّعِبُ وَاللّٰهِ لَكَاَنِّــىْ اَنْظُـرُ اِلـٰى اَصْحَابِهٖ مُقَرَّنِـيْـنَ فِـى الْـحِبَالِ
“নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি এই দুঃসময়ে, তীব্র গরমে এবং এত দূরবর্তী দেশে ‘বনু আছফার’ অর্থাৎ রোমদের সাথে জিহাদ করতে যাচ্ছেন? এটা তো এমন এক কাজ, যার সামর্থ্য উনার নেই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মনে করছেন, রোমের সাথে জিহাদ করা কোনো খেলাধুলা। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি যেন এখনই দেখতে পাচ্ছি যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা রশিতে বাঁধা অবস্থায় বন্দী হয়ে আছেন।” নাঊযুবিল্লাহ! (আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ্, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, শারহুয যারক্বানী ইত্যাদি)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-
وَحَدَّثُـوْا اَنْـفُسَهُمْ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَـرْجِعُ اِلَـيْهِمْ اَبَدًا
“এই মুনাফিকগুলো নিজেদের মধ্যে এইরূপ কুফরী ধারণা পোষণ করেছিলো (এবং বলাবলি করছিলো) যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আর কখনো তাদের নিকট (পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে) ফিরে আসবেন না।” নাঊযুবিল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ)
অর্থাৎ তাদের বক্তব্য এরূপ ছিলো যে, ‘রোমের বিরুদ্ধে এই জিহাদ মুবারকে মুসলিম বাহিনী পরাজিত হবেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করবেন।’ নাঊযুবিল্লাহ!
তারা নিরন্তর গুজব, কুৎসা ও অপপ্রচার ছড়িয়ে মু’মিনগণ উনাদের এই জিহাদ মুবারকে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালাতে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












