মন্তব্য কলাম
ডিজিটালাইজেশনের নামে শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশের ইন্টারনেট জগতে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শিশু-কিশোররা আক্রান্ত হচ্ছে অশ্লীলতায়। শিখছে অনৈতিকতা, বেহায়াপনা, হিংস্রতা। সরকারের উচিত- দ্রুত দেশের ইন্টারনেট জগতে কন্টেন্ট ফিল্টারিংয়ের ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে শিশু কিশোরদের ইন্টারনেট আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অনুশাসন প্রচার প্রসার করা।
, ২৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৬ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৯ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মন্তব্য কলাম
ইন্টারনেট ব্যবহারের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা। বিশেষ করে শিশু-কিশোররাই এই বিড়ম্বনার শিকার বেশি হচ্ছে। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ব্যাপকহারে বাড়ছে। গত ১৯ বছরে এই সংখ্যা ৮০০ গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশে অনলাইন জনগোষ্ঠীর গড় বয়স ক্রমেই কমছে। এমনকি ১১ বছরের শিশুরাও প্রতিদিন ইন্টারনেটে প্রবেশ ও ব্যবহার করছে। যদিও ছোট শিশুদের তুলনায় বেশি বয়সী শিশুরা অনলাইনে ভয়-ভীতির সম্মুখীন হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তবে ক্ষতিকর সামগ্রী, যৌন নিগ্রহ ও অপব্যবহার এবং ভয়-ভীতির সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি থেকে শিশুরা কখনোই মুক্ত হচ্ছে না। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৩২% শিশু অনলাইন সহিংসতা, অনলাইনে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ডিজিটাল উৎপীড়নের শিকার হওয়ার মতো বিপদের মুখে রয়েছে।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্রতিদিন ১ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি শিশু প্রথমবারের মতো অনলাইন ব্যবহার করছে। প্রতি আধা সেকেন্ডে একটি শিশু অনলাইন দুনিয়ায় প্রবেশ করছে এবং এতে দেশের ১৩% শিশু-কিশোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানির শিকার হচ্ছে। একাধিকবার হয়রানির শিকার হচ্ছে ৩.৬%। হয়রানির কারণে ৩.৩% শিক্ষার্থী তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিচ্ছে। সারাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একটা বড় অংশ ১৮ বছরের নিচে বা শিশু-কিশোর। তারা একদিকে যেমন ডিজিটাল জগতে প্রবেশের সুবিধা পাচ্ছে এবং শিশুদের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ তৈরি করছে, ঠিক তেমনি ঝুঁকিও বাড়ছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশসহ পাশ্ববর্তী দেশের ১০ বছর বয়সী শিশুরা সক্রিয়ভাবে মা-বাবার কাছে তাদের অনলাইন কার্যক্রম লুকানোর চেষ্টা করছে। দেখা গেছে, ১০ বছর বয়সী ৫১% শিশুর নিজের ট্যাবলেট এবং ৩৩ শতাংশে স্মার্টফোন রয়েছে। এর মধ্যে ৪২% শিশু এমন যারা বিশ্বাস করে তারা অনলাইনে কী করছে, সেটি মা-বাবার কাছ থেকে লুকানোর মতো জ্ঞান এবং দক্ষতা তাদের রয়েছে। ১৩ বছর বয়স থেকে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে। ১০% শিশু তারা অনলাইনে কী করছে সেটি নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে না। জরিপে আরো দেখা গেছে, যে সকল শিশুর উপর ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ম করে রাখা হয়েছে তার ২৭% বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। শিশুদের গোপনে ইন্টারনেটের ব্যবহারের ফলে ৪২% শিশু বাজে ভাষা এবং ২৮ শতাংশ হিংস্রতা শিখছে। এছাড়াও ১১% শিশু পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত।
গবেষণায় দেখা গেছে, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এবং ইন্টারনেট ট্যাগিংয়ের কারণে ৭৭ শতাংশ শিশু কিশোরদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় ইনডেক্স করা ৪৫০ মিলিয়ন পর্নোসাইটের পেজগুলো সাজেশন্স হিসেবে চলে আসছে। অর্থাৎ সাধারণ উদ্দেশ্যে তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও এসব চরম অশ্লীল ছবি তথা পর্নোসাইটের বিজ্ঞাপন চলে আসছে বা দৃশ্যমান হচ্ছে। এতে শিশু-কিশোররা কৌতুহলবশত সেসব বিজ্ঞাপনে ক্লিক করছে। আর ক্লিক করলেই তারা প্রবেশ করছে পর্নোগ্রাফির অবাধ রাজ্যে। আর এর ফলে শিশু-কিশোরদের মন অভ্যস্ত হচ্ছে পর্নোগ্রাফি নামক ভয়াল মানসিক বিকারের সাথে। সেইসাথে ইন্টারনেট জগতে অনলাইনেই নানা রকম গেমস ও কার্টুনের প্রভাবে শিশুরা ঝুঁকে পড়ছে সহিংসতার দিকে। গেমস খেলতে খেলতে শিশু-কিশোরদের মধ্যে শুধু জয়ের মানসিকতা গড়ে উঠছে। পরাজয় মেনে নেয়া বা সইতে পারার মানসিকতা তাদের তৈরি হয় না। ফলে পরাজয় না সইতে পেরে তারা ব্যাপকভাবে হতাশ হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে জীবনের সব কিছুর উপর। এ ধরণের নানা কারণে ইন্টারনেটে আসক্ত শিশু-কিশোররা সামাজিকভাবে বিকশিত হয় না। তাদের মধ্যে এ ধারণা গড়ে উঠে যে, ইন্টারনেট ভিত্তিক গ্রুপগুলোই হলো সবচেয়ে আধুনিক চিন্তা-চেতনার অধিকারী। নিজে যে গ্রুপের সদস্য সেই গ্রুপের চিন্তা-চেতনার বাইরে অন্য কিছু সে ভাবতে পারে না। এ কারণে এক পর্যায়ে তার দৃষ্টিভঙ্গিও একপেশে হয়ে উঠে।
প্রসঙ্গত, এই ডিজিটালাইজেশনের যুগে ইন্টারনেটের বহুল প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেটের রয়েছে বহুল খারাপ ও ক্ষতিকর দিক। আর এই ক্ষতিকর দিকটিরই শিকার হচ্ছে দেশের শিশু ও কিশোর প্রজন্ম। দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে দেশে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কোনো চর্চা না থাকার কারণে যে বয়সে শিশু-কিশোরদের নৈতিক ও দ্বীনি মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়ার কথা সেই বয়সে পিতামাতা তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে এ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অথবা ট্যাবলেট। এতে করে শিশু কিশোররা সামাজিক মুল্যবোধ ও দ্বীনি অনুশাসন শিক্ষার বদলে ইন্টারনেটের নানা অপসংস্কৃতি শিক্ষা নিচ্ছে। ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাবে শিশু-কিশোরা গভীরভাবে ইন্টারনেটের অশ্লীল দুনিয়ায় বিচরণ করছে। যা ফলস্বরূপ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আক্রান্ত হচ্ছে পর্ণোগ্রাফি নামক ডিজিটাল রোগে। দেশে সুঠাম ও দ্বীনি মূল্যবোধসম্পন্ন উন্নত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ব্যতিরেকে তৈরী হচ্ছে বিকৃত মস্তিষ্কের একটি প্রজন্ম। যা সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জাতিগঠনের অন্তরায়। অথচ বিভিন্ন দেশে শিশু কিশোরদের ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর কঠোর নজরদারী করা হচ্ছে। যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুন্যের কোঠায়। বিভিন্ন দেশে সরকারিভাবে ইন্টারনেটের নানা খারাপ কন্টেন্ট ফিল্টারিংয়ের শক্তিশালী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে সেসব দেশের শিশুরা ইচ্ছা করলেও ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকছে।
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। বাংলাদেশের ৯৮ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান। কিন্তু বাংলাদেশে হাক্বীকী অর্থে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার চর্চা থেকে জনগণ দূরে থাকার কারণে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় কোনটা হারাম আর কোনটা হালাল সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছে না। নানাবিধ অপসংস্কৃতি পথভ্রষ্ট হয়ে বর্তমানে ডিজিটালাইজেশনের নামে শিশু কিশোরদের অল্প বয়সেই ইন্টারনেটের দিকে ধাবিত করছে। এতে বিপথে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। এক্ষেত্রে সরকার যদি যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করে দেশের ইন্টারনেট জগতে কন্টেন্ট ফিল্টারিংয়ের ব্যবস্থা করে এবং শিশু কিশোরদের ইন্টারনেট ব্যবহারে একটি নির্দিষ্ট বয়সের জন্য আইন প্রণয়ন করে তাহলে দেশের শিশু প্রজন্মকে ইন্টারনেটের এই নেতিবাচক দিক থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সংবিধান, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিরোধী আপত্তিকর শব্দ প্রকাশের বিপরীতে মহান আল্লাহ পাক উনার ‘কুদরত’ ও ‘রহমত’ এ ছিফত মুবারক দ্বয়ের ব্যাপক প্রচলন ঘটাতে হবে
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খলীফাতুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার অনবদ্য তাজদীদ ‘আত-তাক্বউইমুশ শামসী’ সম্পর্কে জানা ও পালন করা এবং শুকরিয়া আদায় করা মুসলমানদের জন্য ফরয। মুসলমান আর কতকাল গাফিল ও জাহিল থাকবে?
০৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভীনদেশী অ্যাপের ফাঁদে পড়ে বিপথে যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম বাড়ছে নারীপাচার, দেশে বাড়ছে অশ্লীলতা ও পর্ণোগ্রাফির প্রচার কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করেই একটি মহল এসব অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে এসব অপসংস্কৃতি নির্মূলে দ্বীন ইসলামই একমাত্র সমাধান
০৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ভীনদেশী অ্যাপের ফাঁদে পড়ে বিপথে যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম বাড়ছে নারীপাচার, দেশে বাড়ছে অশ্লীলতা ও পর্ণোগ্রাফির প্রচার কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করেই একটি মহল এসব অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে এসব অপসংস্কৃতি নির্মূলে দ্বীন ইসলামই একমাত্র সমাধান
০৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ : কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা ও ক্বিয়ামতের তথ্য
০৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের বাজার ৪০ ট্রিলিয়ন ডলার। সুবিশাল এই বাজারে প্রবেশে অনেকটাই ব্যর্থ বাংলাদেশ। মান নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নত পণ্য ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশও এই সুবিশাল বাজার ধরতে পারে
০২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গ: শিশুদের জন্য ইন্টারনেট নিরাপদ করতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল গাইড লাইন তৈরি করছে সরকার নিয়ন্ত্রনহীন ইন্টারনেট জগতে প্রবেশ করে অশ্লীলতা, হিংস্রতা ও অপসংস্কৃতিতে লিপ্ত হচ্ছে শিশু কিশোররা
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নারীরা এখন প্রকাশ্যে সিগারেট থেকে সব ধরণের মাদক সেবন ও বিকি-কিনিতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে। রক্ষা পেতে নারীদের জন্য সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার বিকল্প নেই
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বাংলাদেশের শিক্ষার মান ক্রমশই নিম্নমুখী। সার্টিফিকেট ও মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রতে পরিণত হচ্ছে শিক্ষা। কর্মমূখী ও বাস্তবিক শিক্ষার অভাবে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠছে না বাংলাদেশে। সরকারের উচিত, এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘মানুষ বাড়ে কিন্তু জমি বাড়ে না’- এ ধারণা মহাভুল। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতে বাংলাদেশের জমি বাড়ছে। বাংলাদেশের পাশে জেগে উঠছে আরেক বাংলাদেশ।
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গঃ সম্মানিতা হুর, গেলমানের আলোচনায় কুণ্ঠা। তার বিপরীতে অশ্লীল শব্দ আওড়াতে স্বতঃস্ফূর্ততা
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দেশের ৮২ শতাংশ উচ্চ মেধাবী তরুণ উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দিয়ে আর ফিরছে না। পাশাপাশি বিদেশে পড়াশোনার নামে অর্থও দেদারছে পাচার হচ্ছে। বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রী এনে দেশের জন্য যারা কাজ করতে চান তাদের জন্য নেই কোনো সুযোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা।
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)