তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (১)
, ১৮ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২১ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ০৪ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বওল শরীফ:
نَـحْمَدُهٗ وَنُصَلِّىْ وَنُسَلِّـمُ عَلـٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ وَعَلـٰى وَالِدَىْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلـٰى حَضْرَتْ اُمَّهَاتِ الْـمُؤْمِنِيْنَ عَلَيْهِنَّ السَّلَامُ وَعَلـٰى حَضْرَتْ اَهْلِ بَيْتِهِ الْكَرِيْمِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ. اَمَّا بَعْدُ
যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمٰؤُا
“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাদের মধ্যে যাঁরা আলিম উনারাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন। ” (পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ: ২৮)
তাহলে এখানে দেখা যাচ্ছে, যাঁদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার ভীতি রয়েছেন, মহান আল্লাহ পাক উনাকে যাঁরা ভয় করেন, উনারাই হচ্ছেন আলিম। আর যাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার ভীতি নেই, মহান আল্লাহ পাক উনাকে যারা ভয় করে না, এরা কখনই আলিমের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা যতই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ শিক্ষা করুক না কেন, এরা ওলামায়ে সূ’, দুনিয়াদার আলিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আর সেটাই ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যিনি বিশিষ্ট তাবিয়ী ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত্ব ত্বরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
اِنَّمَا الْفَقِيْهُ اَلزَّاهِدُ فِى الدُّنْيَا اَلرَّاغِبُ فِى الْاٰخِرَةِ اَلْبَصِيْرُ بِذَنْۢبِهٖ اَلْـمُدَاوِمُ عَلٰى عِبَادَةِ رَبِّهٖ اَلْوَرِعُ اَلْكَافُّ عَنْ اَعْرَاضِ الْـمُسْلِمِيْنَ اَلْعَفِيْفُ عَنْ اَمْوَالِـهِمْ اَلنَّاصِحُ لِجَمَاعَتِهِمْ
“ফক্বীহ্-আলিম হচ্ছেন ঐ ব্যক্তি, যিনি (১) দুনিয়া থেকে বিরাগ, (২) পরকালের দিকে রুজু, (৩) গুনাহ্রে ব্যাপারে সতর্ক, (৪) সবসময়ই মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দিগীতে মশগুল, (৫) পরহেযগার, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক অনুসরণ করেন, (৬) মুসলমান উনাদের ইয্যত-সম্মান নষ্ট করেন না, (৭) মুসলমান উনাদের মাল-সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং (৮) মুসলমান উনাদেরকে সব সময় নছীহত করেন। ” (কুওওয়াতুল কুলূব ১/২৬৩, রূহুল মা‘আনী ৬/৪৬, হাশিয়াতুত ত্বীবী ৭/৪০০, ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন ১/৬৫, ক্বওয়াইদুল ফিক্বহ্ ১/১৭১, আত তা’রীফাতুল ফিক্বহিয়্যাহ্ ১/১৬৭, কাশফুল আসরার ১/২৬, খুতবাতুল কিতাবিল মুআওওয়াল ১/১৫৬, রদ্দুল মুহ্তার ১/৮৭, আদ দুররুল মুখতার ১/৩৮, মাওসূআতু কাশশাফি ইস্তি¡লাহাতিল ফুনূন ওয়াল উলূম ১/৪১ ইত্যাদি)
এক কথায় এর অর্থ হচ্ছে- আলিম তিনিই হবেন, যিনি (১) গাইরুল্লাহ থেকে বেঁচে সব সময় মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মুহব্বতে গরক্ব থাকবেন, (২) উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আদেশ-নির্দেশ মুবারক উনাদের প্রতি সব সময় দৃঢ় থাকবেন, (৩) কোনো অবস্থাতেই মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের আদেশ-নির্দেশ মুবারক থেকে বিচ্যূত হবেন না, (৪) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক উনার উপর ইস্তিক্বামত থাকবেন, (৫) কখনই মুসলমান উনাদের ইয্যত-সম্মান নষ্ট করবেন না, (৬) কখনই মুসলমান উনাদের মাল-সম্পদ, ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি ইত্যাদির প্রতি উনার কোনো দৃষ্টি থাকবে না, লোভ থাকবে না, মোহ থাকবে না, (৭) তিনি সব সময় মুসলমান উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের দিকে ধাবিত করার জন্য নছীহতে মশগূল থাকবেন। তিনি হচ্ছেন উলামায়ে হক্ব উনাদের অন্তর্ভুক্ত।
এর খিলাফ যারা রয়েছে, তারা ওলামায়ে সূ’। অর্থাৎ ওলামায়ে সূ’দের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- (১) সে সব সময় দুনিয়াতে মশগূল থাকবে, (২) পরকালের কথা সে ভুলেও স্মরণ করবে না, (৩) সে গুনাহ্কে কখনও পরওয়া করবে না, (৪) ইবাদত-বন্দিগীতে সে গাফিল থাকবে, (৫) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক পালন করার ব্যাপারে কোনো গুরুত্বই দিবে না, (৬) সব সময় ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি, পরের সম্পদ আত্মসাতের জন্য প্রতারণা করে যেভাবেই হোক সেটা হাছিলের জন্য কোশেশ করবে এবং (৭) সে মুসলমান উনাদেরকে সৎ মত, সৎ পথে ধাবিত করার জন্য নছীহত করবে না; বরং তারা মুসলমান উনাদেরকে গোমরাহী ও কুফরী-শিরকীর দিকে ধাবিত করবে। এটা হচ্ছে ওলামায়ে সূ’দের খাছলত বা বৈশিষ্ট।
বর্তমান যামানায় যারা ওলামায়ে সূ’ রয়েছে তাদের মধ্যে সেটাই দেখা যাচ্ছে। তারা দাবি করে- তারা মাদরাসার উস্তাদ-শিক্ষক, মুহতামিম, মুফতী, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ, মুফাসসিরে কুরআন, ছূফী-দরবেশ, শায়েখ, পীর ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা বলে, তারা অনেক শিক্ষা গ্রহণ করেছে, শিক্ষা দিচ্ছে। এদের অনেক ছাত্র রয়েছে, এদের শাগরিদ রয়েছে, এদের মুরীদ রয়েছে, অনেক কিছু রয়েছে, এরা অনেক কিছু বুঝে। ইবলীস যেমন বলেছিলো, এরাও সেটা বলে। তারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা’ শরীফ, সম্মানিত কিয়াস শরীফ উনাদের কোনো গুরুত্বই দেয় না। তারা সর্বপ্রকার বিদআত-বেশরা, কুফরী-শিরকী ও হারাম-নাজায়িয কার্যকলাপ করে যাচ্ছে এবং সেগুলোকে হালাল ফতওয়া দিয়ে যাচ্ছে। তারা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং তাদেরকে সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশি বেশি মূর্তি তৈরী করতে বলেছে এবং বেশি বেশি পূজা করতে বলেছে। বলেছে- মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, ইহুদী, মজূসী, মুশরিক পরস্পর ভাই ভাই। আরো বলেছে- তারাই মুশরিকদের মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিবে, যাতে মুশরিকরা মনের সুখে পূজা করতে পারে, তাদের গীতা পাঠ করেছে, সম্প্রীতি বজায় রাখতে বলেছে। শুধু তাই নয়; এই সকল কুফরী কাজ করে তারা আনন্দ প্রকাশ করেছে এবং শুকুরগুজারী করেছে। সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও কাট্টা মুরতাদ হয়েছে। এই সকল ওলামায়ে সূ’রাই দ্বীন ইসলাম উনার নামে গণতন্ত্র করে ও গণতন্ত্রকে জায়েয মনে করে, বেপর্দা হয় এবং বলে এতো পর্দা প্রয়োজন নেই, ছবি তোলে এবং বলে বর্তমানে ছবি প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া তারা সম্প্রীতির দোহাই দিয়ে হিন্দু-মুশরিক, খৃষ্টান, ইহুদী, বৌদ্ধসহ সকল বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করে। এরাও সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী প্রত্যেকেই কাট্টা কাফির ও কাট্টা মুরতাদ হয়েছে। এবং তাদেরকে যারা অনুসরণ করছে এবং করবে, তাদের প্রতিও একই হুকুম বর্তাবে এবং যারা তাদের কুফরী সম্পর্কে একমত পোষণ করবে তাদের প্রতিও একই হুকুম বর্তাবে। এদের ইমামতিতে নামায পড়া যায়েজ নেই। কারণ, এরা মুরতাদ ও কাফির হয়ে গেছে। কেউ যদি তাদের পিছনে নামায পড়ে, তাহলে তার নামায কখনোই হবে না। তাকে নামায অবশ্যই দোহরায়ে পড়তে হবে। অন্যথায় সে শুধুমাত্র নামায তরকের গুনাহে গুনাহগারই হবে না; বরং সেও মুরতাদ ও কাফির হবে।
(অপেক্ষায় থাকুন। )
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৬)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা পালন করা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই শান্তি ও পবিত্রতা হাছিলের কারণ
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (২২)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ‘পহেলা এপ্রিল’ বা ‘এপ্রিল ফুল’ হারাম। ‘এপ্রিল ফুল’ এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (১)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৭৬)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৫)
২৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
‘গরুর গোস্তে রোগ আছে’ এই সংক্রান্ত বাতিল হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব
২৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
একদিকে রুজু থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে দ্বীনি ইলম শিক্ষা করতে হবে, তাহলেই কামিয়াবী
২৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
২৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)